এমএ ছালাম, মহাদেবপুর (নওগাঁ) : হাসানপুর; যে গ্রামের মানুষের ঘূম ভাঙ্গে রকমারী পাখির কিচির-মিচির শব্দে। নওগাঁর মহাদেবপুরের ওই গ্রাম সারাবছরই রং-বেরংয়ের নানান পাখির কোলাহলে থাকে মুখর। বিভিন্ন স্থানে পাখিদের নির্ভয়ে চলাফেরা করা যেখানে কঠিন, সেখানে পাখিদের কিচির-মিচিরে মেতে থাকা পুরো একটি গ্রাম দেখে যে কেউ বিস্মিত ও আনন্দিত না হয়ে পারেনা। এরকম দৃশ্য সচরাচর কল্পনা করা না গেলেও ওই গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতারা একতাবদ্ধ হয়ে পুরো গ্রামকেই পরিণত করেছেন পাখিদের অভয়ারণ্যে। কি শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, বসন্ত ও শরৎ, সব সময়ই পাখিদের কলকাকলীতে মুখর এ অভয়ারণ্য গ্রামে বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই ছুটে আসেন নানান পাখি দর্শনে। যে কারণে ওই গ্রামটি নতুন পরিচিতি পেয়েছে পাখিগ্রাম হিসেবে।
হাসানপুরের লোকজন জানান, শিকারীদের কাল থাবা থেকে এ গ্রামের পাখিরা শতভাগ নিরাপদ। কোন পাখি শিকারীই ওই গ্রামে প্রবেশ করার সাহস পায় না। কেউ সাহস দেখাতে গেলে গ্রামবসীর বাধা ও শাস্তির মুখে পড়তে হবে। ২০ বছরেরও অধিক সময় ধরে এ গ্রামের বিভিন্ন গাছ-গাছালীতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসবাস করে আসছে। সে কারণে গ্রামটি আশপাশে পাখিগ্রাম হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। এ গ্রামের আকাশে সব সময়ই দেখা যায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি ওড়ার দৃশ্য। এ গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে রাস্তার দুই পাশের গাছে গাছে ঝুলে রাখা বিভিন্ন সাইন বোর্ড। এসব সাইন বোর্ডে লেখা আছে সচেতনতামূলক নানান উপদেশ। এসবের মধ্যে রয়েছে পাখি শিকার করবেন না, ‘পাখি মারবেন না, ওরাও আমাদের মতো বাঁচতে চায়, পাখি এ সমাজের পরম বন্ধু ইত্যাদি। এ গ্রামের বাসিন্দা দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় সোনালী সংসদের সভাপতি ইউনুসার রহমান হেবজুল জানান, শীতকালে হাজার হাজার অতিথি পাখি আসে এ অভয়ারণ্যে। স্থানীয় পাখিদের সাথে অতিথি পাখিরা যোগ হয়ে ঘুরে বেড়ায় নির্বিঘেœ। পাখির ডাকেই ঘুম ভাঙ্গে এলাকাবাসীর। পাখি প্রেমের অনন্য নজিরও তৈরি করছে স্থানীয় সোনালী সংসদ। পাখি রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা প্রদানসহ নানান সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে সোনালী সংসদ। পাখি গ্রামের বিভিন্ন গাছে গাছে হাজার হাজার পাখির বাস। বিভিন্ন প্রজাতির বক, পানকৌড়ি, শামুকখোল, রাতচোরা, ঘুঘু, ডাহুক, শালিক, বাবুই ইত্যাদি। পাখিগুলো প্রজনন শেষে বাচ্চা ফুটিয়ে বড় করে তুলছে ওই গ্রামের গাছপালায়। যেন একেক পাখির একেক পরিবার গড়ে তুলেছে ডালে ডালে। ওই গ্রামের যেসব গাছপালা এবং বাঁশঝাড়ে পাখিরা বসবাস করে সেসব গাছপালা ও বাঁশ ঝাঁড় যতœসহ সংরক্ষণ করে রেখেছেন স্ব-স্ব মালিকরা। ওই গ্রামের কয়েকজন বৃদ্ধ জানান, পাখিগ্রামের মানুষ যেন সন্তানের মত আগলে রেখেছেন পাখিগুলোকে। গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতারা যেন পাখিগুলোর সাথে গভীর ভাব জমিয়েছেন। ঝড়-বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক কোনো দূর্যোগে পাখি অথবা তাদের বাচ্চারা মাটিতে পড়ে গেলে গ্রামের যে কেউ দেখামাত্র যতœ সহকারে পাখিদের তুলে দেন নীড়ে।
