হাফিজার রহমান আদমদীঘি (বগুড়া) : স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কলহ-নির্যাতন, পিতা-মাতার সাথে অভিমান, বাল্যবিবাহ, দারিদ্রতা ও প্রেমঘটিত বিষয়ে আত্মহত্যা করতে প্ররোচনাসহ নানাবিধ কারণে বগুড়ার আদমদীঘিতে আত্মহত্যার প্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ১শ ৬২ জন নারী ও পুরুষ গলায় ফাঁস ও বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এর মধ্যে ২১ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, আত্মহত্যার চেষ্টা ও আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে প্ররোচনা বা বাধ্য করা কারীদের আইনগত অপরাধ। ওইসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে কখনও কখনও থানাপুলিশকে বাদী হয়ে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। কিন্তু বেশী ভাগ ক্ষেত্রে আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগ না পাওয়ায় যথাযথ রেকর্ড সংরক্ষণও সম্ভব হয়ে উঠেনা। এতে থানায় এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও নেয়া যায় না বলে থানার অস্বাভাবিক মামলা রেকর্ড সংরক্ষনকারি কর্মকর্তা এসআই আব্দুল আজিজ জানান।
আদমদীঘি থানা ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারীতে ৯ জন বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এদের মধ্যে আদমদীঘির মুরাদপুর গ্রামের আব্দুস ছাত্তার (৪৫) মারা যায়। ফেব্র“য়ারীতে ১১ জন আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় এর মধ্যে দক্ষিন গনিপুর গ্রামের কাজলী বেগম (২২). উজ্জলতার রাজিয়া বেগম (২০) ও কুন্দগ্রামের হাসান আলী (১৫) মারা যায়। মার্চে ১৩ জন আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় এর মধ্যে সালগ্রামের ইনতু নাহার (২০), হাউসপুর গ্রামের শান্তনা বিবি (২২) ও পুশিন্দা গ্রামের শ্রী মতি রুপসী রানী (২৩) মারা যায়। এপ্রিলে ১১ জন বিষ ও গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় এর মধ্যে কুসুম্বী গ্রামের জাকির হোসেন বাবু (২৪). ডহরপুর গ্রামের সপ্না বিবি (২০) ও জিনইর গ্রামের ছামেনা বিবি (২১) মারা যায়। মে মাসে ৯ জন আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় এর মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে করজবাড়ী গ্রামের তানজিলা বেগম (১৯) মারা যায়। জুনে ১৪ জন বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় এর মধ্যে হলুদঘর গ্রামের রুমা বেগম (২৬) মারা যায়, জুলাইয়ে ৮ জন আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় এর মধ্যে চাটখইর গ্রামের রবিউল ইসলাম (২২), সান্তাহার ইয়ার্ড কলোনীর বেগম (৪০), কায়েতপাড়ার মোছেদা বেগম (৬৫), ভাটহালী গ্রামের সুমন চন্দ্র (২৫) ও দক্ষিন লক্ষীপুর গ্রামের নুরুন্নবী (৭০) মারা যায়। আগষ্টে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় ১৫ জন এর মধ্যে মারা যায় চোট আখিড়াগ্রামের মুন্নি খাতুন (১৪) ও সুদিন গ্রামের মাসুদ (১১) মারা যায় এবং সেপ্টেম্বরে ১৫ জন বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে মারা যায় বিনাহালী গ্রামের আনোয়ারা বেগম (২৮) ও তেতুলিয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন (৪১)। ওইসব অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় থানায় পৃথক ইউডি মামলা হয়েছে। আত্মহত্যা ও আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিধান থাকলেও প্রয়োগ করা হচ্ছেনা। ফলে উপজেলায় গত বছরের তুলনায় এবার গলায় দড়ির ফাঁস ও বিষপানের আত্মহত্যার চেষ্টা ও মৃত্যুর প্রবনতা বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
