ইমরান হোসাইন, তানোর : প্রতি বছরের ন্যায় অন্যান্য উপজেলার মতো রাজশাহীর তানোর উপজেলাতেও বনায়ন ও বৃক্ষরোপণের জন্য সরকারি ভাবে লাখ লাখ টাকা খরচ করা হয়। এবছরে তানোর উপজেলায় বৃক্ষ রোপণের জন্য সরকারি ভাবে ব্যয় ধরা হলেও সঠিক এর কোন তথ্য জানাতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সরকারি বরাদ্দের টাকা খরচ করে কেবল আয়োজন করা চমকপদ বৃক্ষমেলা করা হয়ে থাকে। সেখানে ওই সিমিত অর্থ ব্যয় করে বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না। একারণে প্রকৃতপক্ষে বনায়ন কার্যক্রমের বৃক্ষ রোপণ একে বারে ভেস্তে গেছে। ফলে সরকারের তেমন কোন উপকারেই আসছে না। বর্ষা মৌসুমে সরকারী বে-সরকারী বিভিন্ন সংগঠণের পক্ষ থেকে তানোর সদরসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বৃক্ষরোপণের নামে সভা সমাবেশ করার ধুম পড়ে যায়।
লোক দেখানো হাতেগুনা দুয়েকটি এলাকায় বৃক্ষরোপন কর্মসূচী অংশ হিসাবে বৃক্ষরোপণ করা হলেও বাস্তব চিত্রে সরকারি বরাদ্দের হিংস অর্থ লোপাট করা হয়। যেখানে রোপণ করা হয় সেখানে প্রয়োজনীয় পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রোপণকৃত চারার সিংহভাগই নষ্ট হয়ে যায়। অনেকে ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগেও বর্ষা মৌসুমে গাছের চারা রোপণ করে থাকেন। তবে, সরকারি ভাবে বৃক্ষরোপণের জন্য নিয়ম মেনে দেয়া হলেও কার্তিক মাসের শেষেও কোথাও কোন বৃক্ষরোপণের দৃশ্য চোখে পড়েনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৫ বছরে শুধু বন বিভাগের পক্ষ থেকে তানোরের বিভিন্ন এলাকায় ৮০ কিলোমিটার রাস্তায় ৬০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের চারা রোপণ করা হয়েছে। কাগজে এসব তথ্য থাকলেও বাস্তব চিত্রে এর কোন অস্তিত্ব চোখে পড়েনি। এসব গাছের চারা রোপণের জন্য প্রতি বছরে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হলেও নাম মাত্র বৃক্ষরোপণ করা হয়ে থাকে। একারণে তানোরে বনায়নের পরিধি মোটেও বাড়েনি। বরং প্রতিনিয়ত বৈধ-অবৈধভাবে গাছ কাটার কারণে তানোরে বনায়নের পরিমান প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে।
সূত্রে আরো জানা যায়, এসব বৃক্ষ পরিচর্চার জন্য ২৯৫ জন উপকারভোগীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতি বছর বিভিন্ন এনজিও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্দ্যোগেও বিপুল পরিমাণ গাছের চারা রোপণ করা হয়ে থাকে। তবে, এসব সরকারি ও বে-সরকারি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান গাছের চারা লাগিয়েই খালাস। চারা রোপণের পর তা বাঁচানো কিংবা রক্ষা করার তেমন যথাযথ কোন উদ্দ্যোগই গ্রহণ করেন না। নিয়ম মোতাবেক চারাগুলো রোপণের পর তা সু-রক্ষার জন্য তা খাঁচা দিয়ে ঢেকে দেয়ার কথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রয়োগ না করে খাঁচা তৈরির বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাট করা হয়। যার কারণে রোপণকৃত বেশির ভাগ গাছের চারা অযতœ-অবহেলায় নষ্ট হয়ে যায়।
শুধু তাই নয়, গরু-ছাগলও খেয়ে অনেক গাছ সাবাড় করে দেয়। তানোরের বিভিন্ন সড়কে প্রতি বছর যে পরিমাণ চারা রোপণ করা হয়েছে তার অধিকাংশ চারাই বিনষ্ট হয়ে যায় পরিচর্চার অবহেলায়। চারা রোপণের পর কমপক্ষে দু’ বছর পর্যন্ত বন বিভাগের মাঠকর্মী ও উপকার ভোগীদের পাহারা দেবার কথা। কিন্তু এই নিয়ম সাধারণত তানোরের কোথাও যথাযথভাবে মানা হয় না। একারণে রোপিত চারার বয়স এক বছর পূর্ণ হবার আগেই তা নষ্ট হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবারও বৃক্ষরোপণ অভিযান উপলক্ষ্যে তানোর উপজেলা পরিষদ চত্বরে বৃক্ষ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার ষ্টলগুলোতে শোভা পেয়েছিল নানা প্রজাতির চারা। এসব গাছের চারার বড় একটি অংশ বিক্রিও হয়ে গেছে। এসব অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৃক্ষরোপণ সংক্রান্ত উপদেশ মূলক বক্তব্যও দিয়েছেন। সেই বক্তব্যের মধ্যে চলে গেছে বৃক্ষ রোপণ অভিযান। ফলে একই রাস্তায় বৃক্ষরোপণের জন্য একাধিক বছর বাজেট বরাদ্দ হয়ে থাকে। লোক দেখানো নাম মাত্র বৃক্ষ রোপণ করে বরাদ্দকৃত অর্থ উপর মহল থেকে শুরু করে সকল শ্রেণীর সংশ্লিষ্টরা ভাগবাটোয়ারা করেন।
এনিয়ে গোলাপাড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক নূর মোহাম্মদ বলেন, স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তার অনিয়ম ও অবহেলার কারণে তানোরে বনায়ন কর্যক্রম মারাতœক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এখানে মূলত সভা সমাবেশে বৃক্ষ রোপণের তাগিদ দেয়া হয়ে থাকে। এরপর থেকে বৃক্ষরোপনের বাস্তব সম্মত কর্মসূচী বাস্তব চিত্রে প্রতিঢলিত হয় না। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
এনিয়ে তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজেদা ইয়াসমীনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচির সকল আয়-ব্যয় নিয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা বলতে পারবেন। এসব বিষয়ে তিনি খোঁজ-খবর রাখেন না। সরকারি অর্থব্যয়ে রোপণকৃত চারা দেখভালের জন্য লোকবল নিয়োগ করা হয়ে থাকে। রোপণকৃত বৃক্ষ চারার পরির্চচা করতে দায়িত্বশীলরা অবহেলা করলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এব্যাপারে তানোর উপজেলা বন কর্মকর্তা দেবাশীষ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাদের সাধ্য মত বনায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। সরকারি অর্থ আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখেন জেলা বন কর্মকর্তা। তিনি তার নির্দেশ কোন তথ্য জানাতে পারবেন না। তিনি শুধু কেবল মাত্র তার দায়িত্ব পালন করেন। এনিয়ে কেউ অভিযোগ তুললে তাতে তার যায় আসে না।
