ads

শুক্রবার , ২৫ অক্টোবর ২০১৩ | ২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

যশোরের কেশবপুরের দেড় হাজার পরিবার এখনও পানিবন্দি

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
অক্টোবর ২৫, ২০১৩ ৯:১৫ অপরাহ্ণ

Jessore_District_Map_Bangladesh_0ইয়ানুর রহমান : যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি ও বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ১৩টি গ্রামের দেড় হাজার পরিবার গত ৪ মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে আছেন। পানিতে গ্রামগুলোর ১৫টি সরকারি বেসরকারি স্কুল এবং মসজিদ ডুবে আছে। স্কুলগুলো এখন বন্ধ রয়েছে।  পর্যাপ্ত ত্রাণের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বিশুদ্ধ পানির অভাব, স্যানিটেশন ব্যবস্থা হুমকির মুখে।
গত ৪/৫ দিন ধরে প্রবাল বর্ষনের কারণে বন্যায় তলিয়ে গেছে কাঁচা বাড়িঘর। কিছু প্রভাবশালী ঘের মালিকের কারণে এখানকার বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে আছেন। এমনকি প্রভাবশালীরা গ্রামবাসীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এতে একদিকে মহিলারা ঘরে পানিবন্দি, অপরদিকে পুরুষেরা পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাছাড়া কপোতা নদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।
পানিবন্দি হয়ে থাকায় গ্রামগুলোতে কোনো ফসল আবাদ হচ্ছেনা। যারা হাঁস-মুরগির খামার করে জীবিকা নির্বাহ করত, তাদের অনেক মুরগি মারা গেছে। আবার মামলার ভয়ে পুরুষ লোক বাইরে কাজে যেতে পারছেন না। এতে অমানবিক জীবনযাপন করছেন পানিবন্দি মানুষ। বেশিরভাগ মানুষ একবেলা খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারিভাবে ত্রাণ দেবার কথা বললেও পানিবন্দি মাুনষ বলছেন, ঈদের আগে কিছু মুখ চেনা মানুষকে ভিজিএফর চাল দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বন্যার জন্য তাদের হাতে এমনকি ভিজিএফ’র চালও তারা পাননি। তারা ক্যাম্প করার আহবান জানান।
সরেজমিন ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৯ আগস্ট রাতের আধারে বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের শেখপাড়া রাস্তাটি ওই এলাকার মনা মেম্বর ও গণিসহ প্রভাবশালীরা কেটে দেয়। এরপর গত ৪ মাসেও তা বন্ধ করেনি। গ্রভাবশালীরা তাদের ঘেরের তির কারণে পানি যেতে দিচ্ছেনা। চলতি মাসের ১০ তারিখে আওয়ালগাতি, নেহালপুর, রেজাকাঠি, কাবিলপুরসহ তিগ্রস্থ গ্রামের লোকজন রাস্তাটি বন্ধ করতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদের ল্য করে বোমা নিপে করে। আবার বোমা হামলার দায় চাপিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীর নামে মামলা করেছে। যেকারণে ঘের মালিকদের আটকে দেয়া পানি, কপোতা নদের উজানের পানির চাপ ও প্রবল বর্ষণে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের শেখপাড়া, সাগরদাঁড়ি, ধর্মপুর, চিংড়া, বাঁশবাড়ীয়া, কোমরপোল, শ্রীপুর ও কাস্তা গ্রাম এবং বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের রেজাকাটি, নেহালপুর, মহাদেবপুর, আওয়ালগাতি, বগা গ্রাম প্লাবিত হয়ে দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে আছেন।
পানিবন্দি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন আতœীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। পানির চাপে কাঁচা ঘর-বাড়ি ধ্বসে পড়ছে। ঘর হারা মানুষ পাশের বাড়িসহ অন্যাত্র গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। গরু ছাগল আতœীয় স্বজনের বাড়িতে রেখে আসছেন তারা। গো-খাদ্যেরও সঙ্কট তীব্র আকার ধারন করেছে।
