স্টাফ রিপোর্টার : ‘সমুদয় সাধু-সাধ্বীর রাণী মারীয়া’ এ মূল সুরের উপর ভিত্তি করে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তঘেষা বারমারী সাধু লিওর খ্রীষ্টান ধর্মপল্লীতে হাজার হাজার খ্রীষ্টভক্তের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে দু’দিন ব্যাপি বাৎসরিক তীর্থোৎসব। ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার খুলনার ক্যাথলিক খ্রীষ্ট ধর্মপ্রদেশের বিশপ জেমস রমেন বৈরাগী তীর্থোৎসবের উদ্বোধনী খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করেন। এদিন দুপুর ২.৩০টায় পাপ স্বীকার, ৪.৩০টায় পবিত্র খ্রীষ্টযাগ, রাত ৮টায় আলোক শোভাযাত্রা, ১১.৩০টায় সাক্রান্তের আরাধনা ও নিশি জাগরণ অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। খ্রীষ্ট ভক্তরা নিজেদের পাপ মোচনে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোক শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহন করে প্রায় দেড় কি.মি. পাহাড়ী ক্রুশের পথ অতিক্রম শেষে মা-মারিয়ার মুর্তির সামনের বিশাল প্যান্ডেলে সমবেত হয়ে নির্মল হ্দয়ের অধিকারীনি, ঈশ্বর জননী, খ্রীষ্ট ভক্তের রাণী, স্নেহময়ী মাতা ফাতেমা রাণীর কর কমলে ভক্তি শ্রদ্বা জানানো ও তার অকৃপন সাহায্য প্রার্থনা করছে।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার সকাল ৮ টায় জীবন্ত ক্রুশের পথ ও সকাল ১০ টায় মহা খ্রীষ্টযাগের মাধ্যমে তীর্থ উৎসবের সমাপ্তি হবে। এ তীর্থোৎসবে মহা খ্রীষ্টযাগ, গীতি আলেখ্য, আলোক শোভাযাত্রা তথা আলোর মিছিল, নিশীজাগরন, নিরাময় অনুষ্ঠান, পাপ স্বীকার, জীবন্ত ক্রুশের পথসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদী হবে। এই তীর্থোৎসবের সমাপ্তি ঘোষনা করবেন ময়মনসিংহ খ্রীষ্টধর্ম প্রদেশের ধর্মপাল বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি।
তীর্থোৎসবের ব্যাপারে বারমারী ধর্মপল্লীর সাধারণ সম্পাদক মি. প্রদীপ জেংচাম বলেন, তীর্থযাত্রীদের জন্য কর্তৃপ নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। এবারে নিরাপত্তা প্রদানে পুলিশ, বিজিবি, আনসার, ভিডিপি, গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক দল সার্বক্ষনিক নিরাপত্তায় নিয়েজিত রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ১শ কি.মি. শেরপুর জেলা শহর থেকে ২৫ কি.মি. ও নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে ১৬ কি.মি. উত্তরে বাংলাদেশ-ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেষা সবুজ শ্যামলিমায় পাহাড় ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের অপুর্ব লীলাভুমি বারমারী খ্রীষ্ট ধর্মপল্লীতে ওই তীর্থ স্থানের অবস্থান। ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের ১৪ টি ধর্মপল্লীর ও সারা দেশের হাজার হাজার খ্রীষ্ট ভক্তদের প্রাণের দাবি ছিল মা মারিয়াকে ভক্তি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উপযুক্ত স্থান লাভের। আর বারমারীতে ওই স্থান পেয়ে খ্রীষ্ট ভক্তরা যেন মহা খুশি। খ্রীষ্ট ভক্তদের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালে পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর আদলে ও অনুকরনে পাহাড় ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে এ তীর্থ স্থানটি স্থাপন করা হয়। ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের তৎকালীন প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গমেজ বারমারী সাধু লিওর ধর্মপল্লীতে ফাতেমা রাণীর তীর্থ স্থান হিসেবে ঘোষনা করেন। এ তীর্থ স্থানের ২ কি.মি. পাহাড়ি টিলায় ক্রুশের পথ ও পাহাড়ের গুহায় স্থাপন করা হয়েছে মা-মারিয়ার মূর্তি। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিন ব্যাপি বার্ষিক তীর্থ উৎসব পালিত হচ্ছে। ধর্মীয় চেতনায় দেশী-বিদেশী হাজার হাজার খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের অংশ গ্রহনের মধ্য দিয়ে প্রতি বছর বার্ষিক তীর্থ উৎসব পালিত হওয়ায় বর্তমানে এটি মহাতীর্থ স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন মুল সুরের উপর ভিত্তি করে বাৎসরিক তীর্থ উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
