শ্যামলবাংলা ডেস্ক : চির বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দে, ২৭ আগস্ট ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল) তিনি নি:শব্দে ইহকাল ত্যাগ করেন।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার পরিবার ও রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কবির সমাধির পাশে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কবির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে দিবসটি। সকালের সূর্যোদয়ের পর থেকে গোটা জাতি আজ তাকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করছে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিসৌধে জানানো হয় ফুলেল শ্রদ্ধা।
এদিকে ৩৭তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে কবিকে নিবেদন করে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। রকমারি আয়োজনে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল এবং বেতার কেন্দ্রগুলোতে স্মরণ করা হচ্ছে চিরবিদ্রোহী কবিকে। অনলাইন ও প্রিন্ট মিযিয়াগুলোতেও গুরুত্বসহকারে ছাপা হয় বিশেষ ক্রোড়পত্র।
অন্যদিকে জাতীয় কবির প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার থেকে ৩ দিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে নজরুল ইনস্টিটিউট। মঙ্গলবার জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে বসবে সমাপনী আয়োজন। এতে থাকছে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অধিবেশন শুরু হবে বেলা ১১টায়। বিকেল ৪টায় শুরু হবে দ্বিতীয় অধিবেশন। ওই অনুষ্ঠানে একক কণ্ঠে নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন সংগীত শিল্পী খালিদ হোসেন, শাহীন সামাদ, ফেরদৌস আরা, খায়রুল আনাম শাকিল, সালাউদ্দিন আহমেদ, ইয়াকুব আলী খান, ইয়াসমীন মুশতারী ও খিলখিল কাজী। কবিতা আবৃত্তি করবেন মাহিদুল ইসলাম ও ঝর্ণা সরকার। দলীয় সংগীত ও দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করবে নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণার্থী শিল্পীবৃন্দ।

বিদ্রোহী কবি, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, সংগীতজ্ঞ, সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক, যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকার সাথে প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত কাজী নজরুল ইসলাম ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ, ২৪ মে ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম দুখু মিয়া। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত লাভ করলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, গায়ক, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, তৎকালীন একমাত্র মুসলিম চলচ্চিত্রকার ও অভিনেতা। বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে তিনি বাংলা সংগীত জগতকে মর্যাদার আসনে সু-প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার অন্যতম উৎস।
নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক, তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে আজও। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখাবে।
বাংলা সাহিত্যে তার অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তনে তাকে এই উপাধি প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
অন্যদিকে যথেষ্ট চিকিৎসা সত্ত্বেও নজরুলের স্বাস্থ্যের বিশেষ কোনো উন্নতি হয়নি। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে কবির সবচেয়ে ছোট ছেলে এবং বিখ্যাত গিটার বাদক কাজী অনিরুদ্ধ মারা যান। এদিকে ১৯৭৬ সালে নজরুলের স্বাস্থ্যেরও অবনতি হতে শুরু করে। কবি জীবনের দেহাবসান ঘটার আগ পর্যন্ত তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ আগস্ট ১২ ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হন।
