ads

বৃহস্পতিবার , ৭ নভেম্বর ২০১৩ | ১লা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

যুগের পরিক্রমায় শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য -জসীম উদ্দিন তালুকদার

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
নভেম্বর ৭, ২০১৩ ৬:৪৯ অপরাহ্ণ

Jashimমানুষকে সচেতন করার প্রয়াসে যুগে যুগে শিক্ষা বিশেষ লক্ষের দিকে ধাবিত হয়েছে। দেশে দেশে আবির্ভুত চিন্তানায়ক বা দার্শনিকগণ তাঁদের শিক্ষা দর্শনকে জনসাধারণের সম্মুখে তুলে ধরেছেন। ফলে শিক্ষার লক্ষ্য ও কাঠামোতে আদিম যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত যে পরিবর্তন হয়েছে তা সকল শিক্ষানুরাগী ব্যক্তির সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। আদিম কালে শিক্ষার লক্ষ্য ছিল আত্মরক্ষামূলক। সেই সময়ে শিক্ষা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতার অভাব ছিল। তখন প্রাকৃতিক প্রতিকুল পরিবেশের সাথে অবিরত সংগ্রাম চালিয়ে জীবন যুদ্ধে জয়ী হবার কৌশল আয়ত্ত করাই ছিল শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য। সেই সঙ্গে ব্যক্তির অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিখিয়ে যাওয়াও শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য বলে স্বীকৃত হতো। জীবন ধারণের প্রয়োজনে সমাজ গড়ার পথে মানুষ যতই এগিয়ে গেছে শিক্ষাও ততই বিচিত্র রূপ ধারণ করেছে। এ সঙ্গে শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কেও মানুষ ক্রমশ: সচেতন হয়ে উঠেছে। গ্রীক ছিল প্রাচীন পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র ভূমি। প্রাচীন গ্রীক দেশে সোফিষ্ট দার্শনিকরা শিক্ষক ছিলেন। অর্থের বিনিময়ে তাঁরা জ্ঞান বিতরণ করতেন। তাঁরা ছিলেন ব্যক্তি স্বাধীনতায় চরম বিশ্বাসী। তাঁদের মতে শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য হল স্বাতন্ত্রবোধ জাগ্রত করা। নগর রাষ্ট্র স্পার্টার শিক্ষা ছিল সোফিষ্টদের শিক্ষার পুরোপুরি বিপরীত। এখানে ব্যক্তির চাহিদা ও রুচির পরিবর্তে সমাজ ও রাষ্ট্রের চাহিদাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হতো। তাই ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে গড়ে তোলা এবং রাষ্ট্রের অনুগত করে তোলাই ছিল স্পার্টার শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য। অর্থাৎ ব্যক্তির স্বাতন্ত্রবোধ বা মূল্য স্পার্টার শিক্ষা দর্শনে স্বীকৃত ছিল না। সোফিষ্টদের শিক্ষা দর্শনকে এথেন্সে চূড়ান্ত আকার দেয়া হয়। তবে সোফিষ্টদের আদর্শ এথেন্সে অনুসরণ করা হলেও তাঁদের উগ্র ব্যক্তি স্বাতন্ত্র বোধকে সমর্থন করা হত না। গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস এ মতের সমর্থক ছিলেন। তাঁর মতে শিক্ষার উদ্দেশ্য হল, ‘নিজেকে জানা’। মানুষের আত্মজ্ঞানই হল শিক্ষার লক্ষ্য। সক্রেটিস শিষ্যদ্বয় প্লেটো ও এরিষ্টটল কম বেশি শিক্ষার আদর্শ সম্পর্কে এ মত পোষণ করতেন। এথেন্সে শিক্ষায় ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হলেও সামাজিক নিয়ন্ত্রণকে অস্বীকার করা হয়নি। সামাজিক পটভূমিতে ব্যক্তির স্বাতন্ত্রবোধকে বিচার করা হত। মূলত এথেন্সের শিক্ষাদর্শে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবোধ স্বীকারপূর্বক সমাজচেতনা ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ মেনে নিয়ে এথেন্সের শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। এথেন্সের শিক্ষার লক্ষ্য ছিল ব্যক্তিকে তার রুচি, প্রকৃতি ও সামর্থ্য অনুযায়ী তার অভ্যন্তরস্থ সম্ভাবনাগুলিকে পূর্ণ বিকাশে সহায়তা করা। প্রাচীন রোমাণগণ শিক্ষার ক্ষেত্রে গ্রীকদের প্রভাব মুক্ত হতে না পারলেও তাদের শিক্ষাদর্শনের মধ্যে ব্যবহারিক জগতে