স্টাফ রিপোর্টার : মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা শেরপুরে বাড়ছেতো, কমছে না। ঈদুল ফিতরের এক সপ্তাহের মধ্যে শুধুমাত্র শেরপুর শহর থেকেই ৩টি মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে, আর এক বছরে খোয়া গেছে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দারোগা, পুলিশ, সাংবাদিকসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তির মোটরসাইকেল। ওইসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে শেরপুর সদর আসনের এমপির বাড়ীর গ্রীল কেটে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাও। ওইসব বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর কোন প্রতিকার করতে পারছে না। ফলে দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে চোরের দল। পক্ষান্তরে আতঙ্ক বাড়ছে মোটরসাইকেল মালিক ও মোটরসাইকেল চালকদের।
পুলিশ, স্থানীয় ও ভূক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের এক সপ্তাহে শেরপুর শহরের তেরাবাজার, মুন্সিবাজার ও সদর হাসপাতাল এলাকা থেকে ৩টি মোটর সাইকেল চুরি হয়েছে। সর্বশেষ, ঈদুল ফিতরের পরদিন শনিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক হারুনুর রশিদের নতুন কেনা ‘বাজাজ ডিসকোভার-১২৫’ মোটরসাইকেলটি চুরি হয়। ঈদের ২দিন আগে মুন্সিবাজারে নিজ দোকানের সামনে থেকে এক ব্যবসায়ী সার্জেন্ট (অব:) এমএ মমিনের মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। এর দু’দিন আগে সদর হাসপাতাল থেকে চুরি হয় জনৈক আসাদুজ্জামানের মোটরসাইকেল। এরই কয়েকদিনআগে হাসপাতালের সামনে থেকে সদ্য শশুরবাড়ী থেকে পাওয়া জেবিন নামক এক নতুন জামাইয়ের মোটরসাইকেল চুরি করে নেয় চোররা। ওই একই সপ্তাহে শহরের সজবরখিলা থেকে আলমাছ নামে এক রাজমিস্ত্রী ও খোয়াড়পাড় এলাকা থেকে একজনের মোটরসাইকেল চুরির চেষ্টা করা হয়। গাড়ির মালিক ও আশেপাশের লোকজন মুহূর্তেই দেখতে পাওয়ায় রক্ষা পায় গাড়ি দুটি। এর কয়েকমাস আগে শ্রীবরদী থানার সেকেন্ড অফিসার এস.আই বাদল এর একটি মোটরসাইকেল চুরি হয়ে গেছে। প্রায় একই সময়ে শেরপুর পুলিশ লাইনের পুলিশ অফিসের সম্মুখ থেকে কনেষ্টবল শাহীনের মোটরসাইকেলটি মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে চুরি হয়ে যায়।
এছাড়া দিন-দুপুরে বিপনী বিতানের সম্মূখ, ব্যাংক-অফিসের সম্মূখ থেকে পার্ক করা মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে হর হামেশাই। তাছাড়া রাতের বেলা ঘরের গ্রীল কেটে এমনকি বারান্দার দেয়াল ভেঙ্গে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে খোদ শেরপুর শহরেই। এমনই এক ঘটনায় শেরপুর সদর আসনের এমপি আতিউর রমান আতিকের তারাকান্দি গ্রামের বাড়ীর গ্রীল কেটে একটি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। শহরের মাধবপুর, সিংপাড়া ও সজবরখিলা থেকে গ্রীল কেটে চুরি হয় অন্তত: ৩টি মোটরসাইকেল। ওই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের অন্তত: ৪টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে। শুধুমাত্র শেরপুর সদর হাসপাতাল এলাকা থেকেই রোগীর আত্মীয় ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকের অনেক মোটরসাইকেল খোয়া গেছে। সদর হাসপাতাল এলাকাটি বর্তমানে মোটসাইকেল চোরদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রের অভিযোগ। এভাবে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটছেই।
অন্যদিকে, কয়েক মাসে নালিতাবাড়ী উপজেলার ৩ ভাড়াটে চালককে হত্যা করে ২টি মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। মধুটিলা ইকোপার্কের ভেতরে সংঘটিত অপর ঘটনায় চালককে হত্যা করলেও স্থানীয় দোকানীরা দেখে ফেলায় মোটরসাইকেলটি রক্ষা ও ছিনতাইকারীদের আটক করা সম্ভব হয়।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, যত মোটরসাইকেল চুরি বা ছিনতাই হয় তার সবগুলো থানায় রেকর্ড করা হয়না। বিশেষত: দীর্ঘদিন রেজিস্ট্রেশন বিহীনভাবে চালানো মোটরসাইকেল চুরি হলে মালিক ভয়েই থানায় যায় না। তেমনিভাবে অনেকে জেনে বুঝেই চোরাই মোটরসাইকেল ক্রয় করে ব্যবহার করেন। তাদের মোটরসাইকেল হারালে সেটা বেমালুম চেপে যান তারা। এসব কারনে পুলিশের কাছে সঠিক হিসাবও থাকে না। জনমনের ধারণা, চোরের নামোল্লেখ না করলে থানায় মামলা হয় না। যে কারনে কারও মোটরসাইকেল খোয়া গেলে শুধুমাত্র জিডি এন্ট্রি করে রাখে অনেকেই। সেক্ষেত্রে পুলিশও কোন পদক্ষেপ নিতে পারে না।
এ ব্যাপারে শেরপুরের সিনিয়র এএসপি (সার্কেল) সালাহ উদ্দিন শিকদার বলেন, মোটরসাইকেল চুরির ব্যাপারে সংবাদ পেয়েছি। চুরি নিয়ন্ত্রনের জন্য পুলিশের ৩টি টিম কাজ করছে। এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রনে এসেছে। তবে সকল চুরির ব্যাপারে মোটসাইকেলের মালিকরা পুলিশকে অবগত করেন না বলে তিনি জানান।
