পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহর উপজেলা পরিষদ চত্বরে স্থাপিত উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী নিয়ে সর্বত্র চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা ও গুঞ্জন। শিল্পকলা একাডেমীর ভবন নির্মাণ, টিআর প্রকল্পের ৭ মেঃ টন চাল, বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার টাকা চাঁদা আদায়, শিক্ষক/প্রশিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক স্বজনপ্রীতি, নীরবে ক্লাস উদ্বোধন, কমিটির সদস্যদের মূল্যায়ন না করে চরম স্ব্ছোচারিতাসহ নানা অভিযোগ অনুযোগ উঠেছে। এনিয়ে চাটমোহরের শিল্পী মহল ও চাঁদা দাতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স¤প্রতি চাটমোহরের স্থানীয় শিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সুধী সমাজকে না জানিয়ে অনেকটা গোপনে শিল্পকলা একাডেমীর কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমীর সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম নিজস্ব কিছু লোক নিয়ে এটি উদ্বোধন করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। কমিটির অধিকাংশ সদস্যই জানেন না এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধন করা হচ্ছে বা হয়েছে কিনা। সরকারি অনুদান ও উত্তোলনকৃত টাকা কোন খাতে কীভাবে খরচ হয়েছে, কত টাকা চাঁদা আদায় করা হয়েছে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে, চাটমোহর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে তোলা মোটা অংকের টাকার কোন হিসাব জানেন না শিল্পকলা একাডেমীর কমিটির সদস্যরা। সরকারি অনুদান বা টিআর প্রকল্পের বিষয়ে জানা নেই কারো। শিল্পকলা একাডেমীর সদস্য সচিব ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান জানালেন, টাকা আদায়ের বিষয়টি তার জানা নেই। টিআর প্রকল্পের কথাও তিনি জানেন না। খরচ কোথায় কীভাবে হয়েছে, সেটা ইউএনও মহোদয় বলতে পারবেন বলে তিনি উলেখ করে বলেন, ফাইলপত্র ইউএনও’র অফিসে আছে। কমিটির সদস্য চাটমোহরের বিশিষ্ট নাট্যকার নির্দেশক আসাদুজ্জামান বলেন, কেউ একজন মারা যাবার পর আমাকে নাকি সদস্য করা হয়েছে, আমি জানি না, আমার কোন অনুমতিও নেওয়া হয় নাই। আমি কখনও কোন মিটিংয়ে যাইনি। কোন অনিয়ম বা চাঁদা আদায় আমি পছন্দ করি না। ওস্তাদ আলী আহম্মদ জানালেন, আমি শিল্পকলা একাডেমীর সদস্য, অথচ উদ্বোধনের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি ইউএনও সাহেব। এদিকে যাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে, তাদেরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা টাকা দিলাম, অথচ কোন মূল্যায়ন করা হলো না। শিল্পকলা একাডেমীতে শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও তামাশা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন চাটমোহরের শিল্পীরা।
চাটমোহর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা আবেদন করেছিলেন, তাদেরকে না ডেকেই সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম ও কতিপয় সদস্যের পছন্দসই লোককে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। আবেদনকারী ওস্তাদ দেওয়ান জামিউল ইসলাম কাবলী জানান, ইউএনও মহোদয় আমাদের যাচাই বাছাই না করে কীভাবে আমাদের অযোগ্য ঘোষনা করলেন ? যারা আবেদন করলো না তাদের ডেকে এনে কোন নীতিমালায় প্রশিক্ষক নিয়োগ করলেন। ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণেই তাদেরকে ডেকে এনে প্রশিক্ষক বানানো হয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউএনও আগে নওগাঁতে চাকুরি করেছেন। সেখান থেকে এক তবলা বাদককে নিয়ে এসেছেন। চাটমেহরের তৎকালীন আইনজীবি ভবনই এখন শিল্পকলা একাডেমী ভবনে পরিণত হয়েছে। এদিকে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে তোলা মোটা অংকের টাকার কোন হিসাব জানেন না শিল্পকলা একাডেমীর কমিটির সদস্যরা। সরকারি অনুদান বা টিআর প্রকল্পের বিষয়ে জানা নেই কারো। কমিটির এক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, আমাদের মিটিংয়েই ঠিকভাবে ডাকা হয় না। এ সকল বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিল্পকলা একাডেমীর সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি, আসলে তড়িঘড়ি করে করতে গিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে। আমি আরেক সদস্যকে আমন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। যা হোক এর পরে ব্যাপকভাবে চাটমোহর শিল্পকলা একাডেমীর উদ্বোধন হবে। তখন সবাইকে আমন্ত্রণ জানাবো। এখন সবাইকে আসার জন্য অনুরোধ জানাই। চাঁদা আদায়ের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। বালু ব্যবসায়ী, সাধারণ ব্যবসায়ী, দলিল লেখক সমিতি, এনজিও, ইট ভাটাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আদায় করা টাকার হিসাব উপস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন চাটমোহরবাসী।