শ্যামলবাংলা ডেস্ক : মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। ৬ নম্বর অভিযোগ হযরত আলী লস্কর হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ওই রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। এছাড়া ট্রাইব্যুনালে খালাস পাওয়া অপর মামলায় যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই সর্বোচ্চ আদালতে নিরাপত্তা জোরদারে অতিরিক্ত পুৃলিশ ও র্যাব সদস্য সুপ্রিম কোর্ট ও আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয়।
২২ জুলাই শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন আপিল বিভাগ। ওইদিন শুনানির ৪০তম কার্যদিবসে ৭ এমিকাস কিউরির বক্তব্য শেষে সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন ডিফেন্সের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক।
৭ এমিকাস কিউরির মধ্যে ৫ জনই আপিলে দু’পক্ষের সমানাধিকারের সুযোগ রেখে আনীত সংশোধনী আবদুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে মতামত দেন। অন্য ২ এমিকাস কিউরি মনে করেন, এটি তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এমিকাস কিউরিরা ৬ কার্যদিবস মতামত দিয়েছেন। এমিকাস কিউরিদের মধ্যে যে ে জন সংশোধিত আইন আবদুল কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে মত দিয়েছেন তারা হচ্ছেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ও ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। অন্য ২ এমিকাস কিউরি টিএইচ খান ও এএফ হাসান আরিফ মনে করেন, এটি প্রযোজ্য হবে না। ওই মামলার আপিল শুনানি ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ২০ জুন পর্যন্ত ৩২ কার্যদিবসে আপিলের শুনানি চলে। প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষ ও পরে আসামি পক্ষের করা আপিলের শুনানি হয়।
উল্লেখ্য, ৫ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন । ৬টি অভিযোগের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল তাকে ৫টি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে দুটিতে যাবজ্জীবন ও ৩টিতে ১৫ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন। একটি অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি উল্লেখ করে ওই অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দণ্ডাদেশ না দেওয়ায় ও একটি অপরাধের অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়ায় সাজা বাড়ানোর লক্ষ্যে ওই রায়ের বিরুদ্ধে ৩ মার্চ আপিল করে প্রসিকিউশন। আপিলে ওই ৫টি অভিযোগে দেওয়া সাজা অপর্যাপ্ত দাবি করে এবং খালাসের আদেশ বাতিল চেয়ে সর্বোচ্চ দন্ড ফাঁসির আরজি জানানো হয়। অন্যদিকে ওইসব অভিযোগ থেকে খালাসের আবেদন জানিয়ে ৪ মার্চ আপিল করেন আবদুল কাদের মোল্লা।
প্রসঙ্গত:, ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস সংশোধন) বিল-২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়। সংশোধিত আইনে রায়ের বিরুদ্ধে উভয়পক্ষের আপিল করার বিধান রাখা হয়। যা আগে শুধু আসামিপক্ষের সুযোগ ছিল।
