ads

মঙ্গলবার , ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

৪ ডিসেম্বর দেবিদ্বার মুক্তদিবস

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
ডিসেম্বর ৩, ২০১৩ ৯:১১ অপরাহ্ণ

MOKTIJODHA CHOTHOR-03.12

আজ দেবিদ্বার মুক্তদিবস।

মোঃ আমির হোসেন আমু,দেবিদ্বার : ১৯৭১সালের এই দিনে দেবিদ্বার পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করার লক্ষ্যে দেবিদ্বার উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, দেবিদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাব ও দৃষ্টান্ত ফাউন্ডেশন’র যৌথ উদ্যোগে নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। সকাল ৯টায় সর্বস্তরের জনতার উপস্থিতিতে উপজেলা কমপ্লেক্স থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের স্মরনে দেবিদ্বার নিউমার্কেট মুক্তিযোদ্ধা চত্তর ও গণকবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ, উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘মুক্তিযুদ্ধে দেবিদ্বার শীর্ষক এক আলোচনা সভা করা হয়েছে। ‘জীবন বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন, আপনার এক ব্যাগ রক্ত বাঁচাতে পারে একজন মূমূর্ষ রোগী’ এ আহবান জানিয়ে ‘দৃষ্টান্ত ফাউন্ডেশন’র উদ্যোগে সাংবাদিক সাইফ উদ্দিন রণীর ৪৯তম রক্তদানের মধ্য দিয়ে রক্তদান কর্মসূচী ও রক্তের গ্রæপ নির্ণয় কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও শিল্পকলা একাডেমী ও আবিৃত্তি বিকাশের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
১৯৭১ সলের রক্তে ঝরা দিনগুলোতে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমনে হানাদার মুক্ত হয়েছিল কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চল। তারই ধারাবাহিকতায় দেবিদ্বার এলাকা হানাদার মুক্ত হয়েছিল ৪ডিসেম্বর। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানে ওইদিন হানাদারদের বিরুদ্ধে আক্রমন পরিচালনা করে। ৩ডিসেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী ‘কুমিল্লা-সিলেট’ মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ সেতুটি মাইন বিষ্ফোরনে উড়িয়ে দেয়। মিত্রবাহিনীর ২৩ মাউন্ড ডিভিশনের মেজর জেনারেল আর.ডি বিহারের নেতৃত্বে বৃহত্তর কুমিল্লায় এই অভিযান পরিচালিত হয়। মিত্রবাহিনীর একটি ট্যাংক বহর বুড়িচং ব্রাক্ষনপাড়া হয়ে দেবীদ্বারে আসে। হানাদাররা ওই রাতেই দেবীদ্বার ছেড়ে কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসে পালিয়ে যায়। ধীরে ধীরে মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন গ্রæপ দেবিদ্বার সদরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এরই মধ্যে মিত্রবাহিনীর ট্যাংক বহরটি দেবিদ্বার থেকে চান্দিনা রোডে ঢাকা অভিমুখে যাওয়ার সময় মোহনপুর এলাকায় ভুল বোঝাবুঝির কারনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে গুলি বিনীময় হলে মিত্রবাহিনীর ৬ সেনা সদস্য নিহত হয়। এই দিনে দেবিদ্বারে উল্লাসিত জনতা ও মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন বাংলার পতাকা নিয়ে বিজয় উল্লাসে ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানে মেতে উঠে। দুপুর পর্যন্ত ওইদিন হাজার হাজার জনতা বিজয় উল্লাসে উপজেলা সদর প্রকম্পিত করে তোলে।
তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের প্রধান সেনা ছাউনি কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনম্যান্ট সন্নিকটে থাকায় এঅঞ্চলের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। স্বাধীনতা ঘোষনার মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যেই অর্থাৎ ৩১মার্চ রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরের বাইরে শত্রæ সেনাদের সাথে সন্মূখ যুদ্ধে প্রাণ বাজি রেখে বিজয় ছিনিয়ে আনার গৌরবময় অধ্যায় প্রথম থেকেই দেবিদ্বার দানা বাঁধতে শুরু করে।
ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার কসবা এলাকায় নারকীয় এক হত্যাজজ্ঞ চালিয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সু-সজ্জিত ১৫ সদস্যের একটি পাক সেনার দল, পায়ে হেঁটে ‘কুমিল্লা-সিলেট’ মহাসড়ক হয়ে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের প্রধান সেনা ছাউনি বর্তমান কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসের দিকে যাত্রা শুরু করে। ৩১ মার্চ কাক ডাকা ভোরে ‘কুমিল্লা-সিলেট’ মহাসড়কের দেবিদ্বার উপজেলার ভিংলাবাড়ি নামক স্থানে ওই হায়ানার দলটি জনতা কর্তৃক প্রথম অবরুদ্ধ হয়। পাক সেনারা ধাওয়া খেয়ে দেবিদ্বার পৌর এলাকার চাপানগর গ্রামে ঢুকে এক গৃহবধূর শ্লীলতা হানীর চেষ্টাকালে আবুল কাসেম নামে এক যুবক ইট দিয়ে আঘাত করলে পাক সেনাদের গুলিতে তিনি প্রথম শহীদ হন। বিক্ষুব্ধ জনতা  দেবিদ্বার থানার অস্ত্রাগার লুন্ঠন করে ওই অস্ত্র এবং বঙ্গজ হাতিয়ার লাঠি, দা, সাবল এমনকি মরিচের গুড়া নামক অস্ত্রটিও শত্রæ নিধনে ব্যবহার করেছিল সেদিন। শত্রæসেনারা বারেরা কোড়েরপাড় পৌছার পর হালচাষরত কৃষক সৈয়দ আলী শত্রæসেনাদের দেখে হাতের পাজুন দিয়ে পাক সেনাদের পেটাতে থাকে, পাকসেনাদের গুলিতে সহকর্মী মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখে আব্দুল মজিদ ঝাটা নিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুকে বরন করে হায়ানাদের উপর ঝাপিয়ে পড়েন। তিনিও গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে শহীদ হন। এমনি করে ভিংলাবাড়ি থেকে জাফরগঞ্জ শ্রীপুকুরপাড় জামে মসজিদ পর্যন্ত পনের কিলোমিটার পথে হাজার হাজার নিরস্ত্র ও সশস্ত্র বাঙ্গালীর সাথে পাক হায়ানাদের দিনব্যাপী যুদ্ধে পথিমধ্যে আট পাকনোকে হত্যাপূর্বক মাটিতে পুতে ফেলে এবং জাফরগঞ্জ শ্রীপুকুরপাড় জামে মসজিদটিকে ব্যাঙ্কার বানিয়ে আশ্রয় নেয়া অবশিষ্ট সাত জনকে হত্যাপূর্বক বস্তা বন্দি করে গোমতী নদীতে ভাসিয়ে দেয়েছিল। পরবর্তীতে প্রখ্যাত রাজাকার আফসু রাজাকার এবং আলী আহাম্মদ রাজাকারের নেতৃত্বে এ এলাকাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছিল। ‘ভিংলাবাড়ি- জাফরগঞ্জ শ্রীপুকুরপাড় জামে মসজিদ যুদ্ধ’ খ্যাত ওই যুদ্ধে আবুল কাসেম, সৈয়দ আলী, আব্দুল মজিদ, তব্দল ড্রাইভার, মমতাজ বেগম, সফর আলী, নায়েব আলী, সাদত আলী, লালমিয়া, ঝারু মিয়া, আব্দুল ড্রাইভার, ফরিদমিয়া, আব্দুর রহিমসহ ৩৩বাঙ্গালী শহীদ হয়েছিলেন। স্বাধীনতা ঘোষনার মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে রাজধানী, বিভাগীয় ও জেলা শহরের বাইরে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সু-সজ্জিত পাক বাহিনীর একটি পুরো দলকে পরাস্ত করে নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের বিজয় ছিনিয়ে আনার গৌরব সম্ভবতঃ এটাই বাংলাদেশে প্রথম।
এছাড়াও মুক্তি যুদ্ধে দেবিদ্বার বাসীর অবদান ছিল প্রশংসনীয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টামন্ডুলীর বর্তমানে একমাত্র জিবীত সদস্য ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ, ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়ন কর্তৃক গঠিত ‘বিশেষ গেরিলাবাহিনী’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কমরেড আব্দুল হাফেজ, পালাটোনা ক্যাম্প প্রধান কিংবদন্তী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন সুজাত আলী, মুক্তি যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আজগর হোসেন মাষ্টার, সাবেক এমএনএ আব্দুল আজিজ খান, শহীদ নুরুল ইসলাম, শহীদ শাহজাহানসহ অসংখ্য কিংবদন্তী মুক্তিযোদ্ধার অবদান ছিল স্মরনীয়।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সেনা ছাউনি কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট দেবিদ্বারের খুব কাছে থাকার কারনে এ এলাকার মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা যেমন বেশী ছিল, তেমনি রাজাকারদের সহযোগীতায় এ অঞ্চলে নারকীয় হত্যাজজ্ঞ, লুন্ঠন, নারী নির্যাতন, অগ্নীসংযোগসহ নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে এ এলাকার মানুষ।
