এমএ ছালাম, মহাদেবপুর (নওগাঁ) : পর্যাপ্ত পরিমাণ জমিতে আখ চাষ করে দীর্ঘদিনের সুনাম ধরে রেখেছিল নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা। এখন সেই সুনাম আর নেই। এ উপজেলা থেকে আখচাষ ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে।
স্থানীয় কৃষকরা এক সময় প্রতিযোগিতা করে আখের আবাদ করেছেন। আখ মাড়াই করে গুড় তৈরীর সময় উৎসব বিরাজ করতো গ্রামে গ্রামে। প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, আখমাড়াই করে গুড় তৈরীর সময়গুলোতে প্রত্যন্ত পল্লীর কৃষকরা জামাই-মেয়েদের বাড়ীতে বেড়াতে এনেছেন মনের আনন্দে। আখ মাড়াই মানেই গ্রামের চিত্র উৎসব মুখর হয়ে উঠত। সেসব এখন শুধুই স্মৃতি। কালের শ্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে আখচাষ। অতীতে যেখানে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে আখচাষ হতো, সেখানে চলতি মৌসুমে চাষাবাদ হচ্ছে মাত্র কয়েকশ’ হেক্টর জমিতে। বিগত কয়েক বছরের চিত্রও হতাশাজনক। গুড় তৈরী করে কৃষকরা যেখানে লাভের মুখ দেখতেন, সেখানে এখন স্বাচ্ছন্দে গুড় তৈরি করতে পারছেন না কৃষক। চিনিকলে আখ সরবরাহ বাধ্যতামূলক করা হলেও অর্থপ্রাপ্তিতে হাজারও বিড়ম্বনার মুখে কৃষকরা মনের কষ্টে আখ আবাদই প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। গুড় তৈরির জন্য চিনিকল জোন এলাকার বাইরে আখ আবাদের সরকারী অনুমতি থাকলেও কৃষকের পক্ষে একাধিক স্থানে আখ চাষ করা সম্ভব হয় না। এছাড়া সংসারের খাদ্যসহ নানান প্রয়োজন মেটাতে কৃষক তার স্বল্প জমিতেই রকমারি ফসল চাষের জন্য ব্যবহার করে থাকেন। আখ তুলনামূলক দীর্ঘমেয়াদী ফসল হওয়ায় একাধিক স্থানের জমিকে কৃষক আখ চাষের জন্য বাছাই করতে পারেন না। এ কারণে তারা ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছেন অর্থকরী এ ফসল চাষাবাদ থেকে। এছাড়া স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অন্যান্য ফসলচাষে কৃষকদের ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করলেও আখ চাষের ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ দেখান না।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এখানে মাত্র ৩শ ৬০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এর আগের বছর ৪শ ৫০ হেক্টর, ২০১১ সালে ৩শ ৫০ হেক্টর এবং ২০১০ সালে ৪শ ৭৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
