এম.এ ছালাম : পরিকল্পিতভাবে কবুতর প্রতিপালন করে সংসারে সহজেই স্বচ্ছলতা আনা সম্ভব। এসময় প্রত্যন্ত পল্লীর বাড়ি বাড়ি কবুতর দেখা যেত। এখন অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন এ লাভজনক পাখি পালন। অথচ একটু উদ্যোগী হলেই কবুতর পালন করে পরিবারের প্রোটিনের চাহিদা মেটানোসহ বাড়তি আয় করা সম্ভব। বর্তমানে বাজারে কবুতরের একজোড়া বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ১শ ৮০ থেকে ২শ টাকায়। ওইসব বাচ্চার বয়স ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ। কবুতর পালনকারীর পকেটে ওই উপার্জনের টাকা আসবে খুব স্বল্প খরচেই। কবুতররা সাধারণত উড়ে বেরিয়েই তাদের খাবার সংগ্রহ করে থাকে। প্রয়োজন শুধু এদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া। এদের থাকার ভাল ব্যবস্থা করে যে কেউ আর্থিক স্বচ্ছলতার রাস্তা তৈরী করে নিতে পারেন। কবুতরের ক্ষেত্রে কথায় আছে, বারো মাসে তেরো জোড়া। পৃথিবীতে হোয়াইট কিং, লিভার কিং, গোলা, ডাউকা, হাম, কাচ্চা, কাউরা, পক্কা ও লম্বাসহ প্রায় ২শ’ জাতের কবুতর থাকলেও এদেশে সিলেটের জালালী কবুতর অতি পরিচিত। চিত্তাকর্ষক কবুতরগুলোর মধ্যে সিরাজী, ফ্যানটেনল, লাহোরী, গিরিবাজ, লোটন ও টেম্পলার উল্লেখযোগ্য। কবুতর যে জাতেরই হোক না কেন, এটি প্রতিপালন খুবই লাভজনক। কবুতর ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। স্ত্রী কবুতর জন্মের ৫ থেকে ৬ মাস বয়স থেকে ডিম দেয়া শুরু করে। প্রতি ২৮ দিনের মাথায় এরা দুটি করে ডিম দেয়। ১৭ থেকে ২০ দিনেই ডিম থেকে বাচ্চা পাওয়া যায়। অল্প সময়ে অধিক লাভবান হতে চাইলে বেশী সংখ্যক কবুতরের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে প্রায় প্রতিদিনই বাচ্চা পাওয়া সম্ভব। প্রচুর আলো বাতাস পাওয়া যায় এরকম উঁচু স্থানে কবুতরের ঘর তৈরী করে দিতে হবে। কবুতরের থাকার জন্য পাতলা কাঠ, বাঁশ এবং হার্ডবোর্ড দিয়ে একাধিক তলা বিশিষ্ট ঘর তৈরী করা যেতে পারে। এদের জন্য তৈরী করা প্রতিটি খোপের দৈর্ঘ ৩০ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৩০ সেন্টিমিটার ও উচ্চতা ৩০ সেন্টিমিটার হবে। কবুতরের চলাচলের জন্য এসব খোপের সাথে বারান্দা থাকা জরুরী। খাবার ও পানির পাত্র ঘরের পাশেই রাখতে হবে। কবুতর গম, মটর, খেসারী, সরিষা, ভুট্ট্রা, কালাই, ধান, চাল, কাউন প্রভৃতি শস্যদানা খেয়ে থাকে। পাশাপাশি এরা কাঁচা শাক-সবজিও খায়। প্রতিটি কবুতর দিনে গড়ে ৩৫ থেকে ৬০ গ্রাম খাবার খায়। শুধুমাত্র প্রথমবার কবুতর ক্রয়, ঘর তৈরী, খাবার ও পানির পাত্র বাবদ দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচ করে প্রাপ্ত বয়স্ক ১০ জোড়া কবুতর প্রতিপালনের ব্যবস্থা করে প্রতিমাসে ৮ থেকে ৯ জোড়া বাচ্চা পাওয়া যাবে অনায়াসেই। শুরুতে মাত্র একবার খরচের পর এ বাচ্চা বিক্রি থেকে প্রতিমাসে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। এভাবে যত বেশী কবুতর প্রতিপালন করা হবে লাভের পরিমাণ ততই বৃদ্ধি পাবে। কবুতর প্রতিপালনে একদিকে যেমন অন্য পেশার পাশাপাশি ঘরে বসেই বাড়তি আয় করা সম্ভব, অন্যদিকে কবুতরের মাংসে প্রচুর প্রোটিন থাকায় প্রোটিনের চাহিদাও পূরণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
