ads

মঙ্গলবার , ৫ নভেম্বর ২০১৩ | ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

তালাত মাহমুদ’র সমকালীন নিবন্ধ : চলমান ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন

রফিকুল ইসলাম আধার , সম্পাদক
নভেম্বর ৫, ২০১৩ ১০:৪২ অপরাহ্ণ

Talat Mahmudবাংলাদেশে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা কত(?) তার সঠিক পরিসংখ্যাণ নেই। কারণ, আমাদের দেশের শ্রমজীবী মানুষ সংগঠিত নয় বা ট্রেড ইউনিয়নের সাথে সরাসরি যুক্ত নয়। বিভিন্ন সেক্টরে যে সব টেড ইউনিয়ন কাজ করছে- সে সব ট্রেড ইউনিয়নও এদের সঠিকভাবে সংগঠিত করতে পারছে না। হতাশাব্যঞ্জক হলেও সত্য, দেশের মোট শ্রমজীবী মানুষের মাঝে মাত্র ৪ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষ ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কে ধারণা রাখে; আর ট্রেড ইউনিয়নের সাথে সরাসরি জড়িত মাত্র ২ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষ। অথচ বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে।
বিভিন্ন সরকারী, আধা সরকারী,স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় এসব শ্রমজীবী মানুষ নিয়োজিত থেকে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। সড়ক, রেল ও নৌপথসহ বিভিন্ন অফিস, ব্যাংক, বীমা, প্রচার মাধ্যম,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মিল-কারখানা, গার্মেন্টস, হোটেল, মোটেল, দোকান, হাট-বাজার, এদের কর্মস্থল।
এসব শ্রমজীবীর মাঝে শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষ রয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত। ফর্মাল সেক্টর এবং ইনফর্মাল সেক্টর উভয় সেক্টরে নিয়োজিত শ্রমজীবী মানুষ সংগঠিত হওয়ার অধিকার রাখে। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী ন্যায্য মজুরীর নিশ্চয়তা প্রত্যেক রাষ্ট্রকেই দিতে হবে। বাংলাদেশের শ্রম আদালত ও শ্রম অধিদপ্তর শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। শ্রমজীবীদের স্বার্থ রক্ষা, ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার ও সিবিএ কার্যক্রম তদারকি এবং জটিলতা নিরসনের জন্যও শ্রম আদালত ও শ্রম অধিদপ্তর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। শ্রমজীবী মানুষের জন্য রয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী বিধি অনুযায়ী সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্ব শাসিত ও বেসরকারী অফিস বা সংস্থায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চার শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা, দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী, এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। একমাত্র তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরাই ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার রাখেন। তবে পুলিশ, বিজিবি, ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের ট্রেড ইউনিয়ন করার আইনগত অধিকার নেই। ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারবেন না প্রথম শ্রেণী ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তরাও। সকল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী, মিল-কারখানার শ্রমিক, গার্মেন্টস শ্রমিক, বিদ্যুৎ-কারিগর শ্রমিক, সড়ক পরিবহন শ্রমিক, ক্ষেতমজুর শ্রমিক, কুলী, রিঙ্া শ্রমিক, দোকান কর্মচারী ও দর্জি কর্মচারী শ্রমিক, ট্রাক চালক শ্রমিক, ছাপাখানা শ্রমিক, রাজমিস্ত্রী ও কাঠমিস্ত্রী শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক সহ সকল ফর্মাল ও ইনফর্মাল সেক্টরে নিয়োজিত শ্রমজীবি মানুষ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার রাখেন।
বাংলাদেশে শ্রমিক সংগঠনগুলো দু’ভাগে বিভক্ত। একটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে যক্ত অপরটি অরাজনৈতিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে জাতীয় শ্রমীকলীগ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ইত্যাদি সংগঠনগুলো কাজ করছে অপরদিকে বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন (বিএসএসএফ), বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন(বিএমএসএফ) বাংলাদেশ,লেবার ফেডারেশন (বিএলএফ) ইত্যাদি শ্রমিক সংগঠনগুলো অরাজনৈতিকভাবে শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।
আগে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন বিভিন্ন সেক্টরে শ্রমিকদের সংগঠিত করার জন্য বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করে এসেছে। এসব সংগঠনের মধ্যে ডব্লিউসিএল, ফিউস্ট ইত্যাদি উল্লোখযোগ্য। বর্তমানে সবগুলো আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন বিলুপ্ত হয়ে একটি শ্রমিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এই শ্রমিক সংগঠনের নাম ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন বা আইটিইউসি। এই আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের বাংলাদেশ শাখার নাম হলো ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন-বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইটিইউসি-বিসি)। আইটিইউসি-বিসি গঠিত হয়েছে বাংলাদেশের ৬টি জাতীয় শ্রমিক সংগঠন নিয়ে। এগুলো হলো বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন (বিএমএসএফ), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল (বিজেএসডি), বাংলাদেশ, লেবার ফেডারেশন (বিএলএফ), বাংলাদেশ ফ্রি ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (বিএফটি ইউসি), জাতীয় শ্রমিকলীগ (জেএসএল) ও বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন(বিএসএসএফ)। আইটিইউসি-বিসি-এর সদস্য সংখ্যা ১২। গত ২৩ ও ২৪ আগস্ট’১৩ ঢাকা বিআইএম মিলনায়তনে ন্যাশনাল কনফারেন্স অন ট্রেড ইউনিয়ন স্ট্রেটেজি টুওয়ার্ডস ইউনাইটেড একশন ইন ডেমোক্রেটিক অটোস্ফেয়ার শীর্ষক দু’দিনের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আইটিইউসি-বিসি নেতা সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন-এশিয়া প্যাসিফিকের (আইটিইউসি-এপি) সেক্রেটারি জেনারেল নরিয়াকি সুজুকী, আইটিইউসি-বিসি’র সেক্রেটারি জেনারেল মজিবুর রহমান ভুইয়া, আইটিইউসি-এপি’র ওয়ার্কার্স রাইটস-এর বিভাগীয় পরিচালক পি, হরিদাসন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি ও আইটিইউসি-বিসি’র নেতা নজরুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন (বিএসএসএফ) এর সভাপতি ও আইটিইউসি-বিসি’র নেতা মোঃ তোফাজ্জল হোসেন এবং ওই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও আইটিইউসি-বিসি’র নেতা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি আলহাজ্ব শুক্কুর মাহমুদ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাধারন সম্পাদক মোঃ জাফরুল হাসান, বাংলাদেশ মুক্ত ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ ব্যানার্জী, বাংলাদেশ ফ্রি ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি আব্দুল মুকিত খান, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সভাপতি শাহ্‌ মোঃ আবু জাফরসহ কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। এ সম্মেলনে বিদেশী অতিথি সহ দু’শতাধিক কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতা অংশগ্রহণ করেন।
বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের সংগঠিত করে দাবি আদায়ের আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে আইটিইউসি পৃথিবীর প্রতিটি দেশে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ করে ট্রেড ইউনিয়নের আওতায় এদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আত্মসচেতন করে তোলার কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’-এই শ্লোগানকে বেগবান করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল প্রভাবমুক্ত ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন গড়ে তুলতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অতীতের তুলনায় অনেক বেশি গতিশীল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে শ্রমিকদের সকল অধিকার নিশ্চিত করারও দাবি উঠেছে। যদিও সরকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য গত ৩ নভেম্বর’১৩ ন্যুনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০/- টাকা ঘোষণা করেছে। কিন্তু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর মালিকরা তা মানছে না।
বলাবাহুল্য, শ্রমজীবীদের ট্রেড ইউনিয়ন আর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন একই শ্রম আইনের আওতায় হলেও তাদের সংগঠনগুলো ভিন্ন ভিন্ন নামে গঠন হয়ে থাকে। এবং নিজ নিজ শ্রেণী স্বার্থ বা দাবী আদায়ের জন্য তারা আন্দোলন সংগ্রাম করে। একই পেশার বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন একত্রিত হয়ে বেসিক ফেডারেশন গড়ে তুলে। এ রকম ১৪টি বেসিক ফেডারেশন নিয়ে গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন বা বিএসএসএফ। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর বি-৪। প্রত্যেক জাতীয় সম্মেলনে পরীক্ষিত নেতাদের নিয়ে ৩০ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি কণ্ঠভোটে বা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন (বিএসএসএফ) এর অন্তর্ভুক্ত বেসিক ফেডারেশন সমূহের মধ্যে বাংলাদেশ সংযুক্ত ট্রাক বন্দোবস্তকারী পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন,বাংলাদেশ সংযুক্ত ইমারত নির্মাণ ও কাঠশিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ সংযুক্ত পাটকল ও বস্ত্রকল শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ সংযুক্ত কর্মজীবী মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ সংযুক্ত শিক্ষক পরিষদ, বাংলাদেশ সংযুক্ত কৃষক ও ক্ষেত মজুর সমিতি, বাংলাদেশ সংযুক্ত ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী ও জেলে সমিতি, বাংলাদেশ সংযুক্ত লেদ ও মেটাল শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ সংযুক্ত চাউলকল ও চাতাল শ্রমিক ফেডারেশন উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনার দেশ। এদেশের শ্রমশক্তির সঠিক মূল্যায়ন করলে বাংলাদেশকে অনায়াসেই মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিণত করা যায়। তার আগে শ্রম শোষণ রোধ করতে হবে। সঠিক ও ন্যায্য মজুরী নির্ধারণের মাধ্যমে সস্তা শ্রমের কবর রচনা করতে হবে। শিল্প-আইন বা শিল্পনীতি মেনে চলে মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে দূরত্ব কমাতে হবে। সেজন্য শিল্প বান্ধবনীতি অনুসরণ করতে হবে। তবেই শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত হবে। তারা তাদের শ্রমের মর্যাদা পাবে। স্থায়ী হবে কর্মের ঠিকানা।

Shamol Bangla Ads

লেখক: বিশিষ্ট কবি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!