জিয়াউর রহমান জিয়া, রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) : ব্রহ্মপুত্র নদে হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে নদের তীরবর্তি ও নিমাঞ্চল ডুবে গেছে। গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যে কোনো সময় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। পানি বৃদ্ধি আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
জানা যায়, অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বেড়ে যাওয়ার কারনে রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে রাজীবপুরে ২০ ও রৌমারীতে ১০টি গ্রাম বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। রৌমারী উপজেলার পিআইও (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) সাখাওয়াত হোসেন জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নদী ভাঙ্গনও দেখা দিয়েছে। রাজীবপুরের কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, তার এলাকায় নদী ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে। গত ৭ দিনের ব্যবধানে বল্লভপাড়া, তেররশিপাড়া ও খাড়–ভাঁজ নামক ৩ টি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। এখন ভাঙ্গছে সাজাই কারিগড়পাড়া, শংকর মাদবপুর, উত্তর কোদালকাটি নামের আরও ৩ টি গ্রাম।
এদিকে অসময়ে বন্যা দেখা দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে সদ্য লাগানো রোপা আমনের। কৃষি অফিস সূত্রের তথ্যমতে, সংশ্লিষ্ট দু’উপজেলায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর রোপা আমন ডুবে গেছে। রাজীবপুর উপজেলার ২৩৫৭ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে ১৫১৫ হেক্টর এখন পানির নিচে। পানি দ্রুত না নামলে ওইসব জমির ধান সম্পূর্ন ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পানি বাড়ছে আর একের পর এক রোপা আমন ক্ষেত ডুবছে। রাজীবপুরের করাতি পাড়া গ্রামের কৃষক ছবর আলী বলেন, ধারদেনা কইরা দুই বিঘা জমিত আমন গাড়ছিলাম। এমনতি পাট আবাদ কইরা লোকসান খাইছি। এহন পানিতে ধান খাইয়া গেলে মরন ছাড়া কোনো উপায় থাকব না। ছবর আলীর মতো ওই এলাকার সব কৃষকের একই পরিনতি দেখা গেছে। কেঁচোমারী চরের কৃষক ছলেমান মিয়া বলেন, সবেমাত্র ধান গাড়লাম আর বন্যার পানি আইল। এহন কী অইবো। আমার তো সব শ্যাষ। ওই চরের কৃষক নুরুন্নবী, আলী আকবর, আরফান আলী জানান, এই চরে প্রায় একশ একর রোপা আমন ডুবে গেছে। মানুষের বাড়িঘরেও পানি ঢুকছে। কৃষকরা জানান, হঠাৎ এ বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতি হবে রোপা আমনের।
