মো. সাইফুল ইসলাম, ধামইরহাট, (নওগাঁ) : স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪২ বছর পরও পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়া স্বাধীনতাকামী মানুষদের গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো আজও অবহেলিত-অরক্ষিত। সেগুলো সংরক্ষণে নেই কারও মাথাব্যথা। এভাবে চলতে থাকলে আস্তে আস্তে একদিন হয়তো নিশ্চিহ্নই হয়ে যাবে ওই গণকবরগুলো।
নওগাঁ জেলা সদর থেকে ৫৬ কি.মি দুরে বাংলা ভারতের কোল ঘেষে ধামইরহাট উপজেলার অবস্থান। স্বাধীনতা যুদ্ধে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পাক বাহিনী, রাজাকার আর আলবদর বাহিনীর গণ নির্যাতন ও নিরীহ মানুষ হত্যার ফলে গ্রামবাসী দলে দলে প্রাণভয়ে ধামইরহাট উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। উপরন্তু ওই পথ দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন এসে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। তাই পাক-হানাদার বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীকে দেশে ঢুকতে না দিতে এবং দেশ থেকে ভারতে আশ্রয় ঠেকাতে এ উপজেলা ফার্শিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও জমিদার বাড়ী পরিত্যাক্ত অংশে সেনা ক্যান্টনমেন্ট গড়ে তোলে ৭১ এর ২৬ শে মার্চের শেষ দিকে। হানাদার বাহিনীর সাথে এ দেশীয় রাজাকার, আল বদর বাহিনী যোগ দিয়ে ব্যাপক নির্যাতন অগ্নিসংযোগ, নারীর ইজ্জত হরণসহ গণহত্যা চালিয়ে যায়। যদিও এ উপজেলা হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় ১৯৭১ এর ১৩ ই ডিসেম্বর। কিন্তু তাদের নির্মম অত্যাচার এবং মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে নিরিহ গ্রামবাসীদের ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে। অনেকের পরিচয় না পাওয়ায় প্রধান সড়কের ধারে এবং ক্যান্টনমেন্ট এর আশ পাশে বহু লাশ শিয়াল কুকুরের পেটে যায়। উটকো গন্ধ ঐ এলাকার আশ পাশের বাতাস বিষাক্ত করে তুলেছিল সে সময়। এসব হত্যার নজির ফার্শিপাড়া গ্রামের দক্ষিণ ধারে দু’টি এবং উত্তরে বেশ কয়টি গণকবর রয়েছে। অন্যদিক উপজেলার সীমান্তবর্তী কুলফৎপুর গ্রামের ১৪ জনকে একই দিনে কুলফৎপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়। ওই নির্মম ও বর্বরচিত হত্যার পর তাদের লাশ যত্র তত্র পড়ে থাকলেও গ্রামবাসীর ভয়ভীতিতে লাশগুলোকে জড়ো করে কোন মতে মাটিচাপা দেয়। অন্যদিকে এ উপজেলারই পাগলা দেওয়ান মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় এ উপজেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমির স্মৃতি চিহ্ন আজও মুছে যায়নি। গণ কবর ও বধ্যভূমিগুলো আজ গোচারনে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ৪২ বছরে এগুলো স্মৃতি ধরে রাখার কোন পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি সরকারীভাবে। খোজ নেয়া হয়নি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের নিহত মানুষগুলোর অসহায় পরিবারগুলোর হাল-হকিকত। যদি এসব গণকবর বড় বড় শহরে রচিত হত, তাহলে হয়ত হৈ হট্টগোল পড়ে যেত প্রচার মাধ্যমগুলোর মাঝে। কিন্তু গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব হত্যাকান্ডের কে কার খোজ রাখে? তাই নিরবে নিভৃতে গণকবর ও বধ্যভূমিগুলির স্মৃতি চিহ্ন দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি এসব বধ্যভূমি ও গণকবরগুলি সংরক্ষনে সরকারী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
