শ্য্মালবাংলা ডেস্ক : ‘সমসাময়িক কালের ছোট গল্প লেখার গুরু’ খ্যাত কানাডার স্বনামধন্য লেখিকা এলিস মনরো এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন। আর এর মধ্য দিয়ে একজন সেরা লেখিকার সেরা সম্মান না পাওয়ার দীর্ঘ প্রায় দুই যুগের সমালোচনার সমাপ্তি ঘটল। এতদিন প্রতিবছর নোবেল পুরস্কারের সময় খুব গুরুত্বের সঙ্গেই আলোচিত হয়ে আসছিল এ লেখিকার নাম। এ বছর তার পুরস্কারপ্রাপ্তি সাহিত্যমোদী মহলে জাগিয়েছে উল্লাসের জোয়ার। নোবেল কমিটিকে এবার তাই হতে হয়নি প্রশ্নবিদ্ধ।
বহুল আলোচিত এ ছোট গল্পের লেখিকার বয়স ৮২ বছর হলেও তার রচনা তারুণ্য ও যৌবনের ঝলসানী জানান দেয়। তাঁর গল্পের যাদু দিয়ে পাঠককে তিনি অতুলনীয়ভাবে আচ্ছন্ন করে রাখায় তাকে তুলনা করা হয় ‘আন্তন চেখভ’র সাথে। তার গল্পগুলো প্রধানত: ছোট ছোট শহরের মানুষের জীবন এবং সামাজিক পরিবেশে মানিয়ে চলা বা গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে তাদের অস্তিত্বের সঙ্কট, সমস্যা, দ্বন্দ্ব, সম্পর্কের টানাপোড়েন, এক প্রজন্মের সঙ্গে আরেক প্রজন্মের জীবনাদর্শের পার্থক্য ও সাংঘর্ষিক চিত্র নিয়েই আবর্তিত হয়। তিনি সেইসব গল্পে মনস্তাত্ত্বিক চেতনার স্ফূরণ ঘটান অতিসূক্ষ্মভাবে। তাছাড়া তিনি যেভাবে দৈনন্দিন জীবনের বর্ণনার মধ্যে পারিপার্শ্বিক জীবনের ঘটনাগুলোকে অতি দক্ষতার সঙ্গে চিত্রায়িত করে যে চূড়ান্ত বার্তাটিকে তুলে ধরেন তা এক কথায় অনবদ্যরূপে হয়ে ওঠে উদ্ভাসিত।

এলিস মনরোর জীবনী : বর্তমানে ওন্টারিও’র দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় ছোট শহর ক্লিনটনে বসবাস করলেও ১৯৩১ সালের ১০ জুলাই কানাডার ওন্টারিও প্রদেশের উইংসে জন্মগ্রহণ করেন এলিস মনরো। ক্লিনটনেই কেটেছে এলিস মনরোর শিশুকাল। মা পেশায় শিক্ষক হলেও তার বাবা ছিলেন একজন কৃষক। এলিস মনরো হাইস্কুলে শিক্ষা শেষ করার পর সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। এরপর ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন ওনটারিওতে ইংরেজী বিষয়ে পড়াশুনা করার সময় ১৯৫১ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি এবং এখান থেকেই সমাপ্তি ঘটে তার পড়াশুনার। এরপর স্বামীর সাথে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভিক্টোরিয়াতে গড়ে তোলেন স্থায়ী নিবাস এবং সেখানেই দু’জন মিলে চালু করেন একটি বইয়ের দোকান।
এলিস মনরোর প্রথম প্রকাশনা ১৯৬৮ সালে বের হলেও কিশোর বয়সেই তার লেখালেখিতে হাতেখড়ি। প্রথম প্রকাশনাটি ছিল ‘ড্যান্স অফ দা হ্যাপি শেডস’ নামের একটি গল্প সংগ্রহের বই। এটা দিয়েই তিনি কানাডার পাঠকের নজরে পড়েন ব্যাপকভাবে। তবে ১৯৫০ সালের শুরুর দিক থেকেই তিনি তার গল্প বিভিন্ন ম্যাগাজিনে প্রকাশ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ‘লাইভস অফ গার্লস’ নামে বের করেন একটি গল্প সংগ্রহের বই, যা সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয় বিশেষভাবে।
এলিস মনরো মূলত ছোট গল্পকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং তার বিভিন্ন গল্পের সমাহার নিয়ে গত বছরগুলোতে তিনি প্রকাশ করেছেন ‘হুডু ইউ থিংক ইউ আর (১৯৭৮) দা মুনস্্ অফ জুপিটার (১৯৮২), ‘রানএওয়ে (২০০৪) ‘দা ভিউ ফ্রম ক্যাসল, রক (২০০৬) এবং টু মাচ হ্যাপিনেস (২০০৯)।’ তার গল্পসমগ্র নিয়ে রচিত ‘হেটশিপ, ফ্রেন্ডশিপ, কোটশিপ এবং ম্যারেজ (২০০১) নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘এ্যাওয়ে ফ্রম হার’ নামের ফিল্ম ২০০৬ সালে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন সারাহ পলি। ২০১২ সালে তার বেশিরভাগ গল্প সংগ্রহ নিয়ে ‘ডিয়ার লাইফ’ নামে সর্বশেষ বইটি বেরিয়েছে। তার গল্পগ্রন্থ এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে ফরাসী, সুইডিশ, স্প্যানিশ ও জার্মানসহ মোট ৪টি ভাষায়।
ইংরেজীতে প্রকাশিত তার গল্পগ্রন্থগুলো হলো, ড্যান্স অব দা হ্যাপি শেডস (১৯৬৮), লাইভ অফ গার্লস এ্যান্ড উইমেন (১৯৭১), সামথিং আই হ্যাভ বিন মিনিং টু টেল ইউ-(১৯৭৪), হু ডু ইউ থিংক ইউ আর, দা বেগার মেইড (১৯৭৯), দা মুন্্স অফ জুপিটার (১৯৮২), দা প্রগ্রেস অফ লাভ (১৯৮৬), ফ্রেন্ড অফ মাই ইয়ুথ (১৯৯০), ওপেন সিক্রেট্্স (১৯৯৪)
দা লাভ অফ এ গুড উইমেন (১৯৯৮), কুইনি: এ স্টোরি (১৯৯৯), হেটশিপ, ফ্রেন্ডশিপ, কোর্টশিপ, লাভশিপ, ম্যারেজ স্টোরিজ (২০০১), রানএ্যাওয়ে (২০০৪), দা ভিউ ফ্রম ক্যাসল রক (২০০৬), এ্যাওয়ে ফ্রম হার (২০০৭), টু মাচ হ্যাপিনেস (২০০৭), ডিয়ার লাইফ (২০১২)।
