এম. এ করিম মিষ্টার, নীলফামারী : নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের শতবর্ষী শিল্প-সাহিত্য সংসদের লিবার্টি সিনেমা হলটি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। সেখানে একটি অত্যাধুনিক বহুতল বিশিষ্ট শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম লিবার্টি সিনেমা হলে মাইকে বেজে ওঠা গানের সুর আর শুনা যাবে না। যে গানের আহŸানে শত শত সিনেমা পাগল দর্শক ছুটে আসতো লিবার্টি সিনেমা হলটিতে সিনেমা দেখার জন্য। জানা যায়, ব্রিটিশ ঔপনেইিশক আমলে ১৯১১ সালে সৈয়দপুর শিল্প সাহিত্য সংসদ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়। সেসময় বাঙালিরা নিজস্ব লোকজ কৃষ্টি ও সংস্কৃতি চর্চার লক্ষ্যে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
স্থানীয় প্রগতিশীল চিন্তাধারার কিছু ব্যক্তি নিজ প্রচেষ্টায় ও উদ্যোগে গড়ে তোলেন এটি। শুরুতেই এটির নাম ছিল ‘দি নিউ ইউনিয়ন মিউজিক্যাল ক্লাব’। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে নাম পরিবর্তন করে করা হয় সৈয়দপুর শিল্প সাহিত্য সংসদ। সংসদের দ্বিতল নিজস্ব কার্যালয় ছাড়াও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করার জন্য ছিল একটি বিশাল টিনশেড অডিটরিয়াম হল। সংসদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনার পাশাপাশি এ অডিটরিয়ামটি ভাড়ায় দেয়া হতো। সেখানে ভাড়া নিয়ে সিনেমা প্রদর্শন করতেন সিনেমা ব্যবসায়ীরা। নাম ছিল লিবার্টি সিনেমা হল।
বর্তমান আকাশ সংস্কৃতির কারণে বাংলা সিনেমা দর্শক মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। এ অবস্থায় ওই হলটি আর কেউ ভাড়ায় নিতে আগ্রহ দেখান না। আর সংস্কার ও মেরামতের অভাবেও টিনশেডের লিবার্টি হলটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। আসনগুলোও হয়ে পড়েছে বসার অনুপযোগি। হলের ভাড়া না পাওয়ায় শিল্প সাহিত্য সংসদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ব্যয় নির্বাহ দুরুহ হয়ে পড়ে। এ কারণে সৈয়দপুর শিল্প সাহিত্য সংসদ পরিচালনা পর্ষদ লিবার্টি হলটি বেঙ্গে সেখানে একটি বহুতল বিশিষ্ট শপিং কমপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে লিবার্টি সিনেমা হলটি ভেঙ্গে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি সাংবাদিক আমিনুল হক জানান, মুলত: সৈয়দপুর শিল্প সাহিত্য সংসদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের খরচ নির্বাহের জন্যই হলটি ভেঙ্গে সেখানে বহুতল বিশিষ্ট শপিং কমপ্লেক্স প্রথম ও ২য় তলায় মার্কেট এবং ৩য় তলায় একটি বিশাল অডিটরিয়াম নির্মাণ করা হবে। ফলে আবারও শিল্প সাহিত্য সংসদে এখানকার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে বলে তিনি জানান।
