এম লুৎফর রহমান, নরসিংদী : ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পুজা। এ উপলক্ষে নরসিংদী শহরসহ জেলার ৬ টি উপজেলায় ব্যাপকভাবে উৎসবের প্রস্তুতি চলছে।
সংঘাত-সংকুল পৃথিবীতে অসুর শক্তির উন্মক্ততা পদচারনায় সমস্ত গগন আজ সুসজ্জিত। এমনই ক্ষণে বর্ষার মেঘ মধুর আমেজ পেড়িয়ে শরতের শিউলি ঝরানো শিশির ভেজানো শুভ্র হিন্দোলে, শুভলগ্নে দিনহীন সমস্ত সন্তানদের আকুল আহবানে আর্বিভূত হচ্ছেন মহাশক্তি দশভূজা মহামায়া দুর্গতিনাশিনী দুর্গা গোটা মানবকুলের মঙ্গল কামনায় অসুরশক্তির বিনাশের প্রত্যয়ে শ্বশরালয় থেকে প্রিতালয়ে ১০ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত জগৎ জননী, কল্যাণময়ী মহামায়া, শ্রীশ্রী দুর্গা দেবী আবির্ভূত হবেন।
আর এ শারদীয় দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে প্রতিমা তৈরীর কাজে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। বেশিরভাগ মৃৎশিল্পী এখন প্রতিমা তৈরী শেষে প্রতিমার গায়ে রং করার কাজে ব্যস্ত। প্রতিমা তৈরীর কারখানায় গেলে দেখা যায় মৃৎশিল্পীরা এখন দিন-রাত কাজ করছে।
নামকরা কয়েকটি মন্দিরের কর্মকর্তারা জানান, তারা দেশী শিল্পীদের পাশাপাশি বিদেশী শিল্পীদের এনে প্রতিমা তৈরীর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পুজা মন্ডপগুলোকে আকর্ষনীয় করে তুলতে অত্যাধুনিক গেইট, লাইটসহ যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে।
১০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী। দুর্গাদেবীর ষষ্ঠীবিহিত পূজা, দেবীর বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাস। ১১ অক্টোবর মহা-সপ্তমী। দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমী বিহিত পূজা প্রশস্ত্ম। ১২ অক্টোবর মহা-অষ্টমী। দুর্গাদেবীর মহাষ্টমী বিহিত পূজা প্রশস্ত, সন্ধিপূজারম্ভ, বলিদান। ১৩ অক্টোবর মহা-নবমী বিহিত পূজা প্রশস্ত এবং ১৪ অক্টোবর বিজয়া দশমী। শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজা সমাপনান্ত্মে বিসর্জন প্রশস্ত। এবছর দেবীর দোলায় আগমন, গজে গমন। ফল হলো শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা।
নরসিংদী শহরের ঐতিহ্যবাহী সেবাসংঘ দুর্গা মন্দির, বাগবিতান ক্লাব, শিববাগ দুর্গা মন্দির, নরসিংদী ক্রীড়া চক্র, অগ্রণী সংঘ, যুবক সংঘসহ শহরের ২৪টি পুজা মন্ডপে প্রতিমা শিল্পীরা দিনরাত প্রতিমা তৈরীর কাজে ব্যস্ত রয়েছে। এছাড়া মাধবদীর কাশিপুর দুর্গা মন্দির, পলাশের বরাব শ্রী শ্রী কানাইলাল জিউর মন্দিরে প্রতিমা ও মন্ডপ তৈরীর কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। এবছর নরসিংদী জেলায় মোট ২৯৬ টি পূজামন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় ৮১ টি, পলাশ উপজেলায় ৪১ টি, শিবপুর উপজেলায় ৬৫ টি, বেলাব উপজেলায় ২২ টি, মনোহরদী উপজেলায় ৩৭ টি ও রায়পুরা উপজেলায় ৫০ টি মন্ডপ রয়েছে। এদিকে, দুর্গাপূজায় নরসিংদী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ করা হয়েছে। এ চাল সমানভাবে সকল পূজা মন্ডপে বিতরণ করা হবে।
শারদীয় দুর্গা পুজা উপলক্ষে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ইতোমধ্যে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় জেলা প্রশাসক মো. ওবায়দুল আজম বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজায় জেলায় সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে এবং পূজামন্ডপগুলোতে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সভায়র্ যাব, পুলিশ ও আনসার ও ভিডিপির কর্র্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন শনিবার তার সম্মেলন কক্ষে পুজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন মসজিদের ঈমাম, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এক সভার আয়োজন করে। সভায় দুর্গা পুজা এবং পবিত্র ঈদুল আযহা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি জানান, জেলার সকল পুজামন্ডপগুলোর নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
পুলিশ ওর্ যাবের কর্মকর্তারা জানান, ১০ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর বিজয়া দশমী পর্যন্ত পূজা মন্ডপগুলোতে আইন শৃংখলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হবে। এছাড়াও স্টাইকিং ফোর্স, ভ্রাম্যমান আদালতও পূজার দিনগুলোতে পুজা মন্ডপসহ সর্বত্র তৎপর থাকবে। নরসিংদী পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল ইতোমধ্যে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ, উপজেলা পুজা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও শহর পুজা কমিটির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে শারদীয় দুর্গা পুজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে সকল প্রদক্ষেপ গ্রহন করেছেন।
