জিয়াউর রহমান জিয়া, রাজীবপুর : ব্রহ্মপুত্রের ভয়াবহ ভাঙ্গনে একের পর এক করে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম, ঘরবাড়ি ফসলি জমি। গত ৭দিনে সম্পূর্নরূপে হারিয়ে গেছে বল্লভপাড়া, তেররশিপাড়া ও খাড়–ভাঁজ নামক তিনটি গ্রাম। আংশিক ভাবে হারিয়ে গেছে কারিগড়পাড়া, শংকর মাদবপুর, উত্তর কোদালকাটি নামের আরো তিনটি গ্রাম। এতে প্রায় ৪শ’ পরিবার ঘরবাড়ি সরিয়ে অন্যত্র বাসা বাঁধছে। কোদালকাটি বাজার থেকে বল্লভ পাড়া পর্যন্ত সড়কের বেশির ভাগ অংশই বিলীন হয়ে গেছে। গ্রামবাসিরা জানান, ঈদের আগের দিন থেকে ভাঙ্গান ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। যে হারে ভাঙ্গছে তাতে বাকী অংশ বিলীন হতে পারে যে কোনো মূহুর্তে। ব্রহ্মপুত্রের এ তান্ডবলীলার চিত্র পাওয়া গেছে রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একদিকে নদী ভাঙ্গছে আরেক দিকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে মানুষ। বল্লভপাড়া গ্রামের নয়ান (৪০) আলী বলেন, ‘আমার বাড়ির ভিটার কোনো চিহ্নই নাই এহন। এক ঘন্টার মধ্যে আমার বাড়িসহ আরো ১০টি বাড়ি ভাঙ্গছে। ঘরের খামখোট নিয়া বাজারের পূর্বপাশে মাইনসের জমিতে রাখছি। জমি আলাক কইছি এক বছর থাকা নাগবো।’ নয়ান আলীর মতো বল্লভপাড়া গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবারের মাঝে এখন হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে।
তেররশিপাড়া গ্রামের জমশের আলী (৩৮)। তার বাড়ির ভিটা এখন ব্রহ্মপুত্র নদ। ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে পাইকান টারি গ্রামের রাস্তায়। একই রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে বিধবা অমেলা বেগম (৬০)। তিনি বলেন, ‘মাইনসেক কইয়া ঘরডা ভাইঙ্গা আনছি। এহন ঘর খাড়া করমু হেই ট্যাহাও নাই। চেয়ারম্যান মেম্বাররাও আমগর দিকে দেহে না।’ তাদের মতো অসংখ্য পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এলাকার শিক্ষক আব্দুল করিম জানান, ভাঙ্গন কবলিত গ্রাম গুলোর মানুষ সবাই দিনমজুর পরিবার। তাদের মধ্যে এখন নগদ টাকা ও খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।
কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, গত এক সপ্তাহে তার এলাকার ৪শ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এতথ্যটি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। দ্রুত নদী ভাঙ্গা মানুষ গুলোর মাঝে সাহায্য দেওয়ারও আবেদন জানানো হয়েছে।