শাহ আলম বাবুল : আর দশটি মৃত্যূর সাথে এ মৃত্যূর কোন অমিল না থাকলেও এক বুক হতাশা আর আফসোস নিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি কেউই।
ফুলমালা (১৪) নবম শ্রেনীর ছাত্রী । দশ মাস আগে জেডিসি পরীক্ষার সময় মারা যায় তার মা। ৬ বছরের ছোট বোন আর এইচএসসি পড়–য়া বড় ভাইকে নিয়ে মূর্খ দিনমজুর বাবার সংসারে দু:খে-কষ্টে দিনাতিপাত করছিল মেধাবী এই ছাত্রী। সংসারের সকল কাজকর্ম সেরে মনোযোগ দিত পড়াশুনায়। অর্ধবার্ষিক পরীক্ষাতেও ছিল তার কৃতিত্ব। ছোট বোনটিকে বুকে নিয়ে মা’হারা এতিম এই কিশোরী স্বপ্ন দেখতো একজন ভাল ছাত্রী হওয়ার, একদিন অভাবী বাবার সংসারের হাল ধরার। বিধাতা সইল না সে সূখ-স্বপ্ন। একমাস আগে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে নেয়া হয় শেরপুর সদর হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । রোগ নির্ণয়ের জন্য সহায়তা নেয়া হয় আরো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কিন্তু বিধি বাম। কোন কিছুতেই কিছু হলো না।
ফিরিয়ে আনা হলো বাড়িতে । সকলের আফসোস আর কান্নায় সেও জেনে গেল আর কয়েকদিন পরই সে চির দিনের মতো চলে যাচ্ছে মায়ার বন্ধন ছেড়ে না ফেরার দেশে। মৃত্যূকে জেনেই প্রতিটি সময় কাটাতো কখন আসছে সেই সময়। অবশেষে ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে সেই নির্ধারিত সময ঘনিয়ে এলো। ফুলমালা পাড়ি জমাল তার স্থায়ী গন্তব্যে। মৃত্যূর কয়েক মিনিট আগে সে সবার কাছে আকুতি জানিয়েছিল তাকে ক্লাশে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শারীরিক দূর্বলতায় ক্লাশে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তার পরও বার বার একই কথা বলছিল কখন ছুটি হবে ? স্যারেরা আসছে না কেন ? স্যারেরা আসবে তার সাথে দেখা করবে আর তার পর গাড়ী সে চলে যাবে। হলোও তাই ছুটির ঘন্টা পড়ল, ছাত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি জেনে সকল স্যারেরা গেলেন তাকে এক নজর দেখতে। তাকে দেখলেন, কথা হলো, তার পর…তারপর আস্তে আস্তে আল¬াহ আল¬াহ বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ল ফুলমালা চিরদিনের মতো। ( ঘটনাটি শেরপুর সদর উপজেলার যোগিনীমুরা গ্রামের। ফুলমালা যোগিনীমুরা ফসিহ উল উলুম দাখিল মাদরাসার ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী)
