শুক্রবার , ৮ নভেম্বর ২০১৩ | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

পঙ্গু বিল­ালকে দেখার যেন কেউ নেই

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
নভেম্বর ৮, ২০১৩ ৫:০৩ অপরাহ্ণ

Billalএম.আর.টি. মিন্টু : শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলা শহরের এমন দৃশ্য মানবতা হার মানায় এবং মানবাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ! সকলের নজরে পড়লেও ভাববার সময় কাহারও নেই বরং পাশ কাটিয়ে চলতে পারাটাই ভদ্রতার পরিচয় ও বিধাতা নোংরা দৃশ্য থেকে পরিত্রান পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়তো কেহ শুকরিয়া জানাতে পারে। রাস্তা দিয়ে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, নির্বাচিত জননেতা, বিত্তবান, দানবীরের খেতাবধারী ব্যক্তি, গণমাধ্যমের প্রভাবশালী ব্যক্তি, মানবাধিকারে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের বিলাস বহুল চার চাকার গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করলেও তার দিকে কেহ ফিরে তাকায় না। অবস্থা দৃষ্টে মনে পড়ে গেল বাংলা সাহিত্যের জীবন্ত কিংবদন্তির সফল কথা শিল্পী মানিক বন্দোপাধ্যায় রচিত কালজয়ী উপন্যাস “পদ্মা নদীর মাঝি” উপন্যাস তিরিশের দশকে পদ্মা নদীর তীরে কেতুপুর গ্রামের অবহেলিত- নিস্পেষিত জেলেদের জীবন চিত্র। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র জেলে কুবের। মুর্খ, গরীবদের মধ্যে গরীব এবং উপহাসের পাত্র ভূখা কুবেরের মুখে উচ্চারিত হয়েছিল- ‘ঈশ্বর থাকেন ওই গ্রামে, ভদ্র পল­ীতে। এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’ এই উক্তির প্রতিফলন এখানে অনেকটা প্রতিফলিত। যেখানে মুনাফা নেই সেখানে কোন পেশার মানুষ শ্রম দেওয়ার ইচ্ছা শক্তি নগন্য। তাতিহাটী ইউনিয়নের দক্ষিণ গেরামারা গ্রামের মৃগী খালের তীরের অধিবাসী ইন্তাজ আলীর পুত্র মোঃ বিল­াল হোসেন (৪৩) গরীবের পুত্র। মাতা পরলোকগত। পিতা ভ্যান গাড়ী চালিয়ে সামান্য উপার্জনে জীবিকা নির্বাহ করে। বিল­াল পরের কর্ম করাবস্থায় যৌবনে বিয়ে করে। গরীবানা সুখময় দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করাবস্থায় এক কণ্যা সন্তানের পিতা হিসেবে রোজগারের সামান্য অর্থ সঞ্চয় করতে থাকে কণ্যাকে একদিন পাত্রস্থ করে বিল­ালও একদা শশুর হবে এই স্বপ্ন নিয়ে। প্রায় একযুগ পূর্বে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় সে। পয়সার অভাবে আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ না নিতে পেরে হাতুড়ী কবিরাজী চিকিৎসা গ্রহণ করে ফল পায়নি বরং দু’ পা সম্পূর্ণ অবশ হয়ে যায়। জীবিকার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তি পেশা হিসেবে বেছে নিতে হয় তাকে। চলতে পারে না। কোমড় হেচড়িয়ে চলে। দশ গজ পথ অতিক্রম করতে ঘন্টা খানেক সময় লেগে যায়। উচ্চস্বরে কথা বলতে না পাড়ায় ভিক্ষা চাইতে পারে না। পড়ে থাকে রাস্তার অলি-গলিতে। কেহ ইচ্ছা করে দু’চার পয়সা দেয়। গোটা দিনে অর্জিত সেই পয়সা দিয়ে চলেনা তার সংসার। একটি হুইল চেয়ারে বসিয়ে ঘুরে বেড়াবে ভিক্ষার জন্য এমন কেহ নেই। জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক মনের কষ্টে বলে, বেঁচে থাকার একটুও ইচ্ছা নেই তার। অভাবের তাড়নায় কণ্যাকে নিয়ে স্ত্রীও চলে যায় অন্য কোথাও। তাই বিষপানে আত্মহত্যার নির্মম অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। বেশি সময় রাস্তার পাশে শুয়ে থাকার কারণ হিসেবে জানায়, কোন ভদ্রলোকের গাড়ি তার বুকের উপর চালালে প্রাণ হনন হলে চিরমুক্তি পেয়ে শান্তি লাভ করতে পারবে। বিল­াল মুর্খ। কুবেরের মত বাকশক্তি থাকলে হয়তো বলতো, ‘বিধাতা ভদ্রলোকের মুখপানে তাকায়, এই অসহায় বিল­ালের মুখপানে নয়।’ কুবেরের নিকট মাছ কিনে পয়সা চাইলে প্রভাবশালীরা জবাবে বলে, ‘দিমু-দিমু, পরে ঠিকই দিমু।’ কিন্তু পয়সা দিতে ফের কেহ আসতো না। বিল­াল অনেক সমাজপতিদের নিকট বহুবার ধর্না দিলেও ওরা জানায়, ‘দেখমুনি, সুযোগ আসলে অবশ্যই দেখমু।’ কিন্তু এ পর্যন্ত কাহারো দেখা হলোনা বিল­াল কে। নিয়তি তার বাম! ধর্ম বর্ণ নিবিশেষে ভুখন্ডের সকল মানব বাঙ্গালী নাগরিক। নাগরিকের সার্বজনিন অধিকার নিশ্চিত করনের লক্ষ্যেই ৭১’র রণাঙ্গনের শহীদদের রক্তে লেখা সংবিধান। সংবিধানে নাগরিকের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা সহ জীবন ধারনের মৌলিক ব্যবস্থা রাষ্ট্র গ্রহণ করবে। খ অনুচ্ছেদে বলা আছে, নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, বেকারত্ব, ব্যাধী বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতি জনিত আয়ত্তাতীত কারনে অভাবগ্রস্থ্যতার ক্ষেত্রে সরকারী সাহায্য লাভের অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবে। বিল­ালের সাহায্য লাভের অধিকারও সংবিধান নিশ্চিত করায় কেন অধিকার বঞ্চিত এমন প্রশ্ন সংবিধান বিশেষজ্ঞদের। তার অভাবের পাশে দাঁড়াতে সমাজপতি কিংবা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতিবন্ধকতা কোথায়। এই জিজ্ঞাসাও সচেতনদের। সাম্যের কবি নজরুল গেয়েছেন- ‘গাহি সাম্যের গান/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।’ নজরুলের এমন চিরন্তন উক্তি থেকে জাতি বিপদগ্রস্থ্যদের পাশে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। বিপ্লবী কবি শুকান্তের কণ্ঠে উচ্চারিত, ‘এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান… এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি নবজাতকের কাছে আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’ অসহায় এই বিল­ালের পাশে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও বিত্তশালীরা এগিয়ে এসে তার সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন ধারনের পথ সুগম করুক এমনটি নিবেদন পৌর শহরের বিচক্ষণ ও বিবেকবান ব্যক্তিদের।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

error: কপি হবে না!