দেলোয়ার হোসেন, জামালপুর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ আবারো সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদের আস্তানায় পরিণত হবে। আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বিদেশে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করে, আর বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের সম্মান ক্ষুণœ হয়। হত্যা ও খুনের রাজনীতির মধ্য দিয়ে বিএনপির জন্ম হয়েছিল। তারা সন্ত্রাস, দুর্নীতি আর দু:শাসন ছাড়া মানুষকে কিছুই দিতে পারেনি। বিএনপি ক্ষমতায় থেকে হত্যা, গুম, খুন, লুট করে রেকর্ড গড়েছিল। বিএনপি’র সময় দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বের কাছে জাতিকে ছোট করে। খালেদা জিয়ার দু’ছেলে বিদেশে অর্থ পাচার করে। বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। দেশে আবার সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদে পরিনত হবে। ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভা মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় ভাষণকালে তিনি ওইসব কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে আগামীতে আবারও ক্ষমতায় আসতে চাই। তাই সমাজে শান্তি ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে এবং ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে আপনারা আওয়ামী লীগকে আবারও ভোট দিন।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত-শিবির-হেফাজতের ক্যাডাররা কোরআন শরীফ পুড়িয়ে ইসলামের অবমাননা করেছে। মুসলমান কখনও পবিত্র কোরআন পুড়িয়ে দেয় না। মসজিদে অগ্নিসংযোগ ও বোমা মেরে মানুষ খুন করে না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এটা কোন ধরনের ইসলামের হেফাজত। আসলে এদের কাছে ধর্মকর্ম বলতে কিছু নেই। বাংলাদেশে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্টান সম্প্রতির সাথে বসবাস করছেন। এখানে জঙ্গিবাদের স্থান নেই।
তিনি সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, স্বাস্থ্যসেবা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা ১৫ হাজার ৫শ’ কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করেছিলাম। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা আবার ক্লিনিকগুলো চালু করেছি এবং স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছি। মানুষ বিনামূল্যে ওষুধ পাচ্ছেন। দেশের সব মানুষের ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে বই দেয়া হচ্ছে। সবাই পড়ালেখা করার সুযোগ পেয়েছে। সরকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। ছেলেমেয়েরা ল্যাপটপ কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারছে। সরকার তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। চাকরি দেয়া হয়েছে ৯০ লাখ বেকার যুবককে। বেকার যুবকরা কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে নিজ চেষ্টায় কর্মসংস্থান করছে। সাড়ে ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারিদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে আমরা বড় জেলাগুলোতে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আবারও নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন আগামীতে আবার ক্ষমতায় আসলে জামালপুরে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হবে। এ ছাড়াও সভাস্থলে হার্ট অ্যাটাকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আহসান হাবিব টিটুর মৃত্যুতে তিনি শোক প্রকাশ করেন।
ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউল হক জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত লাখো মানুষের ওই জনসভায় জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় সংসদের হুইপ মির্জা আজম, জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনের সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খাঁন দুলাল, জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ি) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি বেগম তহুরা আলী, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুকুল চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহম্মেদ চৌধুরী, সংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম রেজনু, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আলহাজ শাহজাহান আলী মন্ডল, স্থানীয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল বারী মন্ডল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, বকশিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয় প্রমুখ।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯১ সালে ইসলামপুরের বেনুয়ারচর আসলেও ইসলামপুর উপজেলা সদরে এটিই তাঁর প্রথম সফর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুর ৪টা ১০ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে ইসলামপুরের স্থানীয় সওদাগর রাইস মিল অবতরণ করেন। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করেন। এরপর তিনি বিকেল ৪টা ৫৩ মিনিটে জনসভা মঞ্চে ওঠেন এবং প্রায় ২৫ মিনিট বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধান অতিথির বক্তব্য শুরু হওয়ার আগেই জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে দুপুর ১২টা থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে নারী-পুরুষ ঢাকঢোল পিটিয়ে নেচে-গেয়ে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে ছুটে আসে জনসভাস্থল ইসলামপুর পৌরসভা মাঠে। ট্রাকে-বাসে-ট্রেনে-হেঁটে তারা ছুটে আসেন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনার জন্য। লাখো মানুষের ঢলে কানায় কানায় পূর্ণ হয় জনসভাস্থল। তাদের চোখে-মুখে ছিল আনন্দের ঝিলিক। এ সফর যেন সুন্দর, সুষ্ঠু হয় এমন প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে আসেন ভক্তরা। দেশকে রাজাকারমুক্ত করে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বিপুলসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা যোগ দেন জনসভায়। তাদের দাবি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত শেষ করতে হবে।

বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন : প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে জামালপুর সদরে ১০ কোটি ৭৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১২শ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৪ দশমিক ৮৪৩ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল ফায়ার্ড পাওয়ার প্ল্যান্টের ১টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর, সরিষাবাড়ী উপজেলার ১৭ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার ৮শ ১০ টাকা ব্যয়ে ৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১ কোটি ৯১ লাখ ৯৭ হাজার ১শ’৯১ টাকার ১টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর, মেলান্দহ উপজেলার ১২ কোটি ৫৯ লাখ ১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ২৬ কোটি ১২ লাখ ৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ২টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর, মাদারগঞ্জ উপজেলার ১৯ কোটি ৭৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৯ কোটি ৮৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকার ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর, বকশিগঞ্জ উপজেলার ১৫০ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ১ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর, ইসলামপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের উপর ১শ’ ৪ কোটি ৪১ লাখ ৪১ হাজার ৭শ’ ৩৮ টাকা নির্মাণ ব্যয়ে ৫শ’ ৬০ মিটার দীর্ঘ ২টি ব্রিজ, ২৫কোটি টাকা ব্যয়ে ইসলামপুর এ্যাষ্টাবলিশমেন্ট অব হেলথ্ টেকনোলজিসহ মোট ২শ’ ২৯ কোটি ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭শ’ ৫৭ টাকা ব্যয়ে ৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থরসহ ২১টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকুলে মোট ৪শ’৯ কোটি ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৯শ’৪৮ টাকার ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন এবং ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকুলে মোট ৬০ কোটি ৭৪ লাখ ৮৬ হাজার ৮শ’১০ টাকার কাজের উদ্বোধন করেন।
