ads

সোমবার , ১৪ অক্টোবর ২০১৩ | ৩রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

ঈদুল আযহার শিক্ষা -মুহম্মদ আলতাফ হোসেন

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
অক্টোবর ১৪, ২০১৩ ৬:২৩ অপরাহ্ণ

photoবছর পরিক্রমায় ঈদুল আযহা আবার আমাদের মধ্যে ফিরে এসেছে। ঈদ অর্থ খুশি, আযহা অর্থ ত্যাগ। যার অর্থ হলো, মহাত্যাগের সফলতার খুশি। যেহেতু মহান আল্লাহর ঈমানী পরীক্ষায় তার নবী হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) মহাত্যাগের মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, এজন্যে আল্লাহর প্রতি মহাত্যাগ ও ভালবাসার সেই মহাস্মৃতিকে অম্লান রাখার জন্যেই উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর কুরবানীকে ওয়াজিব করা হয়েছে। ৮৫ বছর বয়সে হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) -এর ঘরে যেই সন্তান জন্ম নিয়েছিলেন তার নামই ছিল ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) । তার প্রায় ৬ বছর বয়সের সময় আল্লাহরাব্বুল আলামীন ইবরাহীমের ঈমান পরীক্ষার জন্যে কলিজার টুকরো ইসমাঈলকে আল্লাহর নামে কুরবানী দেয়ার নির্দেশ দিলেন। ইবরাহীম(আলাইহিস সালাম) এই নির্দেশ পাবার পর দ্বিধাহীন চিত্তে প্রিয় সন্তানকে আল্লাহর পথে কুরবানী দিতে নিয়ে চললেন। পথিমধ্যে নবী ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)  প্রিয় পুত্র ইসমাঈলের অভিপ্রায় জানার জন্যে যখন তাকে কুরবানী দান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম)  রিষ্ট চিত্তে পিতাকে জানালেন,- ইয়া আবাতিফ্ আল্ বিমা তুমার হে আব্বু! আপনি (আল্লাহর পক্ষ থেকে) যে কাজের জন্যে আদিষ্ট হয়েছেন, তা যথাযথভাবে করুন। ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)  তাতে সন্তুষ্ট হয়ে যখনই ইসমাঈলের গলে ছুরি চালাতে উদ্যোগী হলেন, তখনই আল্লাহ ইবরাহীম(আলাইহিস সালাম) কে ডেকে বললেন,- হে ইবরাহীম বিরত হও! তোমার সন্তান হত্যা আমার উদ্দেশ্য নয়। সন্তানের পরিবর্তে একটি পশু তুমি কুরবানী দাও। তুমি আমার নির্দেশকে কি পরিমাণ গুরুত্ব দাও তা পরীক্ষার জন্যেই আমি তোমাকে এই কঠিন ঈমানী পরীক্ষায় ফেলে ছিলাম। সেই পরীক্ষায় তুমি উত্তীর্ণ ও সফলকাম হয়েছো। উল্লেখ্য যে, বার্ধক্য বয়সে জন্ম নেয়া প্রিয়তম সন্তান ইসমাঈলকে আল্লাহর মহব্বতে তার নামে কুরবানী দেয়া একটি কঠিন ঈমানী পরীক্ষার কাজ ছিল। তবে এই মহাপরীক্ষার চেয়েও আরেকটি বড় পরীক্ষা হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)  কে দিতে হয়েছে। সেটি আক্ষরিক অর্থেই ছিল অগ্নিপরীক্ষা। ইরাক সম্রাট নমরূদ ছিল মূর্তি পূজারী, মুশরিক, অগ্নিপূজক। একত্ববাদী ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)  তার তীব্র বিরোধী ছিলেন। তার বিরোধিতার অভিযোগ রাজ দরবারে পৌঁছলে নমরূদ তাকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-র   ঈমানী দৃঢ়তা এতো মজবুত ছিল যে, ফিরিস্তাগণ এসে তাকে প্রস্তাব দিলেন, হে ইবরাহীম! আপনি যদি অনুমতি দেন, তাহলে আমরা নমরূদকে শাস্তি দিয়ে দেই। হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)  ফিরিস্তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বললেন, যেই সর্বশক্তিমান আল্লাহ আগুন ও তার দাহন শক্তি প্রদান করেছেন, তিনি তা প্রত্যক্ষ করছেন। আমি আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাই। তোমাদের সাহায্যের আমার কোনো প্রয়োজন নেই। তাৎক্ষণিকভাবে মহান আল্লাহ নমরূদের প্রজ্বলমান আগুনকে লক্ষ্য করে বললেন, ইয়া নারূ! কূনী বারদান ওয়া সালামান আলা ইবরাহীম! অর্থাৎ “হে আগুন, আমার (বন্ধু) ইবরাহীমের উপর শান্তিদায়কভাবেই ঠান্ডা হয়ে যাও।” আগুন তখন ঠান্ডা হয়ে যায়। তখন সেই অগ্নিকুন্ড শীতল ফুল বাগানের দৃশ্যের আকার ধারণ করে। আল্লাহতে অবিশ্বাসী নমরূদ ও তার অনুসারীরা বলে বসলো, ইবরাহীম কত বড়ই না যাদুকর। আগুনও তাকে স্পর্শ করছে না। তখন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) তাদের বললেন, যাদুর তো কোনো কার্যকারিতা নেই, তোমরা একবার অগ্নিকুন্ডে এসে তা পরীক্ষা করে দেখো। তখন আল্লাহর দুশমনদের যা হবার তাই হলো। হকের বিজয় সাধিত হলো, বাতিলপন্থীরা ধ্বংস হয়ে গেল। মোট কথা, এভাবে অগ্নিপরীক্ষা এবং বার্ধক্যে জন্ম নেয়া কলিজার টুকরো প্রিয় পুত্রের গলে আল্লাহর নির্দেশে দ্বিধাহীন চিত্তে ছুরি চালিয়ে মস্তবড় ঈমানী পরীক্ষায় ইবরাহীম (আ.) উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এভাবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ঈমানী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার জন্যেই আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মদীর উপর কেয়ামত পর্যন্ত কুরবানীকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন, যাতে প্রতিটি মুসলিম নিজের দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনকে শান্তিময় ও সফলকাম করতে পারে।

