স্টাফ রিপোর্টার : শ্যামলবাংলা সম্পাদক, বিশিষ্ট সাংবাদিক, আইনজীবী ও রাজনীতিক রফিকুল ইসলাম আধারের ৪৩তম জন্মদিন পালিত হয়েছে ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার। ১৯৭০ সনের এই দিনে তিনি শেরপুর পৌর শহরের মীরগঞ্জ মহল্লার নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
বহুতর প্রতিভার অধিকারী রফিকুল ইসলাম আধারের ৪৩তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে শ্যামলবাংলা পরিবারের আয়োজনে সোমবার সন্ধ্যায় শেরপুর কার্যালয়ে কেক কাটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সহকর্মী, মানবাধিকার কর্মী ও সুধীজন পরিবেষ্টিত অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে নিজের জন্মদিনের কেক কাটেন রফিকুল ইসলাম আধার।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট একেএম মোছাদ্দেক ফেরদৌসী, জেলা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত পিপি এডভোকেট ইমাম হোসেন ঠান্ডু, সিনিয়র সাংবাদিক ও আইনজীবী আব্দুর রহিম বাদল, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য, সাংবাদিক সংগঠক হাকিম বাবুল, জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবুল মানসুর স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট শাহীদুল্লাহ শাহী এপিপি, শ্যামলবাংলার নির্বাহী সম্পাদক শাহ আলম বাবুল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এডভোকেট ফারহানা পারভীন মুন্নী ও এডভোকেট আলমগীর কিবরিয়া কামরুল, বার্তা সম্পাদক মোহাম্মদ জুবায়ের রহমান, চীফ রিপোর্টার রেদওয়ানুল হক আবীর, স্টাফ রিপোর্টার জুবাইদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের সভাপতি এডভোকেট আরিফুর রহমান সুমন, সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মুন্না, এডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র রায় এপিপি, এডভোকেট তাপস কুমার সিংহ রায়, এডভোকেট আশরাফুল আলম লিচু, এডভোকেট মঞ্জুরুল হাসান শাহীন, এডভোকেট রুকনোজ্জামান রোকন, এডভোকেট খোরশেদ আলম, এডভোকেট আব্দুল মমিন, এডভোকেট রওশন কবীর আলমগীর, ক্রীড়া সংগঠক আল আমিন আলিম, প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম রুবেল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রঞ্জিত কুমার সিংহ রায় প্রমুখ। এসময় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট একেএম মোছাদ্দেক ফেরদৌসী, জেলা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত পিপি এডভোকেট ইমাম হোসেন ঠান্ডু, সিনিয়র সাংবাদিক ও আইনজীবী আব্দুর রহিম বাদল ও শ্যামলবাংলার নির্বাহী সম্পাদক শাহ আলম বাবুল তাদের সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্যে রফিকুল ইসলাম আধারের সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বলেন, তিনি স্বল্প সময়ে সাংবাদিকতা, আইন পেশা, রাজনীতি আর সমাজসেবায় একজন প্রতিশ্র“তিশীল পরিচিত ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন। ওইসব কর্মকান্ডে তার বেঁচে থাকা মানেই স্ব-স্ব অঙ্গণসহ অনেকেরই কিছু পাওয়া।

উল্লেখ্য, রফিকুল ইসলাম আধার শিক্ষাজীবন থেকেই সাহিত্য-সাংবাদিকতা ও রাজনীতির সাথে জড়িত। ১৯৮৮ সনে সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় তার হাতেখড়ি। এসময়ে তার প্রথম চারণক্ষেত্র ছিল শেরপুর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক শেরপুর। এরপর সাপ্তাহিক দশকাহনীয়া ও ময়মনসিংহের দৈনিক আজকের বাংলাদেশ। ২০০০ সনে শেরপুর জেলা বারে সদস্যভুক্তির মধ্য দিয়ে আইন পেশায় যোগদান করলেও সাংবাদিকতার নেশা ও রাজনীতি চর্চাকে জীবন থেকে মুছে ফেলতে পারেননি তিনি।
সাংবাদিকতা ঃ ‘সাপ্তাহিক শেরপুর’ এর স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে তার সাংবাদিকতা শুরু। এরপর ‘সাপ্তাহিক দশকাহনীয়া’র স্টাফ রিপোর্টার ও পরবর্তীতে ১৯৯৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত প্রায় ১২ বছর নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি স্বল্প সময়ে দৈনিক তথ্যধারার প্রধান বার্তা সম্পাদক ছিলেন। এর মাঝেও তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক লালসবুজ, দৈনিক মাতৃভূমি পত্রিকায় কাজ করেছেন দীর্ঘ সময়। বর্তমানে তিনি জাতীয় ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ ও ‘বাংলাদেশ বেতার’ এর শেরপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। চলতি বছরের ৩১ জুলাই থেকে তার সম্পাদনা-প্রকাশনায় অনলাইন নিউজ পোর্টাল শ্যামলবাংলা২৪ডটকম প্রকাশিত হচ্ছে। মফস্বল সাংবাদিকতার বাইরেও তিনি সমকালীন বিভিন্ন প্রসঙ্গ/নিবন্ধ লিখনে সিদ্ধহস্ত। সাম্প্রতিককালে তার লেখা বিশেষ নিবন্ধ ‘২০তম রাষ্ট্রপতির প্রতি প্রত্যাশা : জীবনের ষোলকলা পূর্ণ হোক জাতির ক্রান্তিকাল উত্তরণে’, স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরীর দায়িত্বভার গ্রহণ প্রসঙ্গে ‘নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রযাত্রা’ এবং ‘রাজনীতিতে চুলতত্বের বাহাস : আর নয় চুলোচুলি, কুলাকুলিতে হোক সমাধান’ বেশ আলোচিত ও পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে।
