ads

সোমবার , ২ ডিসেম্বর ২০১৩ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

এবার পিঁয়াজ-রসুনের আবাদ বাড়বে উত্তরাঞ্চলে

রফিকুল ইসলাম আধার , সম্পাদক
ডিসেম্বর ২, ২০১৩ ২:০১ অপরাহ্ণ

Onionপাবনা প্রতিনিধি : উত্তরাঞ্চলে এবার পিয়াজ-রসুনের আবাদ বাড়বে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে এবং মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সাথে কথা বলে ওই তথ্য জানা গেছে। মসলা জাতীয় ওইসব ফসলের বাজারে ব্যাপক চাহিদা এবং ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা ঝুঁকেছে বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের অভিমত। এতে হ্রাস পাবে গম, আলু ও ডাল-এর আবাদ।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশী জমিতে পিঁয়াজের আবাদ হচ্ছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার পিঁয়াজ আবাদ হচ্ছে প্রায় এক পক্ষকাল আগে। সারাদেশে এখন চলছে রসুন ও পিঁয়াজ আবাদের কাজ। প্রতি কেজি পিঁয়াজ বীজ ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রসুন রোপন চলছে। রসুন রোপন পদ্ধতি হচ্ছে, রসুনের কোয়া আলাদা করে দেড় ইঞ্চি পর পর মাটিতে পূঁতে দেয়া। পাবনা, বগুড়া, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের বিস্তীর্ন চলনবিলের ১৪টি উপজেলার কৃষকেরা বিনাচাষে রসুন আবাদ করছে। বন্যার পানি জমি থেকে নেমে যাওয়ার পর পরই কাদামাটিতে পূঁতে দেয়া হয়েছে রসুনের কোয়া। এর পর খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে জমি। ৭  থেকে ৮ দিন পর খর (ধানের বিচালী) সরিয়ে দেয়া হয়। এভাবেই বেড়ে উঠছে রসুন গাছ। নাটোর জেলার সিংড়া বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলাতেই এবার রসুনের আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার হেক্টরে। সমগ্র জেলায় এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪ হাজার ২৪ মেট্রিক টন। পাবনা জেলার সাঁথিয়া, চাটমোহর, সুজানগর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় বিনাচাষে রসুন আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ১শ’২১ হেক্টরে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ হাজার ২শ ৮৭ মেট্রিক টন। রাজশাহী জেলায় রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৩শ’ ১৩ হেক্টর। এবার এই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর হবে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ইউনুস আলী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রসুন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৭শ’ ৬০ হেক্টর থাকলেও তা বেড়ে ৪ হাজার হেক্টরে পৌঁছুবে। সিরাজগঞ্জ জেলায়ও আবাদ বাড়বে। নওগাঁ জেলায় রসুন চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে।
সারাদেশে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৬ হাজার হেক্টরে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫০ মে.টন হিসাবে মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার মে.টন। এই আবাদ বেড়ে যথাক্রমে ৬০ হাজার হেক্টর এবং উৎপাদন ৪ লাখ ২৯ হাজার টনে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এবার পিয়াঁজের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে এমন মন্তব্য করলেন পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক। বাজার মূল্য বাড়তির দিকে থাকায় কৃষকদের পিঁয়াজ চাষে আগ্রহ। গত বছর প্রতি কেজি পিঁয়াজের বীজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২শ’ থেকে ১ হাজার ৪শ’ টাকায়। এবার পিঁয়াজ বীজের দাম প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা। পিঁয়াজ উৎপাদনের বিশেষ এলাকা হচ্ছে পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, মাগুড়া,  নওগাঁ ও রাজশাহী জেলা। সারাদেশে এবার পিঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরে। এখন পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মূলকাটা পিঁয়াজ রয়েছে মাঠে। কিছু এলাকায় পিঁয়াজ উত্তোলন শুরু হয়েছে। নতুন পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। পিঁয়াজ ফুল বিক্রি হচ্ছে ৮০টাকা কেজি দরে।
সর্বাধিক পিঁয়াজ আবাদ হবে পাবনা জেলায় ৩৮ হাজার ২শ’ ১২ হেক্টরে; উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৫ হাজার ৬শ ৯৬ মেট্রিক টন। দ্বিতীয় স্থান ফরিদপুর জেলায় ৩০ হাজার ৪শ’ ৮৯ হেক্টরে; উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা  ২ লাখ ৪৩ হাজার ৯ শ ১২ মেট্রিক টন। রাজশাহীতে ১৪ হাজার ২শ’ ৭ হেক্টর; উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১২ হাজার ৯শ ৯২ মেট্রিক টন। রাজবাড়ী জেলায় ২০ হাজার ৪শ’ ৩০ হেক্টরে; ১লাখ ৬৩ হাজার ৪ শ ৪০ মেট্রিক টন। দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ভোলায় পিঁয়াজ চাষ বাড়ছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮শ’ ৬৩ হেক্টর। কুষ্টিয়া জেলায় ৭ হাজার ৩শ’ ৯০ হেক্টরে; উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫৯ হাজার ১ শ ২০ মেট্রিক টন। ঝিনাইদহে ৬ হাজার ৭শ’ ৯৬ হেক্টর; উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে ৫৪ হাজার ৩শ ৩৮ মেট্রিক টন।  মাগুড়ায় ৪ হাজার ৬শ’ ৮২ হেক্টর; উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৭ হাজার ৪শ ৫৬ মেট্রিক টন। এছাড়াও নাটোর, নওগাঁ, মেহেরপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রংপুর, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, যশোর ও মেহেরপুর জেলায় ক্রমশই বাড়ছে পিঁয়াজের আবাদ।
প্রতি হেক্টরে ৮ মে.টন পিয়াঁজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে। এতে এবার ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে দেশে পিয়াঁজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে  মোট  ১ লাখ ৮৬ হাজার হেক্টরে। ধারণা করা হচ্ছে আবাদ বেড়ে প্রায় ২ লাখ হেক্টরে দাঁড়াবে।
দেশে এবার ধনিয়া আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৪৪ হাজার মে.টন। এই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৪৫ হাজার হেক্টরে আবাদ এবং উৎপাদন ৫০ হাজার মে.টনে দাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ধনিয়া উৎপাদনের জন্য উপযোগী মাটি হচ্ছে, ফরিদপুর, শরিয়তপুর, নাটোর, পাবনা, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, রাজশাহী,  মাগুরা, ব্রা‏হ্মণবাড়িয়া ও ঢাকা জেলা।
সর্বাধিক ধনিয়া উৎপাদন হয় ফরিদপুর জেলায় ৩ হাজার ৭শ’ ৯৫ হেক্টরে, শারিয়তপুরে ৪ হাজার ৪৭ হেক্টরে ও  ব্রা‏হ্মণবাড়িয়ায় ২ হাজার ১শ’ ৫০ হেক্টরে। মাগুড়া জেলায় ১ হাজার ৩২ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ দশমিক ১৫ মে.টন হিসাবে মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার ৩ শ মে.টন।
পিঁয়াজ বীজ বপন করে কৃষকেরা বীজতলায় চারা তৈরি করছে। পাবনা, রাজশাহী, রাজবাড়ি এবং ফরিদপুর জেলার বেশ কিছু এলাকায় চারা লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। মাঠে এখন ক্ষেতমজুরদের কর্ম ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। আমন ধান কাটার পর পরই শুরু হয়েছে পিঁয়াজ-রসুন আবাদের কাজ। পাবনার সুজানগর, সাঁথিয়া এবং রাজবাড়ীর পাংশা ও সদর উপজেলা এলাকায় ব্যাপক পিঁয়াজ আবাদের জন্য জমি চাষ করে প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব এলাকায় এবার কৃষি শ্রমিকদের মজুরিও বেশী। এসব এলাকার বিভিন্ন হাটে পিঁয়াজের চারা বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা জানালো রাসায়নিক সারের দাম কম হওয়ায় বিশেষ করে ইউরিয়া সারের দাম কম হওয়ায় কৃষকরা পিঁয়াজের জমিতে পরিমান মতো সার দিয়ে জমি প্রস্তুত করছে।
বাজারে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক সারের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। পাবনা শহরের বিশিষ্ট রাসায়নিক সার ও কৃষির উপকরণ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানালেন পিঁয়াজ এবং রসুন আবাদের জন্য প্রয়োজন হয় ইউরিয়া, মিউরেট অব পটাশ, ডিএপি এবং দস্তা সারের। প্রতি বিঘায় ১০ কেজি ইউরিয়া, ২ কেজি মিউরেট অব পটাশ, এক কেজি দস্তা ও ২ কেজি ডিএপি সার প্রয়োগ করতে হয়। এই পরিমাণ সারের মূল্য গত বছরের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। পিঁয়াজ, রসুন ও ধনিয়া আবাদে ৩ দফা সেচ দিতে হয়। বন্যর পর পরই মাটিতে ‘জো’ থাকায় কৃষকেরা প্রথমে সেচ না দিয়েই জমিতে বীজ বপন করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানান এবার দেশে পিঁয়াজ-রসুনের রেকর্ড পরিমাণ আবাদ হবে।
সুজানগর উপজেলার হাটখালি গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বললেন তিনি অন্যান্য বছর ১১ বিঘা জমিতে পিঁয়াজের আবাদ করেন। এবার তিনি অতিরিক্ত আরও ৩ বিঘাতে পিঁয়াজের আবাদ বাড়িয়েছেন এবং যে জমিতে আখ ছিল সেখানে ৫ বিঘায় রসুনের আবাদ করেছেন। উলাট গ্রামের কৃষক রমজান আলী বললেন, তার এলাকায় কৃষকরা এবার পিঁয়াজের পাশাপাশি রসুনের দিকে ঝুঁকেছে। সাঁথিয়া উপজেলার ঘুঘুদহ গ্রামের কৃষক ওসমান গণি জানালেন চুনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটিতে পিঁয়াজ-রসুনের ফলন ভাল ফলন হয়। এ কারণেই আমরা এবার চৈতালি ফসলের জমিতে রসুনের আবাদ বাড়াবো। তিনি এবার ২  বিঘা জমিতে আলু আবাদ কমিয়ে সে জমিতে পিঁয়াজ আবাদ করবেন। কারণ হিসাবে তিনি বললেন, অন্য ফসলের চেয়ে মসলা জাতীয় ফসল আবাদে লাভ বেশি। একই মন্তব্য করলেন গৌরিগ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন। তিনি বললেন এবার মাঠে গম ও আলুর এর পরিবর্তে অনেক জমিতেই আবাদ হবে পিঁয়াজের।
কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের মাঠকর্মীরা তাদের প্রতিবিদনে জানিয়েছেন, পাবনা, নাটোর, রাজশাহীর কৃষকেরা চলতি মৌসুমে পিঁয়াজ আবাদ বাড়াবে। এতে গম এবং ডাল-এর চাষ কমবে।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!