ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : সীমান্তের প্রচলিত বাধ্যবাদকতা ডিঙ্গিয়ে প্রতিবেশি দুই দেশের মানুষের দেখা সাক্ষাতের দুর্লভ সুযোগ পেয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার চাঁপাসা ও কোচাল সীমান্তের মাঝামাঝি ভুতডাঙ্গী গোবিন্দপুর কুলিক নদীর ওপারে দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলা হয়ে গেল। শাসন ব্যবস্থা তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। ভাষা শক্তি যেন চৌম্বিক ক্ষমতা। এ ক্ষমতায় হারমানে দুদেশের কর্তৃপ্ক্ষ।
ভারতের রায়গঞ্জ জেলার বিন্দোল গ্রামের মহেষ চন্দ্র রায় বাংলাদেশে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশকৈল চোপড়া গ্রামের থাকা নাতনী মিনু রাণী দেখা পেয়ে চোখ মুছে বলেন,বাঙালী হয়েও আমরা কেন আলাদা। তার সুরে একই মন্তব্য করেন হরিপুর উপজেলার নগেন্দ্রনাথ পাল। হেমন্তাবাদে শ্বশুরবাড়ি বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার আব্দুল খালেকের। তিনি তার স্ত্রী কন্যাকে নিয়ে দেখা করতে গিয়েছিলেন সেখানে। দীর্ঘ দিন পর খালেকের স্ত্রী আমেনা ভাই-বোনকে দেখা পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে অনেক চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ছুঁতে পারছিলাম না ভাই বোনদের । মনে হচ্ছিল, তাদেরকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করি। তাহলে হয়তো দীর্ঘদিনের জমে থাকা কষ্টগুলো থেকে রেহাই পেতাম। এই অনুভতি প্রকাশ করলেন চুয়ান্ন বছর বয়সী আমেনা।
হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর পাথরকালী মন্ডপে শ্যামাপুজা উপলক্ষে শুক্রবার দুপুর ১২ টায় বিজিবি-বিএসএফ’র অনুমোতি সাপেক্ষে একে অপরের দেখা করার সুযোগ পায় দুইদেশের বাংলা ভাষীরা। বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত চলে দুই বাংলার স্বজনদের মধ্যে মত বিনিময় ও খাবার আদান-প্রদান।
ভারতের উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ জেলার বিএসএফ’র খুকরাদহ ক্যাম্পের প্রানডাঙ্গী এলাকায় ওপারের আতœীয়রা বেলা ১২ টা থেকেই সেখানে জড়ো হতে থাকে। আর এ বাংলায় শ্যামাপুজা উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে দিনব্যাপী মেলা। আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করতে ঠাকুরগাঁও ছাড়াও পঞ্চগড়,দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলা থেকে শতশত নারী পুরুষ সেখানে জড়ো হন। প্রতি বছর এই দিনে মিলিত হয় দুই দেশের বাঙ্গালীরা।
পাথর কালী মেলার আয়োজক মুক্তি যোদ্ধা নগেন পাল জানান শ্যামা পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের এখানে এধরনের মেলার আয়োজন করা।
হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মফিজুল ইসলাম বলেন,শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হয়েছে এই মিলন মেলা।