রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: আশ্বিন-কার্তিক মাস আলেই হামাগরে গায়ে ডায়রিয়া-কলেরা হয়। হামাগরে বাচ্চাকরক নিয়া খালি ভয় নাগে। এলাকার কোনো জাগাত এ অসুখ না হলেও হামাগরে গাঁওত হবই। কথাগুলো বলছিলেন রৌমারী নমদাসপাড়া গ্রামের পুর্নিমা রানী (৩৫)। পুর্নিমা রানীর স্বামী অমলদাস ঢাকায় শ্রম বিক্রি করে। তিনি আরো বলেন, এই যে দেখছেন আমার কোলে সন্তান। এর বয়স ৩ মাস। বাচ্চা খালি কান্নকাটি করে। বুকের দুধ পায় না।

তাই জন্মের ১৬ দিন পর থিকা তোলা খাবার সুজি ও বার্লি খাওয়াই। তার মতো ওই গ্রামের অসংখ্য মা ও শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। বলতে গেলে রৌমারী উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রেই নমদাসপাড়া গ্রামের অবস্থান।
রৌমারী উপজেলা পরিষদ ভবন থেকে মাত্র অর্ধ কিলোমিটার দূরের ওই গ্রামকে অনেকে আবার মাঝি পাড়া বলেও ডাকে। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ জেলে যারা খালবিল ও নদীতে মাছ ধরে তা বাজারে বিক্রি করাই তাদের পেশা।

কিন্তু নদনদী-জলাশয়ে মাছ না থাকা এবং জলাশয়গুলো ইজারা দেওয়ায় জেলে পরিবাররা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রতিটি পরিবার দরিদ্র। এখানে কোনো আধুনিকতার ছোঁয়াই লাগেনি। উপজেলা সদরের ভেতরেই যেন প্রদীপের নিচে অন্ধকার। নমাদাসপাড়া গ্রামের বাড়িঘরগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি লাগানো। যেন বস্তির চেয়েও বেশি চাপাচাপি। গ্রামে প্রায় ৫০০ পরিবারের বসবাস। জনসংখ্যা প্রায় দুই হাজারের মতো। অবাক হলেও সত্য যে, গ্রাম জুড়ে মাত্র ২০টি বাড়িতে স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা রয়েছে।
বাকি ৪৮০পরিবারের লোকজন পায়খানা করে ঝোপঝাড়ে। পায়খানা করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বিষয়টিও জানে না তারা। ফলে পানি বাহিত রোগবালাই লেগে থাকে ঘরে ঘরে। আর কলেরা ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে প্রতিদিনই। পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে গ্রামের মানুষ জানে না কিছুই। প্রায়ই ঘরে ৫/৬ সন্তান করে দেখা গেছে।
সরেজমিন নমদাসপাড়া গ্রাম ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলে ওই চিত্র পাওয়া গেছে। গ্রামের সিংহভাগ মানুষ অশিক্ষিত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন বঞ্চিতগ্র্রামের লোকজন। গ্রামের ঘরে ঘরে মা ও শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। সতনা রানীর কোলে ১১ মাসের সন্তান লক্ষদাস। জন্মের সময় তার ওজন ছিল মাত্র ২ কেজি। জন্মেও ২০দিন পর থেকে তোলা খাওয়ানো লাগে।
মায়ের বুকের না পাওয়ায় সন্তানকে বাঁচানোর জন্য তার মুখে বাড়তি খাবার হিসেবে সুজি খাওয়ানো হয় বলে জানান, সতনা রানী। সতনা রানীর মতো গ্রামের নিলয় রানী, সুখরানী, সনুতোয়া রানী, ওষনা রানী, মিনতী রানী, বাগুনী রানী, জোসনা রানী, বিজলী রানী ও পদ্মা রানীর ঘরে ১ বছরের নিচে বয়সী সন্তান রয়েছে যারা চরম ভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে। রৌমারীতে পুষ্টি কার্যক্রম নিয়ে কাজ করে এমন কোনো বেসরকারি সংস্থা নেই।
বয়স্ক বিধাব ভাতার আওতায় এনেছি ১৫ জনকে। মঙ্গাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিতে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি ওই গ্রামের জন্য।’ তিনি জানান, ওই গ্রামে কমপক্ষে ১০টি গণশৌচাগার স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা নির্মাণের জন্য প্রতিবছরই রিং সস্নাব দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু তারা সে গুলো বিক্রি করে দেয়।’
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হানান এর কাছে জানতে
চাইলে তিনি বলেন, নমদাসপাড়া গ্রামের স্যানিট্যাশনের দুরাবস্থার বিষয়টি তার জানা নেই। তারপরও খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।
