কেশবপুর(যশোর) প্রতিনিধি : কেশবপুর পৌরএলাকার ভূমিহীন প্রতিবন্ধী দম্পত্তি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কৈননীয়ার সহযোগিতায় এ ধরার মাঝে এক খণ্ড জমি পেলেও সেখানে ঘর নির্মান করতে পারবে কি না তা নিয়ে পরিবারটি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি তাদের একমাত্র মেধাবী সন্তান বৈশাখী আক্তার সুমির একজন আদর্শ শিক্ষিকা হবার স্বাপ্ন পূরনেও রয়েছে হতাশা। সামাজের বৃত্তবানদের দিকে চেয়ে থেকে থেকে জীবনের অর্ধেক সময় পার করে দিলেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রাস্তার পাশে একটি টংঘরে অর্ধহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে পরিবারটি।
জানাগেছে, দেশ স্বাধীন হাবার পর পাটকেলঘাটা থানার শার্শা গ্রাম থেকে বিবিজান বেগম তার একমাত্র বাক ও শারিরীক প্রতিবন্ধী ছেলে নরিম গাজিকে নিয়ে ভিক্ষা করতে করতে কেশবপুরে আসেন। এ পৃথিবীতে তাদের মাথা গোজার ঠায় না থাকায় যেখানে সেখানে রাস্তার পাশে তারা রাত্রি যাপন করত। ভিক্ষাবৃত্তির মধ্যে দিয়ে এখানেই পরিচায় ঘটে পাইকগাছা থেকে আশা শারিরীক ও বাক প্রতিবন্ধী শাহানারা খাতুনের সাথে। এক পর্যায়ে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করতে থাকে। তাদের এ দুঃখ দূর্দশার কথা বিবেচনা করে বাজিতপুর গ্রামের সাবেক কাউন্সিলর মনজুরুল আলম কেশবপুর-ফতেপুর সড়কের বুড়িভদ্রা নদীর তীরে তার পৈত্রিক জমিতে থাকার জন্য পলিথিন দিয়ে ছোট্ট একটি কুড়েঘর নির্মান করে দেন। ১ যুগ আগে এই কুড়ে ঘরেই জন্ম হয় বৈশাখী আক্তার সুমির। সুমি যখন বাজিতপুর রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণির ছাত্রী সে সময় পরিচয় ঘটে কৈননীয়া জেন্ডার ইক্যুইটি এণ্ড ফিমেল এম্পাওয়ারমেণ্ট প্রোজেক্টের ফিল্ড অফিসার মি. নয়ন দাসের সাথে।
মি. নয়ন দাস জানান, সুমির পিতা-মাতা কথা বলতে না পারলেও তিনি আকার ইঙ্গিতে তাদের দুঃখের কাহিনী বুঝতে সক্ষম হন। সুমি যখন ২য় শ্রেণিতে পড়ে তখন তার মা শাহানারা বেগমকে কৈননীয়ার বাজিতপুর গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সদস্য নিযুক্ত করে সেখানে তাদের দুঃখ দূর্দশার কথা তুলে ধরা হয়। ২০০৯ সালে কৈননীয়ার উদ্যোগে ওই স্থানে মাটির তৈরী টালির ছাউনির একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়। সুমি লেখা পড়ায় বরাবরই ভাল ফলাফল করায় ২০১০ সালে কৈননীয়া জেণ্ডার ইক্যুইটি এণ্ড ফিমেল এম্পাওয়ারমেন্ট প্রোজেক্টের মূল্যায়নকারী রেহান উদ্দীন রাজু কেশবপুরে আসলে ওই প্রতিবন্ধী পরিবারের দূর্বিসহ জীবন যাপনের কথা তার কাছে তুলে ধরা হয়। তিনি সুমির লেখাপড়ার জন্য কৈননীয়ার পক্ষ থেকে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে সহযোগিতার ব্যবস্থা করেন। সুমি যখন ৫ম শ্রেণির ছাত্রি সে সময় এ সাহায্যও বন্ধ হয়ে যায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সুমির ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস রোল ছিল ১। তার বড় ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শেষ করে একজন আদর্শ শিক্ষিকা হবে। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া সুমির শেষ ইচ্ছা পূরন হবে কি? শত অভাব অনাটনের মাঝেও সুমি তার লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। সে বর্তমান কেশবপুর পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
বুধবার সরেজমিন সুমির বসত ভিটায় গিয়ে দেখা গেছে, ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘরের মধ্যে সুমি তার মা-বাবা ও দাদীকে নিয়ে বসবাস করছে। শীতবস্ত্র বলতে তাদের কিছুই নেই। এ সময় সুমি জানান, আমরা ভূমিহীন। কৈননীয়া আমার নামে ৩ শতক জমি বাড়ি করার জন্য কিনে দিয়েছে। কিন্তু আমরা ভিক্ষাবৃত্তি করে খাই। ওই জমিতে ঘর করার সামর্থ আমার পিতা-মাতার নেই। সুমি লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য সমাজের বৃত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছে।
এ ব্যাপারে কৈননীয়ার ফিল্ড অফিসার পুলিন সি ভাবুক জানান, রেহান উদ্দীন রাজু ও কৈননীয়া ৯৯ হাজার টাকা ু দিয়ে বাজিতপুর গ্রামে সুমির নামে ৩ শতক জমি কিনে দেয়া হয়েছে। ১ ডিসেম্বর যার দলিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে তার পিতার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। সুমির লেখাপড়া নিশ্চিতসহ বাসস্থান নির্মানের ব্যাপারে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আব্দুলাহ আল মামুন বলেন, প্রতিবন্ধীদের অপেক্ষামান তালিকায় সুমির মা-বাবার নাম রয়েছে। সুযোগ হলে তাদেরকে তালিকাভূক্ত করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সায়েদ মোঃ মনজুর আলম বলেন, শুনেছি সুমি খুব ভাল ছাত্রী। সে যাতে বিনা খরচে পড়াশুনা করতে পারে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া ওই ৩ শতক জমির ওপর ঘর করার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হবে।
