এম. এ করিম মিষ্টার, নীলফামারী : আমাদের সমাজ বড় বিচিত্র। কারো আছে ভুড়ি ভুড়ি আবার কারো নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। ‘এখানে মানুষে মানুষে বড় ভেদাভেদ পরতে পরতে জমা বেদনার খেদ।’ সমাজে কেউ কেউ এত সম্পদের মালিক যে তারা ৭ পুরুষ বসে খেতে পারবে। আর এমন মানুষের অভাব সৈয়দপুরের বাণিজ্যিক শহরেও কম নেই। কিন্ত সিদ্দিক নামের শতবর্ষী এই মানুষটির বেঁচে থাকার জন্য নেই এক ইঞ্চি মাথা গোঁজার ঠাঁই কিংবা নেই জীবিকার কোন অবলম্বন।
ভারতের কলকাতার বড় বাজারে জন্ম এই লোকটির। ১৯৪৫ সালের বিশ্ব যুদ্ধের কথা এখনও মনে আছে তার। সুখ আর স্বাচ্ছন্দের স্বপ্ন ও আশা নিয়ে দেশ বিভাগের সময় চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশে। এখানে এসেও কোন কর্ম না জোটায় শুরু করেন কায়দা, আমপারাসহ বিভিন্ন ইসলামি বই বিক্রি। মনে করেছিলেন, এভাবে বই বিক্রি করে যা আয় হবে তাতে সংসারও চলবে। এভাবে বেশ কয়েক বছর চলার পর তার চাকরী হয় খুলনার খালিশপুর জুট মিলে। সেখানে ২০ বছর চাকরী করেন। সংসারে তার ২ মেয়ে, কোন পুত্র সন্তান নেই যে বড় হয়ে সংসারের বোঝা ঘাড়ে নেবে।
তার কপাল পুড়ে। ৭১’র স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার চাকরী চলে যায়। অভাব এসে আবারও ভর করে সংসারে। তিনি চলে আসেন সৈয়দপুরে এবং জীবিকার জন্য আবার বই বিক্রি শুরু করেন। শহরের রাস্তায় রাস্তায় অলিগলি বইয়ের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ান শতবর্ষী সিদ্দিক। তার পুঁজির পরিমাণ মাত্র দেড় হাজার টাকা। মাঝে-মধ্যে বই কেনার মত টাকাও থাকে না তার। তখন নিউজ কেবিনের মালিক খালেদ নিয়াজী নান্না তাকে বাকীতে বই দিয়ে সাহায্য করেন বলে তিনি জানান। এই বই বিক্রি করে সামান্য আয়ে তার সংসার চলে। তার দুই মেয়ে আগরবাতি তৈরির কাজ করে বাপের অসহায়ত্ব ঘোচানোর চেষ্টা করে। এছাড়া সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিই তিনি। এত অসহায় হয়েও কারো কাছে কোনোদিন জানাননি এমনকি বেছে নেননি ভিক্ষাবৃত্তি। শতবর্ষী এই মানুষ পরিশ্রম করেই টেনে চলেছেন জীবনের বোঝা।
তার ঘরে রয়েছে দুইটি মেয়ে। একজনের বিয়ে হলেও স্বামী তাকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বর্তমানে মেয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে বাবার সংসারে। ছোট মেয়ের বয়স ৩০ বছর। যৌতুকের কারণে সেই মেয়ে বিয়েও দিতে পারেননি। ৮০ বছরের স্ত্রী রোগে- শোকে কাতর। ফলে সংসারের বোঝা টানতে গিয়ে এখনও মাথা গোঁজার ঠাঁই করে করে নিতে পারেননি।
