এম. এ করিম মিষ্টার, নীলফামারী : নীলফামারীতে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের ভরা মৌসুমে কৃষকদের ক্ষেতের পাকা কেটে রাখা ধান জমি থেকে চুরির হিড়িক পড়েছে। ক্ষেতের ধান চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন কৃষক। এই অঞ্চলে পুরোদমে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হওয়ায় ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তাই প্রতিটি মুহূর্ত আমন ধান কাটা- মাড়াইয়ে কর্মব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। আর এ কর্মব্যস্ততার মাঝে আবার ক্ষেতের কেটে রাখা পাকা আমন ধান চুরির হিড়িক পড়েছে। ফলে দিনে কর্মব্যস্ত সময় অতিবাহিত করার পর আমন ধানের চুরি ঠেকাতে রাত জেগে ক্ষেত পাহারা দিতে হচ্ছে কৃষকদের। সাধারণত কৃষকরা অন্যান্য ফসল জমি থেকে তুলে বা কেটে সরাসরি তাদের বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর ফসলের জাতভেদ অনুযায়ী প্রক্রিয়াকরণ করার পর তা সংরক্ষণ করে থাকেন। কিন্ত ব্যতিক্রম হচ্ছে আমন ধান।
আমন ধান পাকার পর তা কেটে গাছ শুকানোর জন্য মাঠেই রাখা হয় সপ্তাহখানেক। এরপর তা কৃষকদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ঝাড়াই- মাড়াইয়ের পর গোলায় কিংবা বস্তায় ভরে সংরক্ষণ করেন কৃষকরা। কিন্ত শুকানোর জন্য জমিতে কেটে রাখা ধান চুরির হিড়িক পড়েছে। রাতের আঁধারে ক্ষেতে রাখা আমন ধান চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চোররা। এবারে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার হাটবাজারে প্রতিমন আমন ধান সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তারপরও আমন ধান চোররা ক্ষেতে কেটে রাখা আমন ধান চুরিতে মেতে ওঠেছে। প্রায় প্রতি রাতেই কোন না কোন ক্ষেত থেকে কৃষকদের কেটে রাখা আমন ধান চুরি যাচ্ছে। জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ, সদর ও সৈয়দপুর ঘুরে দেখা গেছে, চোরের হাত থেকে আমন ধান চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা ব্যবস্থা নিয়েছে কৃষকরা। কৃষকরা ক্ষেতের আমন ধান কাটার পর প্রায় প্রতিটি জমিতে পলিতিন, খড় কিংবা পাটখড়ি দিয়ে তৈরি করেছে রাতে থাকার জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা। যা এই অঞ্চলে ‘থুরা’ নামে বেশি পরিচিত। সন্ধ্যা নেমে আসার সাথে সাথে কৃষক কিংবা তাদের নিয়োজিত লোক ছুটছে মাঠের দিকে। হাতে তাদের টর্চ, লাঠি আর শীতের কাঁথা। ক্ষেতের মাঝে স্থাপিত ওই ‘ধুরার’ মধ্যে বসে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে আমন ক্ষেত। এ কাজে নিয়োজিত লোককে মজুরী দিতে হয়। এত কিছুর পরও সংঘবদ্ধ চোরেরা সুযোগ বুঝেই চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে কৃষকের মাথার ঘাম পায়ে ফেলানো ফসল আমন ধান।
