পাবনা প্রতিনিধি : দেশের প্রধান শিম উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত পাবনার ঈশ্বরদীতে (শিমের আগাম জাত) রূপভান ও অটোর ফুল ও ফলে ভরে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠ। ঈশ্বরদীর মূলাডুলির যেদিকে তাকানো যায় শুধুই শিম চাষের সমারোহ চোখে পড়ে। শিমের ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মূলাডুলিতে এক অন্যরকম পরিবেশ বিরাজ করছে। কোন কোন কৃষকের আগাম লাগানো ‘রূপভান’ ও অটো শিম ইতিমধ্যে বাজারে বিক্রিও শুরু হয়েছে। খরচের তুলনায় দাম একটু বেশি পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। তাই কৃষকরা এখন রূপভান ও অটো শিমের মরা ফুল বাছাই ও ফুল রক্ষার কাজে মহাব্যস্ত। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে ঈশ্বরদীর মূলাডুলিসহ পার্শ্ববর্তী প্রায় ২৫ গ্রামের মানুষ এখন শিমের ক্ষেতে ফুল ফলের পরিচর্যার কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। শীতকালীন সব্জি হলেও ঈশ্বরদীর শিম চাষীরা এবার আগে-ভাগেই রূপভান ও অটো নামের নতুন জাতের শিম আবাদ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। প্রায় এক মাস হলো অনেক চাষী তাদের আগাম লাগানো ‘রূপভান’ জাতের শিম বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। দামও পেয়েছেন তুলনামূলক ভালো। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভাল হওয়ায় ঈশ্বরদীর প্রায় ২ হাজার ১ ’শ শিম চাষী এখন তাদের নিজ জমি ও খাজনা করা জমিতে রূপভান ও অটো জাতের শিম পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এখন মূলাডুলির যেদিকে তাকানো যায় শুধুই রূপভান ও অটো জাতের শিম চাষের প্রস্তুতি ও মাচার উপর শিম ফুলের মহা-সমারোহের চিত্রই চোখে পড়ে।
শুক্রবার সকালে ঈশ্বরদীর মূলাডুলির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব চিত্র পাওয়া গেছে। শিম চাষকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর মূলাডুলিতে গড়ে উঠেছে বিশাল বাজার ও সমিতি। এই বাজার থেকেই উৎপাদিত শিম প্রতিদিন ট্রাকে লোড হয়ে পৌছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। পুরোপুরি না হলেও এখন গড়ে প্রায় দুই ট্রাক করে শিম ঈশ্বরদী থেকে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। উৎপাদনের তুলনায় দাম ভাল হওয়ায় প্রায় তিনগুন দামে বিক্রি হচ্ছে এই শিম। আড়াৎদাররা জানান, মৌসুম না হলেও শিম বাজারে আসায় প্রতি কেজি শিম প্রায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই রুপভান ও অটো জাতের শিম পুরোপুরি বাজারে উঠবে বলে জানান মূলাডুলি এলাকার শিম চাষীরা।
ঈশ্বরদীতে এবার চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৩’শ ৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তবে এই পরিমান আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন তারা। কৃষি বিভাগ আরও জানিয়েছে, গত মৌসুমে ঈশ্বরদীতে ১ হাজার ২’শ ৪৫ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছিল। ঈশ্বরদীর মূলাডুলি ছাড়াও ফরিদপুর, আটঘরিয়া, শেখপাড়া, রামনাথপুর, রাজাপুর, হাজারী পাড়া, পারখিদিরপুর, দুবলাচারা, পতিরাজপুর, গোপালপুর, মাঝগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ এখন শিম চাষের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। এ এলাকার ৯৫ ভাগ জমিতে শিম চাষ হওয়ার কারনে মূলাডুলিতে গড়ে উঠেছে দেশের শিম বিপননের প্রধান কেন্দ্র। শিম উৎপাদনের সময় এই মূলাডুলি থেকেই প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ ট্রাক শিম ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হয়। ক্রেতা-বিক্রেতার পদ ভারে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মুখোরিত থাকে মূলাডুলির শিম বাজার। প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার শিম এই বাজার থেকে বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন সমিতির নেতা ও সফল শিম চাষী আমিনুর রহমান (শিম বাবু)। শিম রক্ষনাবেক্ষনের জন্য ঈশ্বরদীর শিম চাষীরা একটি মাল্টিপারপাস কোল্ডষ্টোরেজ নির্মানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খুরশি আলম জানান, গত বছর শিম মৌসুমে ঈশ্বরদীতে ১ হাজার ২’শ ৪৫ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছিল। কৃষকরা এখন রূপভান ও অটো জাতের নতুন এই দুই ধরনের শিম চাষে ব্যস্ত রয়েছে। এদিকে দেশীয় জাতের শিম চাষের জন্য কৃষকরা এখন পুরোদমে মাঁচা তৈরি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষি বিভাগ কৃষকদের সার্বিক সহযোগীতা করছে বলেও তিনি জানান।
