আলমগীর কিবরিয়া কামরুল, শেরপুর : অঞ্জলী ; কোন চঞ্চলা কিশোরী বা যুবতী নয়, কাজল মাখা ডাগর কালো চোখও তার নেই। বয়সী যুবক তো নয়ই, সমাজ-সভ্যতা কারও দৃষ্টিও কাড়েনা অঞ্জলী। কেবল নামেই তিনি চমকতোলা। হ্যাঁ, যে অঞ্জলীর কথা বলছি তিনি বয়সের ভারে ন্যুব্জ-নিশ্চল শতবর্ষী প্রতিবন্ধী ভিখারিণী অঞ্জলী। কি নিদারুণ কষ্টে তার জীবন চলে, তা যেন দেখার কেউ নেই আমাদের ব্যস্ত সমাজে। যে কারণেই হয়তো আজও তার ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক ভাতা বা প্রতিবন্ধী ভাতা।
শেরপুর পৌরসভার শেখহাটি মহল্লার এই অঞ্জলী নি:সন্তান। স্বামীও মারা গেছেন দীর্ঘদিন হলো। ভিটেমাটি নেই মোটেও। ছোটবেলায় দুর্ঘটনায় পুরো ডান হাতটিই হারিয়েছেন তিনি। সবকিছু হারানোর পর ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিয়েই কোনোমতে ঘুরেফিরে চলছিল তার জীবন। একপর্যায়ে মানবতার স্বার্থে তাকে আশ্রয় দেয় শহরের নারায়ণপুর মহল্লার জনৈক চইম বেপারী। এখান থেকেই কাক ডাকা ভোরে ভিক্ষাবৃত্তির জন্য পায়ে হেঁটে শহরের দু’চার জায়গায় ঘুরে ফিরে চলছে তার কষ্টের জীবন। কিন্তু বয়সের ভারে ন্যুব্জ অঞ্জলী এখন খুব একটা হাঁটাচলা করতে পারেন না। কিছুক্ষণ হাঁটতেই হাঁপিয়ে উঠেন তিনি। আধঘন্টা হাঁটলে যেন একঘন্টাই কোন বাড়িতে বা পথের ধারে বসে জিরিয়ে নিতে হয় হাফ ছাড়তে।
এমনি এক অবস্থায় ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে শেরপুর শহরের কালিরবাজার (বটতলা) এলাকায় রাস্তার পাশে বসে থাকতেই এই প্রতিনিধির সাথে দেখা হয় অঞ্জলীর। ওই অবস্থায় সামান্য ঘুরেফিরে ভিক্ষের চাল বা পয়সাও খুব একটা মেলে না তার। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে কষ্টের জীবনে অনেক সময় এক কাপড়েই চলতে হয় তাকে। এরপরও একবেলা-আধবেলা খেয়ে, না খেয়ে দিন কাটে তার।
দৃষ্টিশক্তি লোপসহ নানা রোগে-শোকে মৃতপ্রায় অঞ্জলী জীবনযুদ্ধে এভাবে আর কতটা সময়ই বা চলতে পারবেন? সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকারের কোন সুযোগ সুবিধাই বা তার ভাগ্যে জুটবে না কেন? অবয়সীকে বয়স্ক বানিয়ে, সন্তানহীনা যুবতী গৃহবধূকে প্রসূতি দেখিয়ে আর নাদুসনুদুস কথিত অনেক দু:স্থকেইতো সরকারী-বেসরকারী সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার নাগরিক হলেও কেন পড়বে না অঞ্জলীর প্রতি জনপ্রতিনিধির দৃষ্টি? কেনই বা পড়েনা অঞ্জলীর প্রতি আর্তমানবতার দৃষ্টি? দায়বদ্ধতার সমীকরণে সরকারী বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের বাইরে আমরাও কি স্ব-স্ব অবস্থান থেকে অঞ্জলীর প্রতি একটু সহানুভূতি দেখাতে পারি না?

