ইমরান হোসাইন, তানোর (রাজশাহী) : কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীর তানোর উপজেলার পশুরহাটগুলো ইতোমধ্যে জমে উঠতে শুরু করেছে। হাটে প্রচুর পরিমানে গরু আমদানি হলেও ক্রেতার তেমন দেখা নেই। একারণে গরু ব্যাপারিরা লোকসানের আশঙ্কায় পড়েছেন।
উপজেলার ৪টি কোরবানির পশুর হাটগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোরবানির হাটগুলোতে প্রথম থেকেই গতবারের চেয়ে এবারে পশুর দাম তুলনামূলক কম ছিল। তবে, গত সোমবার মুন্ডুমালা পশুর হাটে কোরবানির গরু ছাগল আমদানি অভাবনীয় ভাবে লক্ষ্য করা গেছে। ফলে, পশুর দাম তুলনামূলক অনেক হম বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
তানোরের মুন্ডুমালা, গোল্লাপাড়া, কালিগঞ্জ ও তালন্দ কোরবানির পশুরহাটে ক্রেতার তুলনায় বিক্রেতারা বেশি। একারণে বিক্রেতারা হাটে কোরবানির গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এর কারণ হিসাবে বিক্রেতারা বলছেন, গ্রামের কৃষক ও খামারিরা কোরবানি উপলক্ষে যেসব পশুগুলো রেখেছেন গ্রামের মানুষরা সেসব পোষা গরু ছাগলগুলো দরদাম করে কোরবানির জন্য নিচ্ছেন। হাটে আসার তাদের আর প্রয়োজন হচ্ছে না। একারণে কোরবানির হাটে ক্রেতার দেখা মিলছে না। যেসব ক্রেতা মিলছে তাদের চাহিদা কম থাকায় কোরবানির পশু বিক্রি কম ও দাম সহনীয় দেখা গেছে।
এনিয়ে তানোর পৌর এলাকার চাঁদপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম জানান, তার গ্রামের আশপাশের কৃষকদের গরু ক্রয় করে এখন বিক্রি করতে গিয়ে গরু প্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। তিনি দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রায় ১০টি গরু ক্রয় করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ধরা খেয়েছেন। খুবই পছন্দসই গরু ক্রয় করেও এবার ধরা খেতে হয়েছে। এরপরও লাভের আসায় আরো দেড় লাখ টাকা দিয়ে তিনটি গরু কিনেছেন। রবিবার রাজশাহী সিটির হাটে এসব গরু বিক্রি করার জন্য নেয়া হয়। ওই তিনটি গরুতে লাভ না হলে তাকে পথের ভিক্ষারী হতে হবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
এনিয়ে উপজেলার গাগরন্দ গ্রামের খোরশেদ আলম জানান, কোরবানির পশু ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ মানুষ ক্রয় করেছেন। আর মাত্র ২০ ভাগ মানুষ পশু ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঈদের আগে এউপজেলাতে আরো দুদিন হাট বসবে। এই দুটি হাটে পচুর পরিমানে গরু আমদানির আশঙ্কা রয়েছে। ক্রেতা থাকলে মুন্ডুমালা ও গোল্লাপাড়াসহ তালন্দ হাটের গরু বিক্রেতারা তাদের গরু বিক্রি করতে সক্ষম হবেন।
এনিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, এবার ভারত থেকে পচুর পরিমানে গরু আমদানি হয়েছে। একারণে এঅঞ্চলের কৃষকদের পোষা গরু কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। পশুখাদ্যের দাম বেশি হলেও তারা বেশি দামে গরু বিক্রি আসায় সহায় সম্বল বিক্রি করে হলেও নিজে না খেয়ে গরুকে খাইয়েছেন। এখন সেই কষ্টের গরু বিক্রি করতে গিয়ে লোকসান গুনছেন তারা। একারণে আগামী বছরে অনেকেই বাড়িতে গরু-ছাগল পুষতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ ওই পশু বিক্রি করে এবার লাভবান হওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
উপজেলার সর্ববৃহৎ মুন্ডুমালা পশুহাটের ইজারাদার আওয়ামীলীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ ও গোলাম মোস্তফা জানান, তাদের কোরবানির হাট গত সোমবার থেকে পুরোদমে চালু হয়েছে। গত হাটে ব্যাপক পরিমানে গরু আমদানি হলেও কেনা-বেচা তেমন ভালো হয়নি। বেশির ভাগ বিক্রেতারা হাট থেকে গরু ও ছাগল ফেরৎ নিয়ে গেছেন।
এদিকে, ঈদ উপলক্ষে তানোর পৌর এলাকার গোল্লাপাড়া, কালিগঞ্জ ও তালন্দ হাটে আলাদাভাবে পশুর হাট বসে। এরমেধ্য গত শুক্রবার গোল্লাপাড়া ও কালিগঞ্জে এবং রোবরারে তালন্দ হাটে পশুর হাট বসতে দেখা গেছে। তবে, এসব হাটে এবার তুলনামূলক ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা কমে গরুর দাম ক্রেতারা দাম হাকিয়েছে। একারণে তেমন বেচা-কেনা লক্ষ্য করা যায় নি। কিন্তু শেষদিকে এসব হাটে পশুর দাম বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ক্রেতা ও বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের আর মাত্র দু’দিন বাকি। ক্রেতারা সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানির পশু কেনার জন্য বিভিন্ন হাটে আসছেন। বিক্রেতারাও কাক্সিক্ষত দাম পাওয়ার আশায় পশু নিয়ে ছুটছেন বিভিন্ন হাটে। ফলে, পশুর হাটগুলো এখন বেশ জমে উঠেছে। কিন্তু হাটে আমদানিকৃত গরু ও ছাগল সিংহভাগই কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা জানায়, কোরবানির পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য হাটে সরকারি ভাবে ডাক্তার ও লোক থাকার প্রয়োজন। কিন্তু হাটগুলোতে কোরবানির পশুর রোগ পরীক্ষার জন্য স্থানীয় প্রাণী সম্পদ বিভাগের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
এনিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম বলেছেন, তাদের জনবল কম হওয়ায় হাটে হাটে গরু স্বাস্থ্য পরিক্ষা ক্যাম্প স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। জনবল পাওয়া গেলে আগামী বছরে কোরবানির হাটে গরু স্বাস্থ্য ক্যাম্প স্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।