শ্যামলবাংলা ডেস্ক : ‘মন আমার দেহঘড়ি সন্ধান করি’, ‘এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনি ঠিক রবে/ সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে’র মত অনেক জনপ্রিয় লোকগানের শিল্পী আবদুর রহমান বয়াতির দেহঘড়ি ফেলে প্রাণপাখি উড়াল দিয়েছে না ফেরার দেশে। (ইন্নালিল্লাহে…….রাজেউন)। ১৯ আগস্ট সোমবার সকাল সোয়া ৮টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
আবদুর রহমান বয়াতি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী ও ৩ ছেলেসহ অগণিত আত্মীয়-স্বজন, গুণ-গ্রাহী, ভক্ত-শ্রোতা ও শিষ্য রেখে গেছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অনেক দিন ধরে তিনি উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি ও ফুসফুসের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। ১৮ জুলাই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে লাইফ সাপোর্টের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। সেখানে তিনি আইসিইউ হেড অধ্যাপক শফিকুর রহমানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসারত অবস্থায় ছিলেন।
মাটি ও মানুষকে ভালবেসে দেশ মাতৃকার গভীর মমতায় দেশের আশাহত মানুষকে উপজীব্য করেই বেশির ভাগ গান বেঁধেছেন আবদুর রহমান বয়াতি। স্বকীয় গায়কী ঢংয়ের মাধ্যমে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও অগণিত শ্রোতাকে মুগ্ধ করেছেন গুণী ওই শিল্পী। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডব্লিউ জর্জ বুশ আমন্ত্রণে একবার হোয়াইট হাউসে আয়োজিত জাঁকালো এক অনুষ্ঠানেও গান গেয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছিলেন তিনি।
আবদুর রহমান বয়াতির মেজো ছেলে আলম রহমান বয়াতি জানান, বাবার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার জন্মভিটায় সমাহিত করা হবে। প্রয়াত ওই গুণী শিল্পীর অসংখ্য জনপ্রিয় লোকগান, বাউলগান পরিবেশনা ছাড়াও তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে সঙ্গীত জগতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন। গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আব্দুর রহমান বয়াতি ১৯৫৬ সালে সঙ্গীতকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। একক গানের বহু সংখ্যক অ্যালবামের পাশাপাশি তিনটি মিশ্র অ্যালবামেও গেয়েছেন তিনি। তার গানের গুরু ছিলেন কবি আলাউদ্দিন বয়াতি।
১৯৩৯ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকার সূত্রাপুর থানার দয়াগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন আবদুর রহমান বয়াতি। বাবা প্রয়াত তোতা মিয়া, মা মরিয়ম বেগম।
১৯৮২ সালে তিনি ‘আবদুর রহমান বয়াতি’ নামে বাউল দল গড়ে তোলেন। তিনি দোতরা, হারমনিয়াম, খঞ্জনি ও ভায়োলিন বাজাতেন চমৎকার। তিনি বাউল গান নিয়ে সমগ্র বাংলাদেশ চষে বেড়ানোর পাশাপাশি ভারত, নেপাল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, কানাডা, চীন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ৪২টি দেশ ভ্রমণ করেন। আবদুর রহমান বয়াতি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের বিশেষ গ্রেডের শিল্পী ছিলেন। ১৯৮৯ সালে হাফিজুদ্দিন পরিচালিত ‘অসতী’ নামে একটি ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন।
তিনি রাষ্ট্রীয় পদক, স্বদেশ ও সংস্কৃতি স্বর্ণ পদক, বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউ জার্সি, জাগরিনী শিল্পী গোষ্ঠী (যুক্তরাষ্ট্র), চ্যানেল আই সম্মাননাসহ ব্যক্তিজীবনে বিশিষ্ট গীতিকার, সুরকার, সংঙঈত পরিচালক ও গায়ক হিসাবে আব্দুর রহমান বয়াতি বহু সম্মাননা ও পদকে ভূষিত হয়েছেন।