এস.এম আজিজুল হক, পাবনা : পঞ্চাশ দশকের অন্যতম প্রধান কবি ও বাংলা একাডেমীর পুরস্কার প্রাপ্ত প্রফেসর ওমর আলী জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। পাবনা সদর উপজেলার পদ্মানদী তীরবর্তি নিভৃত পল্লী চরআশুতোষপুর গ্রামের নিজ বাড়ীতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তিনি মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। ২০১২ সালের ২৩ মার্চ তিনি স্ট্রোকে গুরুতর অসুস্থ হন আর তখন থেকেই তিনি বাড়ীতে বিছানায় শয্যাশায়ী। অর্থ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করতে পারছেন না। জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য সহায়তা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ইতোমধ্যে দেশের অনেক বরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক তাকে দেখতে এসেছেন।
পাবনা জেলার চর শিবরামপুর গ্রামে মাতুলালয়ে ১৯৩৯ সালের ২০ অক্টোবর দরিদ্র এক মুসলিম কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কবির ওমর আলী। অনেক কষ্টে স্কুল ও কলেজ জীবন পার করেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে এমএ পাশ করেন এবং ১৯৭৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাশ করেন। এরপর বগুড়ার নন্দীগ্রাম কলেজে ইংরেজী প্রভাষক পদে যোগদানের মধ্যদিয়ে তিনি কর্মজীবনে শুরু করেন। সেখান থেকে চলে আসেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা কলেজে। এখানে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এবং পরে পাবনার সরকারী শহীদ বুলবুল কলেজসহ দেশের বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেন। সর্বশেষ ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে অধ্যাপক হিসাবে পুনরায় শহীদ বুলবুল কলেজ এসে চাকুরী জীবন শেষ করেন। তিনি স্ত্রী ৩ ছেলে ৪ মেয়ের পিতা। তার বড় ছেলে পাবনা কলেজে প্রভাষক পদে শিক্ষকতা করেন। অন্য ছেলো ছোট খাটো চাকুরি করেন।
এক সময় তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক ও সাহিত্য সাময়িকীতে নিয়মিত কবিতা লিখেছেন। তিনি ছিলেন দুই বাংলার সু-পরিচিত কবি। প্রেমের কবি হিসেবেও তার ছিল সূখ্যাতি। এ যাবত কবিতা ও উপন্যাস মিলে তাঁর ৪০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের নির্বাচিত কবিদের নিয়ে বেশ কিছু যৌথগ্রন্থেও তাঁর লেখা রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে- ‘ওমর আলীর শ্রেষ্ঠ কবিতা’। প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি অর্জন করেছেন- বাংলা একাডেমী পদক, বন্দে আলী মিয়া পদক, আলাওল পদক, আবুল মনসুর আহমেদ পদক, রাজশাহী বিভাগীয় গুণীজন সম্মাননা পদক প্রভৃতি। কাব্য সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮১ সালে ‘এদেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি লাভ করেন বাংলা একাডেমীর পুরস্কার। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমীর ফেলো সদস্য।
পঞ্চাশ দশকের অন্যতম এ কবি চিরায়িত বাংলার অপূব সৌন্দয্য আর মানুষের সুখ দু:খ নিয়ে অবিরত লিখে গেছেন। তার সহিত্য জীবনের কবি আল মাহমুদ, কবি শামসুর রাহমান, কবি হাসান হাফিজসহ সমসাময়িক অনেক লেখক ও কবি তার একান্ত বন্ধু। অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সাহিত্য সাধনা করেছেন। গত বছরের ২৩ মার্চ স্ট্রোক করে অসুস্থ হন আর তখন থেকেই তিনি বাড়ীতে বিছানায় শয্যাশায়ী। তিনি সকলকে চিনতে পারলেও ভাঙা ভাঙা দু-একটি কথা বলতে পারেন। এখন তিনি অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