সাফল্য লাভের প্রতি তীব্র বাসনা লক্ষ্য করা যায়। রোমাণগণ ব্যবহারিক জীবনে সমৃদ্ধি লাভকেই শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য বলে গণ্য করত। প্রাচীন ভারতে শিক্ষার লক্ষ্য ছিল আত্মজ্ঞান ও আত্মোপলব্ধি। অর্থাৎ নিজেকে জানা ও সত্যোপলব্ধি করা। আর্য ঋষিরা জাগতিক সুখ ও আনন্দকে জীবনের চরম লক্ষ্য বলে মনে করতেন না। সুখ ও দুঃখের অতীত এক উপলব্ধির সন্ধান তাঁরা করেছেন, জানতে চেয়েছেন নিজেদের স্বরূপ। যেহেতু মানুষ স্বরূপত: পূর্ণ কাজেই পূর্ণতা বা পূর্ণ জ্ঞান, পূর্ণশক্তি ও পূর্ণ আনন্দকে বিকশিত করা। স্বামীজা বলেছেন, পূর্ণতা লাভই হচ্ছে শিক্ষার চরম লক্ষ্য। পূর্ণতা লাভই আত্মারমুক্তি বা মোক্ষ। যেহেতু প্রাচীন ভারতে শিক্ষার লক্ষ্য ছিল আত্মার বন্ধন থেকে মোক্ষলাভ, তাই এই লক্ষ্যে পৌছার উপায় হল জ্ঞানের অনুশীলন ও বাস্তব জীবনে তাঁর প্রয়োগ। বৈদিক যুগের পর প্রাচীন ভারতে বৌদ্ধ শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য ছিল নির্বাণ লাভ। এই শিক্ষা ছিল গৌতম বুদ্ধের জীবনাদর্শে অভিসিঞ্চিত সরল, সহজ ও লোকায়ত। উপনিষদের ঋষি সৎকর্ম ও শিক্ষার দ্বারা ব্রাম্মপ্রাপ্তি লাভের পথ নির্দেশ দিযেছেন। আর বৌদ্ধ ধর্মে একেই বলা হয় নির্বাণ লাভ। এককথায় প্রাচীন ভারতের শিক্ষা হল আত্মবিদ্যা। শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল আত্মজ্ঞান ও ব্রম্মলাভ করা। প্রাচীন যুগে শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্ম নির্ভর যে উদার নৈতিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল মধ্যযুগে শিক্ষা পুরোপুরি ধর্ম নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। খ্রীষ্টান ধর্মের আবির্ভাবে জাগতিক শিক্ষার লক্ষের পরিবর্তে খ্রীষ্টানরা পারলৌকিক জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ফলস্বরূপ যীশুখৃষ্টের প্রতিভু হিসাবে পরিচয়দানকারী যাজক সম্প্রদায় শিক্ষাকে সম্পূর্ণভাবে নিজেরা করায়ত্ব করে নেন। এসব অতি গোঁড়া ধর্মোৎসাহী যাজক সম্প্রদায় দ্বারা পরিচালিত শিক্ষার আদর্শ ছিল-ধর্মানুশাসন। এঁরা ধর্মের অনুশাসনে মানুষকে সামাজিক, বৌদ্ধিক, নৈতিক এবং আধ্যত্মিক- সকল ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। যাজক সম্প্রদায় ঘোষণা করেন, পার্থিব জীবনের পরপারে দিব্য জীবন লাভ করতে গেলে মানুষকে সকল প্রকার ইন্দ্রিয়ানুভূতি দমন করতে হবে। মানসিক অবদমন, সামাজিক অনুশাসন, বৌদ্ধিক পরাধীনতা ও ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যক্তিকে একান্তভাবে পরাধীন করে রাখে। বস্তুত ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণের ফলে মধ্যযুগের শিক্ষা ব্যক্তিসত্ত্বার সুষ্ঠু ও সর্বাঙ্গীন বিকাশের আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে যায় এবং শিক্ষার লক্ষ্য সীমিত হয়ে পড়ে। ষোড়শ শতকে ইউরোপে ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের ফলে মানুষের নবযাত্রা শুরু হয়। সৃষ্টি হয় নবজাগরণ আন্দোলন। এই নবজাগরণ আন্দোলনের ফলে ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মানুষের সার্বিক মুক্তি, নতুন শিক্ষাদর্শ চিন্তার স্বাধীনতা, যুক্তি ও মনের মুক্তি অনুভূতির স্বভাব ধর্মানুযায়ী প্রকাশ, সর্বোপরি দৃষ্টিভঙ্গির প্রসারতা ঘটে। যাকে বলা হয় মানবতাবাদ। মানবতাবাদের প্রধান বক্তব্য হল শিক্ষা প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে থাকবে ‘মানুষ’ অন্য কিছু নয়। মানুষের আশা আকাঙ্খা, অভিরুচি ও সম্ভাবনাগুলিই হবে শিক্ষার প্রধান উপাদান। কোন মতেই ধর্মগত বা অতীন্দ্রিয় কোন বিষয়বস্তু শিক্ষার উপাদান হতে পারে না। এই মানবতাবাদী ধারা ব্যক্তি মানুষের বিকাশের চেতনা শিক্ষা চিন্তার নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। পরিপূর্ণ জীবনের যে আদর্শ- গ্রীক,ল্যাটিন প্রভৃতি দ্রুপদী সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়েছিল তার অনুশীলন নতুনভাবে শুরু হয়। মানবতাবাদীদের মতে ব্যক্তির মানসের অনুভূতিমূলক দিক, সামাজিক প্রভৃতি দিকগুলি বিকাশ লাভের সহায়তা দানই হবে শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে রুশো, জনহেনরি পেষ্টালৎসী, জন ফ্রেডারিক হার্বাট প্রভৃতি যুগান্তকারী চিন্তাবিদ ও দার্শনিকের আবির্ভাবে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও কাঠামোর বিরাট পরিবর্তন সূচিত হয়। মধ্যযুগে নানা সামাজিক দুর্নীতি ও চিন্তার দৈন্য শিক্ষাকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল। এ সময়ে শিশু ছিল শিক্ষা জগতে অবহেলিত। শিক্ষারাজ্যে শিশুর পছন্দ অনুরাগ, শক্তি, সামর্থ্য, প্রবণতা, আগ্রহ প্রভৃতি ছিল সম্পূর্ণভাবে অবহেলিত। এসবের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন ফরাশী দার্শনিক রুশো। তিনি বলেছিলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে শিশুকে অবহেলা করা চলবে না। পূর্ব পরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থা শিশুকে চাপিয়ে দেয়া যাবে না। শিক্ষা গড়ে তুলতে হবে শিশুর প্রয়োজন অনুসারে- অর্থাৎ শিশু শিক্ষাকে অনুসরণ করবে না, শিক্ষাই শিশুকে অনুসরণ করবে। শিশুর প্রকৃতি অনুযায়ী তাকে স্বাভাবিক বিকাশের সকল সুযোগ দিতে হবে। সকল কৃত্রিমতা পরিহার করে স্বাভাবিক পরিবেশে আপন প্রকৃতি অনুযায়ী শিশুর শক্তি সামর্থ্যরে পূর্ণ স্বাভাবিক বিকাশই হবে শিক্ষার লক্ষ্য। ক্রমবিকাশের পর এ সময়ে শিক্ষায় ব্যক্তিতন্ত্র প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। সমাজে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক আদর্শ প্রতিষ্ঠা অব্যাহত থাকে। রুশোর ভাবশিষ্য পেষ্টালৎসী শিক্ষাকে মনোবৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তাঁর মতে শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল শিশুর মানসিক, শারীরিক ও স্বাভাবিক বৃত্তিগুলির পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনে সহায়তাদান। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে যে সহজাত সম্ভাবনাগুলি সুপ্ত অবস্থায় আছে তা সুসামঞ্জস্যপূর্ণ বিকাশ সাধনে সচেষ্ট থাকা। জার্মান দার্শনিক জন ফ্রেডারিক হার্বাট ঘোষণা করেন যে নৈতিক চরিত্র গঠনই শিক্ষার লক্ষ্য। দার্শনিক ফ্রোয়েবলের মতে শিশুর ভবিষ্যৎ যা হবে তা শিশুর মধ্যে প্রথম হতেই নিহিত থাকে এবং শিশু তার ভবিষ্যৎ পরিণতিতে পৌছায় ভিতর হতে এই বহিমুখী ক্রমবিকাশের মাধ্যমে। এক কথায় যা ভিতরে ছিল অবিকশিত অবস্থায় তা ধীরে ধীরে বাইরে উন্মোচিত বা বিকশিত হয়ে উঠে। তাই তিনি বলেন, শিশুর শক্তি সম্ভাবনার ক্রম উন্মেষই হল শিক্ষার লক্ষ্য। উনিশ শতকের শেষের দিকে বিজ্ঞানের অভ’তপূর্ব প্রগতি ও বিকাশ ঘটে। বৃটিশ দার্শনিক হার্বাট স্পেসার সেই বৈজ্ঞানিক ধারাকে শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে চেয়েছিলেন। তিনি জীবনের প্রয়োজন সাধনকেই শিক্ষার উদ্দেশ্য বলে নির্দেশ করেছেন। কোন বিষয় শিক্ষনীয়, কোন বিষয়ের কি মূল্য তা জীবনের মাপকাঠিতে স্থির হবে। যা ব্যক্তির জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিধান করতে পারে, তাই শিক্ষা হিসাবে মূল্যবান। তাঁর মতে শিক্ষার লক্ষ্য হল ভবিষ্যতে পরিপূর্ণ জীবন যাপনের প্রস্তুতি। সুতরাং যুগের পরিক্রমায় শিক্ষা মানুষকে উদ্দেশ্যমুখী একটি সচেতন প্রয়াসের দিকে ধাবিত করে।

Shamol Bangla Ads

লেখক : সভাপতি, বিলাইছড়ি প্রেস ক্লাব, বিলাইছড়ি,রাঙ্গামাটি, ই-মেইল : jashim.cht@gmail.com

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!