শ্যামলবাংলা স্পোর্টস : সোহাগ গাজী, মমিনুল হকের ব্যাটিং-বোলিং নৈপূণ্যে চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র করল বাংলাদেশ। রবিবার প্রথম টেস্টের শেষ দিনে ৪৬ ওভারে ২৫৬ রানের টার্গেটে জয়ের পেছনে না ছুটে উইকেট সামলে রাখার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। শেষের দিকে দ্রুতগতিতে ব্যাট চালানো সাকিব আল হাসানের অর্ধ শতক হওয়ার পর ম্যাচের সমাপ্তি ঘোষণা করে দুই দল। ম্যাচের বাকি তখন মাত্র ৪ বল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৭৩ রান করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২১ অক্টোবর।
পঞ্চম দিনের মন্থর ও নিচু উইকেটে ৪৮ ওভারে ২৫৬ রান করা বেশ কঠিন ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য। সে চেষ্টায় যায়নিও বাংলাদেশ। যতটা সম্ভব ব্যাটিং অনুশীলনের চেষ্টা করেছেন স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। তাতেও খুব একটা সফল বলা যাবে না। প্রথম ইনিংসে ৩ রান করা এনামুল হক দ্বিতীয় ইনিংসে বাজে শট খেলে আউট হন ১৮ রানে। ৩০ ও ৪০ রানে দু’বার জীবন পাওয়া তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে আসে ৪৬ রান। ৮টি চার হাঁকালেও স্বভাবসুলভ ব্যাটিং করেননি প্রথম ইনিংসে রান না পাওয়া এই ব্যাটসম্যান। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও সেট হয়ে আউট হয়েছেন অভিষিক্ত মার্শাল আইয়ুব। ৬৫ বলে ১টি করে ছক্কা ও চারের সাহায্যে ৩১ রান করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে শতকের দেখা পাওয়া মমিনুল হককে (অপরাজিত ২২) নিয়ে দিনের বাকি সময়টুকু নিরাপদেই কাটিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ সাকিব অপরাজিত থাকেন ৫০ রানে। তবে শেষের দিকে সাকিবের মারকুটে ব্যাটিং কিছুটা আক্ষেপেও পুড়িয়েছে বাংলাদেশের সমর্থকদের। যদি তামিম-আনামুল একটু ওয়ানডে স্টাইলে খেলতেন, তাহলে হয়ত ম্যাচের ফলাফল পাল্টাতেও পারত! এতকিছু স্বত্বেও ড্রই বা কম কিসে? এর আগে মাত্র ৮ টি টেস্ট ড্র করেছে টাইগাররা। আর নিউজিল্যান্ডের সাথে মাত্র একটি।
ড্রয়ের দিকে এগুতে থাকা টেস্টের কিছুটা প্রাণ ফেরানোর কৃতিত্ব সোহাগ গাজীর। প্রথম ইনিংসে শতকের পর হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেট নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস একাই ধসিয়ে দেন এই অফস্পিনার। বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে হ্যাটট্রিসহ ৫ উইকেট ও শতক করার কৃতিত্ব দেখালেন সোহাগ। তারও ই চমকের পর ইনিংস ঘোষণা করেন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। সাকিব আল হাসানের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে শতক করা ও ৫ উইকেট পাওয়ার অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখালেন সোহাগ। ২০১১ সালে ঢাকা টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪৪ রান করার পাশাপাশি ৬ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ১ উইকেটে ১১৭ রান নিয়ে খেলা শুরু করে নিউজিল্যান্ড। কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে আগের দিনের ৬৯ রানের জুটিকে ১০১ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পর সোহাগ বিচ্ছিন্ন করেন এই জুটিকে। প্রথম ইনিংসে ৭৩ রান করা পিটার ফুলটনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে প্রথম আঘাত হানেন। প্রথম ইনিংসে শতরান করা উইলিয়ামসন দ্বিতীয় ইনিংসেও ভালই এগুচ্ছিলেন। রস টেইলরের সঙ্গে তার ৫১ রানের জুটি ভাঙ্গায় ভাগ্যেরও একটু সহায়তা পেয়েছেন সোহাগ। তার খাটো লেন্থের বল সজোরে ব্যাট চালিয়েছিলেন উইলিয়ামসন। শর্ট লেগে থাকা এনামুল হক নিজের মুখ বাঁচাতে গিয়ে ক্যাচ ধরার চেষ্টাই করতে পারেননি। কিন্তু বল এনামুলের দু’পায়ের মাঝখানে আটকে গিয়ে ক্যাচ। ৭৪ রান করে হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়েন উইলিয়ামসন। অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামের সঙ্গে রস টেইলের বিপজ্জনক হয়ে উঠা ৫০ রানের জুটিও থেমে যায় সোহাগের ঘূর্ণিতে। ৬ বলে হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট নিয়ে নিউ জিল্যান্ডকে অস্বস্তিতে ফেলেন তিনি। ৮৩ ওভারের পঞ্চম বলে বোল্ড করেন ম্যাককালামকে (২২)।
তার পরের ওভারে ফিরে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লেখান পটুয়াখালীর এই তরুণ স্পিনার। দ্বিতীয় বলে অভিষিক্ত কোরি অ্যান্ডারসনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। পরের বলে প্রথমে ইনিংসে শতক হাঁকানো ওয়াটলিং এবার কোনো রান না করেই মুশফিকের তৃতীয় প্রচেষ্টার ক্যাচে পরিণত হন। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনায় ডগ ব্রেসওয়েলকে ঘিরে ধরে মুশফিক বাহিনী। তার ব্যাটের কানায় লাগার পর মুশফিকের প্যাডে লেগে উপরে ওঠা বল ঝাঁপিয়ে পড়ে তালুবন্দী করে সোহাগকে ইতিহাসের পাতায় নিয়ে যান সাকিব। টেস্টে এটি কোনো বাংলাদেশী বোলারের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। এর আগে ২০০৩ সালে পেশোয়ারে পাকিস্তানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন অলক কাপালি।
৩ উইকেটে ২৫০ থেকে ৭ উইকেটে ২৬০ রানে পরিণত হওয়া নিউ জিল্যান্ড এরপর বেশিক্ষণ ব্যাট করেনি। ২৮৭ রান করার পর ইনিংস ঘোষণা করেন অধিনায়ক ম্যাককালাম। সে সময় টেইলর ৫৪ ও ইশ সোধি ২২ রানে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৫৬ রান। দিনের খেলা তখন হওয়ার কথা কমপক্ষে ৪৬ ওভার। ৭৭ রানে ৬ উইকেট নিয়ে সোহাগই বাংলাদেশের সেরা বোলার। অসাধারণ এক শতক ও ম্যাচে ৮ উইকেটের জন্য ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে ফয়সালাবাদে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৭টি ছক্কা হয়েছিল। এই ম্যাচে সেই রেকর্ড স্পর্শ করেছেন সাকিব, ম্যাককালামরা।
চতুর্থ দিনের শেষ ঘন্টার খেলা বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় পঞ্চম দিন নির্ধারিত সময়ের আধঘন্টা আগে সকাল ৯টায় খেলা শুরু হয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :

নিউ জিল্যান্ড: ৪৬৯ (উইলিয়ামসন ১১৪, ওয়াটলিং ১০৩, ফুলটন ৭৩, বোল্ট ৫২*; রাজ্জাক ৩/১৪৭) ও ২৮৭/৭ ডিক্লে. (ফুলটন ৫৯, রাদারফোর্ড ৩২, উইলিয়ামন ৭৪, টেইলর ৫৪*, ম্যাককালাম ২২, সোধি ২২*; সোহাগ ৬/৭৭, নাসির ১/২০)
বাংলাদেশ: ৫০১ (মমিনুল ১৮১, সোহাগ ১০১*; ব্রেসওয়েল ৩/৯৬) ও ১৭৩/৩ (তামিম ৪৬, এনামুল ১৮, মার্শাল ৩১, মমিনুল ২২*, সাকিব ৫০*; মার্টিন ২/৬২, সোধি ১/৫৭)
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সোহাগ গাজী।
