মো. সুজন রানা, নন্দীগ্রাম (বগুড়া) : সময়ের ঘূর্ণাবর্তে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে এখন আর ঢেঁকির চিহ্ন খুজে পাওয়া যায় না। শোনা যায় না ঢেঁকির ঢেঁকুর ঢেঁকুর শব্দ। অথচ ১৫/২০বছর আগেও গ্রাম অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ঢেঁকি ছিল। ছিল ঢেঁকি ঘর।
শবেই-বরাত, ঈদ, পূজা পার্বণসহ নতুন ধান ঘরে উঠার আগেই গ্রাম্য বধুরা ঢেঁকি মেরামতে ব্যস্ত হয়ে পরতেন। ঢেঁকি ঘর লেপে মুছে প্রস্তুত করে রাখতেন তারা। ঘরে ঘরে চিড়ে কোটা, চাল ও চালের গুড়া করার প্রস্তুতি চলতো। বাড়িতে আত্নীয় স্বজন এলে শীত মৌসুমে পিঠা তৈরীর ধুম পড়ে যেত। গ্রামের বধূরা ভিড় জমাতেন ঢেঁকি ঘরে। এমন এক সময় ছিল যখন ঢেঁকি গৃহস্থলির নিত্য প্রয়োজনীয় সমগ্রীর মধ্যে অন্যতম উপকরণ ছিল। এটি ছিল গৃহস্থ বাড়ির একটি গুরুত্ব পূর্ণ উপকরণ। গৃহিণীরা ঢেঁকিতে ধান ভেঙ্গে চাল তৈরী করতেন। ভোর থেকে সারাদিন পর্যন্ত পালাক্রমে চলতো তাদের ধান ভাঙ্গা ও চালের গুড়া করার কাজ। ওইসব কাজে গৃহিণীদের সহযোগিতা করতেন গ্রামের নারী শ্রমিকরা। বিনিময়ে তারা পেতেন কিছু চাল, দু’এক বেলা খাবার। ঢেঁকির ঢেঁকুর ঢুঁকুর মিষ্টি মধুর শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মনের সুখে গুনগুনিয়ে গাইতেন গীত। পসরা সাজিয়ে বসতো পানের আড্ডা। এখন আধুনিকতার যান্ত্রিক যুগে ঢেঁকির সঙ্গেই হারিয়ে গেছে গ্রাম্য বধুদের মনের আনন্দে গীত গাওয়া ও পান খাওয়ার আড্ডা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, নন্দীগ্রাম সদরসহ রনবাঘ মথুরাপুর গ্রামে সাইফুলের বাড়ীতে ৩ নং ভাটরা ইউনিয়নের কোলদীঘি গ্রামে আহাদ আলী, ৪ নং ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে আনছার আলী সহ নন্দীগ্রাম উপজেলায় ৪/৫ টি পরিবার সৌখিনতার বশে অতি যত্নে এখনও রেখে দিয়েছে ঢেঁকি। মাসে অথবা বছরে পিঠা তৈরির কাজে ব্যবহার করছেন ঢেঁকি। ৪ নং ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে আনসার আলীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান মুলত: ৭০ দশকের পর ইঞ্জিন চালিত ধান ভাঙ্গা কল আমদানির থেকেই ঢেঁকিতে ধান ভানা, চিড়ে কুটা, চাউলের গুড়া তৈরিসহ ঢেঁকির ব্যবহার কমতে থাকে। ক্রমান্বয়ে ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি বিলুপ্তপ্রায়। ফলে গ্রামের মানুষ ভুলে গেছেন ঢেঁকি ছাটা চালের স্বাদ। যান্ত্রিক সভ্যতা গ্রাস করেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঢেঁকি শিল্পকে।