আওয়ারগাতি গ্রামের বৃদ্ধা আছিয়া বেগম জানান, ৪ মাস ধরে পানি বন্দি থাকলেও কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। অভাব অনটনে দিন পার করছি। একই গ্রামের শিার্থী আসাদুল ইসলাম বলেন, আসলে মানুষ সৃষ্ট বন্যার মধ্যে আমরা পড়েছি। প্রভাবশালীদের ঘের বাঁচাতে তারা আমাদের জমে থাকা পানি যেতে দিচ্ছেনা। আমার একটি মুরগির খামার ছিল খামারে পানি উঠে প্রায় শতাধিক মুরগি মারা গেছে। মধ্যপাড়া জামে মসজিদের ঈমাম হাফেজ নূর ইসলাম জানান, মসজিদের পানি উঠে যাওয়ায় মুসলি­রা নামাজ আদায় করতে পারছেন না।
রেজাকাটি গ্রামের পানিবন্দি বৃদ্ধা মরিয়ম খাতুন বলেন, তাদের বাড়িঘরে পানি উঠে আসায় রান্না করার কোন জায়গা নেয়। আব্দুল কাসেম বলেন, পানিতে আটকে থাকলেও কেউ খোঁজ নিতে আসেনি। কোন দিন এক বেলা খাবার জুটলেও অন্য বেলায় কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে। একই গ্রামের গৃহবধূ জেসমিন বলেন, ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়ায় খাটের নিচে ইট দিয়ে উঁচু করে ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোন রকমে আছি।
নেহালপুর গ্রামের আজগর আলির ভেঙে পড়া ঘরের সামনে পানি মধ্যে দাঁড়িয়ে তার স্ত্রী শরিফা খাতুন ােভ প্রকাশ করে বলেন, তাদেরকে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের শেখপুরা গ্রামের মানুষের অবস্থা আরও শোচনীয়। ওই গ্রামের মানুষের কাচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ছে। পানি বৃদ্ধির কারনে নতুন নতুন গ্রাম প্লাাবিত হচ্ছে। সাগরদাঁড়ি সড়কের শেখপুরা নামক স্থানে হাটু সমান পানি উঠে এসেছে। পানি বন্দি এলাকায় পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এলাকার মানুষের ভেতর চলছে আহাজারি।
সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের শাহাদাৎ হোসেন বলেন, তাদের ইউনিয়নের গ্রামের পর গ্রাম উজানের পানি এসে প্লাাবিত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গত ৪ মাস ধরে চলছে এ অবস্থা। ফসল হারা হয়ে এলাকার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে পংগু হয়ে পড়েছে। পানি বন্দি মানুষের মানবেতর জীবনযাপনসহ আহাজারির কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপকে জানানোর পরও এখনও কোন সাহায্য বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। রাস্তাঘাট পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা দ্রুত পানি বন্দি মানুষের জন্য ত্রাণের দাবি করেছেন।
বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান জানান, গত ২/৩ দিনের প্রবল বর্ষণের কারণে পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে ইউনিয়নের হাড়িয়াঘোপ, পরচক্রা, হিজলডাঙ্গা, বাউশলা ও ফতেপুর গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে।
অপর দিকে ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নের বরণডালি ও মির্জানগর গ্রামে পানি ঢুকে পড়তে শুরু করেছে।
কেশবপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম আমির হোসেন জানান, তিনি পানিবন্দি মানুষের মানবেতর জীবন যাপনের বিষয়টি ২য় দফা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপকে অবহিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সায়েদ মনজুর আলম বলেন, এলাকার জলাবদ্ধতার কথা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোরের জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এপর্যন্ত ১১শ’ লোককে আমরা ভিজিএফ’র চাল দিয়েছি। প্রয়োজনে আরও ত্রাণ দেয়া হবে। প্রয়োজনে পানি বন্দি লোকদের জন্য ক্যাম্প করা হবে।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!