Shamol Bangla Ads

তাই আমাদের সকল কুরবানীদাতাকে আজ এই আত্মজিজ্ঞাসায় লিপ্ত হতে হবে, যেই উদ্দেশ্যে প্রতিবছর আমরা কুরবানী দিয়ে থাকি, সেই লক্ষ্য উদ্দেশ্য আমাদের কতদূর অর্জিত হচ্ছে? যদি তা না হয় তাহলে কুরবানীর যেই উদ্দেশ্য তা অর্জিত না হলে, শুধু বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় কুটুম্ব নিয়ে এর গোশতই খাওয়া হবে। তা ছাড়া আর কোনো কল্যাণে আসবে না।

কুরবানীদাতারা যাতে পশু কুরবানী দ্বারা এভাবে ব্যর্থ না হয়, এ কারণেই কুরবানীর পশুর গলে ছুরি চালাবার প্রাক্কালে পবিত্র কুরআনের এই উদ্ধৃতিটি গভীর মনোযোগ সহকারে দোয়া হিসাবে পড়তে হয় যে, ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়াইয়া ও মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন অর্থাৎ “আমার নামায, আমার ত্যাগ-কুরবানী, আমার বেঁচে থাকা ও আমার মৃত্যুবরণ তা একমাত্র বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্যেই নিবেদিত।” বলা বাহুল্য, কুরবানীর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থেকে যাতে কুরবানীদাতা বিচ্যুত না হয়, এজন্যে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ আরও সুস্পষ্ট করে ঘোষণা করেছেন যে, লাইয়া নালাল্লাহা লহমুহা ওয়ালা দে মাউহা ওলাকিন ইয়ানুলওত্তাকওয়া মিনকুম অর্থাৎ “ আল্লাহর নিকট কুরবানীর পশুর গোশত রক্ত কিছুই পৌঁছে না, বরং পৌঁছে (হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)  ও তার জীবনকে কেন্দ্র করে ঈমানী পরীক্ষামূলক যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার স্মৃতি থেকে লব্ধ) তাকওয়া, আল্লাহ ভীতিপূর্ণ সাবধানী জীবনের শিক্ষা।” মহান আল্লাহ জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন, তাকওয়ার অধিকারী মুত্তাকীদের জন্যে। (পবিত্র কুরআনে তাই বলা হয়েছে, উয়িদ্দাৎ লিল মুত্তাকীন)

Shamol Bangla Ads

অতএব যখন আমরা কুরবানীদাতারা কুরবানীর পশুর গলায় ছুরি চালাতে উদ্যত হয়ে উল্লেখিত দোয়াটি অর্থ বুঝে পাঠ করবো, তখন সকলের কর্তব্য হলো, মহাত্যাগের মহাস্মৃতি স্থাপনকারী হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) -এর গোটা সংগ্রামী জীবনের ঘটনাবলী স্মরণ করা এবং নিজেদের ঈমানী চেতনা বৃদ্ধি করে, সেই চেতনাকে সমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর দ্বীনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার কাজে লাগানো।

লেখক : সভাপতি, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, ঢাকা।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!