আরিফ মাহমুদ কলারোয়া (সাতক্ষীরা) : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, সাতক্ষীরার প্রবীণ রাজনীতিক, প্রাক্তন এমএলএ, এমপিএ, এমসিএ মমতাজ আহমেদ সরদার আর নেই। ৩ নভেম্বর রবিবার দুপুর ১২টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে ৯৬ বছর বয়সে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন (ইন্না…রাজিউন)।

মৃত্যুকালে তিনি ৩স্ত্রী, ৮পুত্র, ৬কন্যাসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি ১৯১৭ সালে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মরহুম আহাদুল¬াহ সরদার ও মাতার নাম মরহুম ছুরমন বিবি। সদ্যপ্রয়াত মমতাজ আহমেদ ১৯৪০ সালে কলারোয়া হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ন হন। পরে যশোর এমএম কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসাবে এফএ (ফার্স্ট অব আর্টস) পরীক্ষায় উত্তীর্ন হন। ১৯৪৫ সালে একই কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন মমতাজ আহমেদ। সেসময় কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পরীক্ষার কেন্দ্র হওয়ায় তিনি সেখানকার হোস্টেলে থাকতেন। সেখানেই তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন। এরপর থেকে বঙ্গবন্ধুর মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি একই রাজনীতিতে নিজেকে সমর্পণ করেন। আজীবন তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
সাতক্ষীরার রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রবীণতম ব্যক্তি মমতাজ আহমেদ সরদার ১৯৫৪ সালে এমএলএ (আইন পরিষদ সদস্য), ১৯৭০ সালে এমপিএ (প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য) এবং ১৯৭২ সালে এমসিএ (গণপরিষদ সদস্য) নির্বাচিত হন। নিজের রাজনৈতিক জীবনে তার এই সাফল্য তাকে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির খুব কাছে নিয়ে যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ৮নম্বর এবং ৯নম্বর সেক্টরে রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তিনি ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর২৪ পরগণা জেলার স্বরূপনগর থানার বিথারি আঞ্চলিক সংগ্রাম কমিটির সভাপতি। মমতাজ আহমেদ জীবদ্দশায় শিক্ষক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ভারতের বালতি হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক, পরে ঝিকরগাছা বদরুদ্দিন মুসলিম হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও ১৯৫১ সালে বাগআঁচড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এরই মাঝে ১৯৪৮ সালে তিনি কলারোয়ার কেঁড়াকাছি ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এছাড়া ১৯৫১ সাল থেকে টানা ১০ বছর তিনি ছিলেন কলারোয়া হাইস্কুলের সেক্রেটারি। মমতাজ আহমেদ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একাধারে একজন কবিও ছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বোয়ালিয়া গ্রামের নিজের বাগান বাড়িতে অবস্থান করে জনকল্যাণ ও সমাজসেবামূলক কাজের পাশাপাশি কবিতা লেখা-ই ছিল তাঁর অন্যতম ধ্যানজ্ঞান। তার মৃত্যুতে সাতক্ষীরা ও কলারোয়া জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শেষবারের মাতো তাকে একনজর দেখার জন্য তার গ্রামের বাড়িতে সমবেত হন শত শত মানুষ। সোমবার সকাল ৯টায় সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে প্রথম, সকাল সাড়ে ১০টায় কলারোয়া ফুটবল ময়দানে দ্বিতীয় এবং বেলা সাড়ে ১১টায় নিজ প্রতিষ্ঠিত বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা কলেজ ময়দানে তৃতীয় দফা নামাজে জানাযার পর তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।