১৪এপ্রিল সমতট রাজ্যের রাজধানী খ্যাত এবং হিন্দু অধ্যুসিত বরকামতা গ্রামে পাক হানাদাররা হামলা চালানোর সংবাদে কমিউনিস্ট নেতা আব্দুল হাফেজের নেতৃত্বে প্রায় পাঁচ হাজার বাঙ্গালী মাত্র দুটি থ্রী-নট থ্রী রাইফেল ও লাঠি নিয়ে শত্রæসেনাদের উপরঝাপিয়ে পড়ে। রাইফেলের গুলিতে এক প্লাটুন সৈন্যেও পাঁচজন লুটিয়ে পড়লে কিংকর্তব্য বিমূঢ় পাক সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং ওই রাতে ফিরে এসে হিং¯্র হায়ানারা লুটপাট, নির্যাতনসহ অগ্নীসংযোগে পুরো গ্রামটি জ¦ালিয়ে ছারখার করে দেয়।
২৪জুন মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকার বাখরাবাদ গ্রামে পাক হায়ানাদেও এক নারকীয় হত্যাজজ্ঞে অগ্নীসংযোগ লুটপাট, নারী নির্যাতনসহ ২৪০ নিরীহ বাঙ্গালীকে নির্মমভাবে হত্যা কওে এবং ওই দিন ২১যুবককে ধরে দেবীদ্বার ক্যাম্পে আনার পথে একজন পালিয়ে গেলেও অপর ২০জনকে দেবীদ্বার সদরে পোষ্ট অফিস সংলগ্নে ধৃতদের কর্তৃক গর্ত খুড়ে চোখ বেঁধে ব্রাস ফায়াওে হত্যা কওে একজন ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলে বাকী ১৯জনকে ওই গর্তে চাপা দেয়া হয়। দেবিদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক দীর্ঘ আন্দোলনের পর গত আগষ্ট মাসে ওই বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মান করা হয়।
৬সেপ্টেম্বর রাজাকারদের সহযোগীতায় পাক হায়ানারা বারুর গ্রামে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিলে মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি দল সম্মূখ সমরে জয়নাল আবেদীন, বাচ্চুমিয়া, শহিদুল ইসলাম,আলী মিয়া, আব্দুস সালাম, সফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ হোসেনসহ ছয় মুক্তিযোদ্ধা শাদাত বরণ করেন ভাগ্যক্রমে অপর একজন বেঁেচ যান।
ভূষণা ও ধামতী গ্রামকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ ঘাটি হিসাবে চিহ্নীত করে পাক হায়ানাদের একটি বিশাল বাহিনী ২৯নভেম্বর হামলা চালায়। ধামতী গ্রামের বিখ্যাত চৌধূরী বাড়িসহ নব্বইটি বাড়ি, ভূষণা গ্রামের ষোলটি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। পাক হায়ানারা ভূষণা গ্রামের ছয় নিরিহ বাঙ্গালী ও ধামতী আলীয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সর্বজন শ্রদ্ধেয় পীর আজিমউদ্দিন সাহেবের নাতি শরিফুল্লাহ, অধ্যক্ষ হালিম হুজুরের দু’ভাগ্নে জহুর আলী ও আব্দুল বারি, সহোদর তাজুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামকে তাদের স্বজনদের সামনে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়াও পোনরা গ্রামে (নরসিংদী জেলার) মুক্তিযোদ্ধা আবুবকর, ভিড়াল্লা গ্রামের শহীদ মজিবুর রহমানের কবর পথিকের হৃদয় এখনো আলোড়িত করে।
ওই সময় ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের রাজামেহার এলাকায় মাইন বিস্ফোরনে সাত পাকসেনা নিহত হলে ওই এলাকার দু’পাশের প্রায় তিন কিলো মিটার এলাকা জ¦ালিয়ে দেয় শত্রæসেনারা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেবিদ্বার উপজেলার নলআরায় (ফতেহাবাদ গ্রামের একটি গভীর জঙ্গল) এবং ন্যাপ প্রধান এলাহাবাদ গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতে দু’টি অস্থায়ী ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ওখান থেকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে চলে যেত। ওই দু’টি অস্থায়ী ক্যাম্পের মধ্যে নলআরায় একটি স্মৃতিসৌধ নির্মানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!