সাহিত্য ঃ স্কুলজীবন থেকেই তিনি সাহিত্য চর্চার সাথে জড়িত। তার লেখা প্রচুর কবিতা, ছোটগল্প ও মিনি উপন্যাস স্থানীয় ও জাতীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তার অপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘বাংলাদেশের চোখে ঘুম নেই’ এবং গল্পগ্রন্থ ‘মাঝখানে নদী’। পেশাগত জীবনে দারুণ ব্যস্ততায় ইদানিং সাহিত্যাঙ্গনের সাথে খুব একটা জড়িত না থাকলেও সাহিত্য জড়িয়ে আছে তার জীবনের সাথে। সাহিত্য বিষয়ক বিভিন্ন আলোচনা ও কবিতা পাঠের আসরে এখনও তার দেদীপ্যমান উপস্থিতি লক্ষণীয়। তিনি অধূনা বিলুপ্ত শেরপুর সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া জাতীয় কবিতা পরিষদসহ বিভিন্ন সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে একসময় ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তার দরাজ কণ্ঠের আবৃত্তি কেবল মঞ্চ নয়, দর্শক-শ্রোতাকেও নাড়িয়ে তোলে। তিনি নবগঠিত শেরপুর নজরুল পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক ঃ তিনি এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ মাঠ, ব্যবসায়ী সমিতি ও ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নিবিড়ভাবে জড়িত। কোন কোনটার প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। শেরপুরের অন্যতম ক্রীড়া সংগঠন অনির্বাণ তরুণ সংঘ (অতস) এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি তিনি। তিনি জেলা সংযুক্ত শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, জেলা ট্রলিচালক-শ্রমিক সমিতি, জেলা রাজমিস্ত্রী-শ্রমজীবী সমবায় সমিতি, জেলা রাইস মিল মিস্ত্রী শ্রমিক ইউনিয়ন, জেলা ব্রিক ফিল্ড সর্দার সমিতিসহ অন্তত: ১০/১২টি পেশাজীবী সংগঠনের উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন। এলাকাসহ বিভিন্ন অবহেলিত-দারিদ্রপীড়িত আর কন্যাদায়গ্রস্তসহ বিভিন্ন আর্তমানবতার ক্ষেত্রে তার সহযোগিতার হাত কোনোক্রমেই খাটো নয়।
শিক্ষানুরাগী ঃ তিনি ডাঃ সেকান্দর আলী মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির মেম্বার, উত্তরা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক ও বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি, আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট ও এইম আইডিয়াল একাডেমির চেয়ারম্যান।
রাজনীতি ঃ তিনি ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত রাজনীতির সাথে জড়িত। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের সদর উপজেলা শাখার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ অবস্থায় তিনি শহরের ওয়ার্ড বিভক্তির পর ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হলে তিনি কৃষক লীগ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে জেলা কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ দায়িত্বে থেকে তিনি জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ৯৬ সরকার পূর্ববর্তী অসহযোগ আন্দোলনে তিনি একটি হযরানীমূলক মামলায় জড়িত হয়ে কারাভোগ করেন।
আইন পেশা ঃ ২০০০ সনে আইন পেশায় যোগ দিয়েই তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ৩ দফা নির্বাহী সদস্য, ৩ দফা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, একবার অডিটর, একবার সহ-সভাপতি হওয়াসহ ২০১২ সনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৩ সনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে পূন: অংশ নিয়ে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি। এরপরেও প্রচন্ড সাহসী মনের মানুষ হিসেবে কোন জড়তায় না ভোগে এখনও আইনজীবীদের মাঝেই বিচরণ করছেন তিনি।
পারিবারিক ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝেও এই মানুষটির জীবন কাটে নানাবিধ কর্মকান্ডে প্রচন্ড ব্যস্ততায়। যেন যন্ত্রচালিতের মতই তার জীবন।
