ভান্ডারিয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি : বিভাগীয় উদাসিনতা ও ইজারাদারদের লাভের হিসাবনিকাশ এর কারনে পিরোজপুরের তিনটি ফেরী ঘনঘন বিকল হওয়ায় জনগনের ভোগান্তির পাশাপাশি দক্ষিনাঞ্চলের অর্থনীতির উপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। পিরোজপুরের সাথে মংলা বন্দর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ সহ রাজধানীর সাথে সড়ক পথে যোগাযোগের অন্তরায় পিরোজপুরের তিনটি ফেরী সার্ভিস। ইঞ্জিন নষ্ট,পন্টুন ভাঙা, ফেরীতে ফাটল, যেনতেন গ্যাংওয়ে, ইঞ্জিনের কন্ট্রোল প্যানেলে ত্র“টি এ নিয়েই চলছে ফেরীগুলো।
পিরোজপুর সড়ক বিভাগে খোঁজনিয়ে জানাযায়, পিরোজপুর-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়কের চরখালী কঁচা নদী , খুলনা-পিরোজপুর-বরিশাল সড়কের বেকুটিয়ায় ও কঁচা নদী এবং পিরোজপুর-স্বরূপকাঠি সড়কের আমড়াজুরির সন্ধ্যানদীতে তিনটি ফেরী সার্ভিস রয়েছে। এক পরিসংখনে জানাযায়, গত ছয়মাসে বেকুটিয়া ফেরী ৫০ বার, আমড়াজুরি ফেরী ১৫ বার এবং চরখালী ফেরী বিকল হয়েছে ৩০ বার। চরখালী ও বেকুটিয়া ফেরীর ইজারাদারের প্রতিনিধি আজমির হোসেন ও আমড়াজুড়ি ফেরীর ইজারাদার আকবর হোসেন দুলাল জানান, পন্টুন ভাঙা, ফেরীতে ফাটল, যেনতেন গ্যাংওয়ে, ইঞ্জিনের কন্ট্রোল প্যানেলে ত্র“টি থাকার কারণে গত ৬ মাসে বেকুটিয়া ফেরী ৫০ বার ও চরখালী ফেরী ৩০ বার এবং আমড়াজুরি ফেরী ১৫ বার বিকল হয়েছে। একবার বিকল হলে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলির এ ফেরী কখনও দু’দিন বা কখনও এর বেশী বন্ধ থাকে। ফলে কুয়াকাটা ও পাথরঘাটার মৎস্য বন্দর থেকে মাছ পরিবহন সমস্যার পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা মারাত্মক বিঘিœত হয়। সমস্যায় পড়ে যায় রোগী পরিবনহকারী এম্বুলেন্স এমনকি আগুন নিভানো দমকল বাহিনীর গাড়ী ও। এ ফেরী তিনটি সার্বক্ষনিক সচল রাখার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যেন উদাসীন।
পিরোজপুর-মঠবাড়িয়- পাথরঘাটা সড়কের চরখালির কঁচা নদীতে চলাচলকারী ফেরীর চালক মাহাবুব জানান, ইঞ্জিনের কন্ট্রোল প্যানেলে ত্র“টি থাকার কারণে নদী পার হতে প্রায়ই ৪ থেকে ৫ গুন (৩০-৪০ মিনিট) সময় লেগে যায়।
পিরোজপুর সড়ক বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান জানান, পিরোজপুরের উলেখিত ফেরী সার্ভিস (ফেরী, পল্টুন, গ্যাংওয়ে) তদারকের দায়িত্ব বরিশাল ফেরী বিভাগের। তাদের গাফেলতির কারণে সাধারন মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে।এমন কি ফেরি বন্ধ অথবা বিকল হলে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়ায় বোঝাইকৃত ট্রলারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। উপ-সহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান আরও জানান, জেলার মধ্যে যে চলাচল কারি ফেরীগুলো ১৫/২০ বছর আগে তৈরী হওয়ায় মেরামতের অভাবে তার সবগুলোর অবস্থাই খারাপ। চরখালী ও বেকুটিয়ার ফেরীতে হ্যাচে (খোন্দলে) চিল ফাট, ফেরীর ডেকেও (ছাদে) রয়েছে ছিদ্র। বর্ষাকালে এ থেকে পানি ঢোকে। তবে বরিশাল ফেরী বিভাগের কর্মকর্তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করে।
ফেরী বিভাগ বরিশাল কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান জানান, ১৫ বছর ধরে দেশে নতুন ফেরী তৈরী হচ্ছে না। এ কারণে পুরানো ফেরী জোড়া তালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। এর পর তিনি বলেন, বেকুটিয়ায় একটি ৩১৫ অর্শ্ব শক্তি ও একটি ১৯০ অর্শ্ব শক্তির ফেরী আছে। ঠিকাদারের লোকজন তৈল সাশ্রয়ের জন্য সব সময় দ্রুত গতি সম্পন্ন (৩১৫ অর্শ্ব শক্তি) ফেরীটি ব্যবহার করে। এ কারণে একটি ফেরীর উপর চাপ বেশী পরে এবং ঐ ফেরীটি প্রায়শই বিকল হয়ে যায়। প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় একটি গ্যাংওয়ে ও একটি পল্টুন তিন মাস আগে বরাদ্দ হওয়া সত্বেও পিরোজপুর সড়ক বিভাগের গাফলতির কারনে এখন পর্যন্ত প্রতিস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
পিরোজপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামালের সাথে কথা হলে তিনি জানান, পিরোজপুর সড়ক বিভাগের জন্য বরাদ্দ হওয়া পল্টুন ও গ্যাংওয়েটি মুন্সিগঞ্জের নারিশ্যায় আছে। ঠিকাদার অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এ কারণে পল্টুন ও গ্যাংওয়েটি আনছেন না। তিনি (নির্বাহী প্রকৌশলী) বলেন, আমরা দাপ্তরিক খরচে স্বল্প সময়ে এ ফেরীগুলো এনে প্রতিস্থাপন করবো।