এস. গুলবাগী, বগুড়া : ১৮দলীয় জোটের ডাকা টানা ৭২ঘন্টার অবরোধের প্রথমদিনে শনিবার বগুড়ার শেরপুর ও শাজাহানপুরে পুলিশ ও র্যাবের সাথে অবরোধকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, যানবাহন ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। ওইসব ঘটনায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। শাজাহানপুরে র্যাবের গাড়ীতে এবং শহরে জেলা নির্বাচন অফিসে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ অবরোধকারী সন্দেহে ৫ জনকে আটক করেছে। এছাড়া রেল লাইনে আগুন দিয়ে অবরোধ করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
দ্বিতীয় দফা অবরোধের প্রথম দিনে শনিবার সকালে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির কর্মীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বিশেষ করে মাটিডালি বিমান মোড়, চারমাথা, বনানী এবং সাবগ্রামে ১৮ দলের নেতাকর্মিরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। একপর্যায়ে সাবগ্রামে রেল লাইনে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবির কর্মিরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে অবরোধকারীরা সরে যায়। দুপুর পৌনে দুইটার দিকে শহরের বকশিবাজারে অবস্থিত জেলা নির্বাচন অফিসে পরপর তিনটি শক্তিশালী ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। কে বা কারা ককটেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ জানতে পারেনি। তবে, এ ঘটনার পর সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে। এছাড়া বিকেলে চারমাথায় ১৮দলীয় জোটের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ১৮ দলের স্থানীয় নেতারা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
অবরোধের প্রথম দিনে শহরের বাইরে শেরপুর ও শাজাহানপুরে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। শেরপুরে অবরোধ সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপর্যুপরি রাবার বুলেট, সাউন্ট গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে। অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পর শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক যানবাহন ভাঙচুর হয়। উপজেলার সীমান্তবর্তী সীমাবাড়ী থেকে দশমাইল এলাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের প্রায় ১২-১৫টি পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সমর্থকরা বেপরোয়াভাবে যানবাহন ভাঙচুর চালায়। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুর উপজেলার সীমাবাড়ী থেকে দশমাইল এলাকায় বিভিন্ন স্থানে প্রায় অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। শনিবার দুপুর থেকে র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ প্রহরায় আটকে পড়া যানবাহনগুলো বগুড়ার দিকে যাওয়া শুরু করলে অবরোধ সমর্থকরা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বাধা প্রদান করে। এসময় তারা ইটপাটকেল ছুড়ে অসংখ্য যানবাহনের গ্লাস ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে শহরের ধুনটমোড় এলাকায় অবরোধ সমর্থকরা ওইসব যানবাহন চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়ালে র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অবরোধ সমর্থকরা বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে র্যাব ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেডসহ উপর্যুপরি রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এছাড়া শহরের বাসষ্ট্যান্ড, শেরুয়া বটতলা ও মহিপুর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবরোধ সমর্থকদের ধাওয়া দিতে একাধিক ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী আহমেদ হাশমী বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে ৫০-৬০ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়েছে। আর র্যাব সাউন্ড গ্রেনেডসহ বেশ কিছু ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে থাকতে পারে। বর্তমানে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দাবি করে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ি মামলাসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, শাজাহানপুরের নয়মাইলে র্যাব-পুলিশের সাথে পিকেটারদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে দুই জন পথচারী আহত হন। বেলা ৩টার দিকে মহাসড়কে আটকে পড়া যানবাহন গুলো র্যাব-পুলিশের পাহারায় নিয়ে যেতে চাইলে নয়মাইল বন্দরে পিছন দিক থেকে হামলা করে অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুর করে অবরোধকারিরা। এর পরপরই র্যাব, পুলিশ এসে পিকেটারদের ধাওয়া করে। পাল্টা পিকেটাররাও পুলিশের উপর হামলা করলে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এর আগে আটকে পড়া যানবাহন পারাপারকে কেন্দ্র করে র্যাব-পুলিশের সাথে অবরোধকারীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে র্যাব-১২এর কোম্পানী কমান্ডার (সিইও) জামিল আহম্মেদের গাড়ীকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে অবরোধ কারীরা। শনিবার বেলা ১২টার দিকে ঢাকা-বগুড়া মহাড়কের শাজাহানপুর উপজেলার মাটির মসজিদ এলাকায় টহলের সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ঘটনাস্থল থেকে র্যাব ৫ জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলো বেলাল হোসেন, মোখলেছুর রহমান, সিহাব, শাকিল এবং সোহেল। আটককৃত সকলে শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর গ্রামের মুন্নাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এদের কেউই রাজনীতির সাথে জড়িত নয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। নির্বিচারে সাধারন মানুষ আটকের ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক পিপিএম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নির্দেশ দেয়া হয়েছে।