পাবনা প্রতিনিধি : ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধ শেষ হতে না হতেই আবারও শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে ৭২ ঘন্টার অবরোধ। লাগাতার অবরোধে উত্তরবঙ্গের শিমের বৃহত্তর মোকাম পাবনার ঈশ্বরদীর কৃষক, শ্রমিক এবং ব্যবসায়ীরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। বিগত টানা ৩ দিনের অবরোধে ঈশ্বরদীর পাইকারী সবজি আড়ত মুলাডুলিতে ক্রেতা বা ফড়িয়া একবারেই ছিল না। পা ভ্যান, ভটভটি ও পাওয়ার ট্রিলার ভাড়া করে প্রত্যন্ত গ্রাম হতে মুলাডুলিতে শিম বাজারজাত করা হলেও ওই মোকাম একেবারেই ক্রেতা শুণ্য ছিল। ঈশ্বরদীতে পচনশীল এই কাঁচামাল সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ারও উপায় ছিল না কৃষকদের। ফলে নাম মাত্র দামে চাষিরা শিম বিক্রি করে বাড়ি ফিরেছেন।
১০ দিন আগেও এখানে শিম ১ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও গত অবরোধে ৬০০-৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। অবরোধের আগে মোকাম হতে প্রতিদিন ৫০-৬০ ট্রাক শিম চালান হতো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জায়গাতে। অবরোধে পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা না থাকায় ক্রেতা বা ফড়িয়া নেই মূলাডুলির শিম আড়তে। অথচ জমি হতে ধারাবাহিক ভাবে শিম তোলার নিয়ম রয়েছে। ভরা মৌসুমে প্রতিদিনই নিয়ম মতো শিম তোলা হয়। নিয়মিত শিম তোলা না হলে এক দিকে যেমন শিম বেশি পোক্ত হয়ে খাওয়ার অনুপযোগী হয়, অপরদিকে ছোট শিম বড় হওয়া এবং ফুল হতে শিম বের হওয়া বাধাগ্রস্থ হলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফলন হয় না।
রোববার সকালে সরেজমিন মুলাডুলি শিম আড়তে গিয়ে দেখা যায় হাজার হাজার মণ শিম বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে এসেছেন কৃষকেরা। ক্রেতা বা ফড়িয়া না থাকায় শিম চাষিরা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বসে আছেন। মুলাডুলির আড়তদাররা জানান, অবরোধের আগের দিন হতে এখানে কোন ক্রেতা বা ফড়িয়া নেই। অবরোধ মুক্ত হওয়ারও দু’একদিন পর ক্রেতার আগমন ঘটবে। ৬-৭ দিনে এখানে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকার লেনদেন হতো। শুক্রবার অবরোধ মুক্ত থাকলেও বিভিন্ন এলাকা হতে ক্রেতা এসে পৌছাতে পারেনি। এ অবস্থায় আবারও শনিবার হতে টানা ৩ দিনের অবরোধের ঘোষণা দেয়ায় আবারও শিম চাষি, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা সকলে বেকায়দায় পড়েছেন। রবিবার শিমের দাম আরেক দফা কমে ৪০০-৪৫০ টাকা মণ দরেও কেনার লোক নেই। আড়তদাররা আরও জানান, অবরোধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কৃষক। এই ক্ষতি কৃষকের পক্ষে পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এর আগেও হরতাল ও অবরোধে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
ঈশ্বরদীর সফল শিম চাষি কৃষক আমিনুর রহমান শিম বাবু জানান, অনেকেই এনজিও হতে ঋণ নিয়ে শিমের আবাদ করেছেন। হরতাল-অবরোধে কিস্তির মাফ নেই। এনজিও’র কিস্তি কিভাবে পরিশোধ হবে এই আশংকায় চাষিরা চরম ভাবে শংকিত হয়ে পড়েছেন। সবজি সংরক্ষণেরও কোন ব্যবস্থা না থাকায় শিম চাষিরা আর্থিক ভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এভাবে হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে ক্ষেত থেকে শিম তুলতে পারবেনা কৃষকেরা। এনজিও’র টাকা পরিশোধে শিম চাষিদের তখন গলায় দড়ি নিতে হবে। মরা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা।