এম লুৎফর রহমান নরসিংদী প্রতিনিধি : জেলার পলাশ উপজেলায় কৃষকলীগ নেতার মাধ্যমে এলাকার কৃষকদের কৃষি জমি নষ্ট করে জোড়পূর্বক ইটভাটা তৈরীর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী কৃষক লীগের পলাশ উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মোঃ ওমর ফারুক রোমানের নেতৃত্বে একই উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের কৃষি সমৃদ্ধ এলাকা দক্ষিন দেওড়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ এফটিসি নামে একটি ইটাভাটা চলে আসছে। এই ইটভাটা তৈরীর সময় এলাকার কৃষকদের বিভিন্ন ভয়ভীতি আর মামলা হামলার ভয় দেখিয়ে জমি সংগ্রহ করে এই কৃষকলীগ নেতা। যার ফলে এলাকায় এখন কৃষি ফসলের উৎপাদন আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন এলাকার কৃষক। শুধু তাই নয় এলাকার পরিবেশ এক পর্যায়ে জনসাধারননের বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাওয়ার পথে। এই ইটভাটার সাথে এলাকার কৃষকদের চুক্তিপত্রের মেয়াদ আগামী ২০১৪ সালে শেষ হয়ে যাবে বলে জান যায়। কৃষকদের চুক্তি শেষ হয়ে গেলে এলাকায় আর কোন ইটভাটা চলতে দেওয়া হবেনা বলে জানালেন এলাকাবাসী। স¤প্রতি এই ইটভাটার মালিকের সাথে চাঁদার টাকাকে কেন্দ্র করে কৃষকলীগের এই নেতার রোষানলে পরে এফটিসি নামের এই ইটভাটার মালিক। যারফলে কৃষকলীগের এই নেতার মনে এলাকার কৃষকদের পিষে মারার জন্য মনোবাসনা জাগে। এরই বহিঃপ্রকাশ হিসাবে একই এলাকায় আরেকটি ইটভাটা তৈরীর জন্য ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহনের কাজ শুরু হয়েছে। জানা যায়, যে জমিগুলোতে ইটভাটা তৈরীর চেষ্টা করা হচ্ছে তাতে দর্ঘীদিন যাবৎ ধান, গম, শিম, লাউ, গোল আলু, কলা সহ উৎকৃষ্ট মানের ফসল উৎপাদন হয়ে আসছে। এলাকার কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, কৃষকলীগ নেতা রোমান আমাদের আবাদি জমি তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জোড়পূর্বক জমি গুলোদখলে নিয়ে যায়। যে সকল কৃষক ইটভাটায় জমি দিতে নারাজ তাদেরকে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মারধোর, অপহারণ, গুম এবং মামলা দিয়ে পুলিশের মাধ্যমে হয়রানী করা হবে বলে হুমকি দিয়ে আসছে। এইভাবে জোড় করে যাদের জমি দখলে নিয়েছে তারা হলেন, চাঁনু পাঠান ২৬ শতাংশ, হেলাল পাঠান ৫০ শতাংশ, সাত্তার পাঠান ৫০ শতাংশ, খোরশেদ পাঠান ৬০শতাংশ, জামাল পাঠান ২০ শতাংশ, বাচ্চু পাঠান ২৫ শতাংশ মিয়া পাঠান ২৫ শতাংশ, মাসুদ পাঠান ৭০ শতাংশ, ইসলাম মিয়ার ২৬ শতাংশ এবং জহিরুল হকের ৩৩ শতাংশ জমি। এছাড়া যে সকল কৃষক ইটভাটায় জমি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে জমিতে লাল কাপড় বেধে দিয়েছেন তারা হলেন মামুন, বোরহান সহ নাম প্রকাশে অর্ধশতাদিক কৃষক। এলাকার কৃষক মোঃ রহমত আলী বলেন, এই এলাকায় একটি ইটভাটা রয়েছে যার ফলে এখন এই এলাকায় কৃষি ফসল সহ গাছের ফল ফলাদি আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। শুধু তাইনয় এই ইটভাটার কালো ধোয়ার কারণে এলাকার মানুষ রোগাগ্রস্থ হয়ে পরেছে। আমি ইটভাটা তৈরীর বিপক্ষে কেননা এটি তৈরী হলে এলাকায় আমরা বাস করতে পারবনা। একই এলাকার জায়গা জমিহীন হারিছুল হক প্রধান বলেন, আমার বাড়িটা ছাড়া আর কিছু নেই তারপরও আমি নতুন করে ইটভাটা তৈরীর বিপক্ষে কেননা এখন একটি ইটভাটা রয়েছে এরফলে এলাকায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পরেছে এরপর আরও একটি ইটভাটা তৈরী হলে এই বাড়িঘর ফেলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় গিয়ে থাকব? আমি যদিও প্রকাশ্যে এর প্রতিবাদ করতে পারিনা কেননা প্রতিবাদ করলে পরের দিন আর আমাকে এই এলাকায় পাওয়া যাবেনা। এই এলাকার আরেক কৃষক, সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী এবং তালতলী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আঃ কাদির পাঠান বলেন, এই এলাকায় আগে প্রচুর ধান, গম সহ হরেক কমের শাকসবজি জন্মাত। কিন্তু এখানে একটি ইটভাটা তৈরীর ফলে এলাকার কৃষকরা আরো দিগুন পরিমানে সার কীটনাশক ব্যবহার করেও আজ এখানে আশানুরুপ ফসল উৎপাদন করতে পারছেনা। এরমধ্যে এই কৃষকলীগ নেতার মাধ্যমে আরও একটি নতুন ইটভাটা তৈরী হলে এই এলাকায় ফসল বলতে আর হবেনা শুধু তাইনয় এই এলকায় বসবাসের অযোগ্য হবে পরবে। এই নতুন করে ইটভাটা তৈরীর বিপক্ষে এলাকায় ছোট ছোট ক্ষোভ এখন বিক্ষোভের প্রকাশ পাওয়ার আশংকা তৈরী হচ্ছে। এব্যপারে এলাকার ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, এই এলাকায় একটি ইটভাটা আছে আরেকটি যদি সরকারের অনুমতির মাধ্যমে তৈরী হয় তাহলে আমাদের কি করার আছে। এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান বজলুল করিম পাঠান বলেন, এটি দেখার বিষয় প্রশাসনের। প্রশাসন যদি অনুমতি দেয় তাহলে আমরা কি করতে পারি? পলাশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ইসহাক বলেন, এটভাটা তৈরীর যে নিয়ম রয়েছে তা পুরোপুরি মানা হলে তেমন ক্ষতি হয়না আর একই এলাকায় একাদিক ইটভাটা তৈরী হলে কিছু ক্ষতিতো হবেই। এবিষয়ে জেলা প্রশাসক অফিস সূত্রে জানা যায়, এই এলাকায় ইটভাটা তৈরীর জন্য কোন প্রকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই এলাকায় নতুন ইটভাটা তৈরীর বিপক্ষে এলাকাবাসী প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছে।