হাকিম বাবুল : ভুট্টা চাষ অর্থ ও পুষ্টি যোগাচ্ছে শেরপুর জেলার নকলার চরাঞ্চলের চাষীদের। কম খরচে অধিক লাভজনক ফসল হওয়ায় চরাঞ্চলের চাষীদের নিকট ভুট্টা চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। সেচের অভাবে আগে যেসব জমি পতিত থাকতো সেসব জমিতে ভুট্টার আবাদ নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। দিন দিন বাড়ছে ভুট্টাচাষের আবাদী জমির পরিমাণ। চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষ সম্প্রসারণ চরবাসীর দারিদ্র বিমোচন করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে বলে কৃষক ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন।
নকলা উপজেলার চর অষ্টাধর, টালকি, পাঠাকাঠা, বানেশ্বদী ও চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ কৃষক এখন আর্থিকভাবে লাভজনক, চাহিদা সম্পন্ন ও পুষ্টিমান সমৃদ্ধ ফসল হওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। ওইসব এলাকার কৃষকরা জানান, ধান চাষ করে উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভজনক না হওয়ায় প্রায় ৪/৫ বছর ধরে তারা ভুট্টার আবাদ করছেন। ভুট্টা চাষে সেচ এবং সার কম লাগে, উৎপাদন খরচও কম, কিন্তু লাভ অনেক বেশী। প্রতি একরে ভুট্টার ফলন পাওয়া যায় একশ’ মণ। বিক্রীরও কোন সমস্যাও নেই। কাঁচা অবস্থায়ই প্রতি মণ ভুট্টা সাড়ে পাঁচশ’-ছয়শ’ টাকা দরে বিক্রী হয়ে যায়।
কৃষককরা জানান, ভুট্টা গুড়া করে ছাতু, রুটি, পেয়াজু, বি¯ু‹ট, পপকর্ণ সহ বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরী করে নিজেরা খাওয়া ছাড়াও এগুলো এখন স্থানীয় বাজারে বিক্রী হয়। এসব খাবার খুবই পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ। ভুট্টা এখন মাছের খামার, গরুর খাবার হিসেবেও জনপ্রিয়। ভুট্টার মুছি, ছোলকা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। মোটকথা ভুট্টার কোন কিছুই ফেলনা নয়।
নকলা উপজেলার চর অষ্টধর ইউনিয়নের হুজুরীকান্দা গ্রামের কৃষক রুবেল মিয়া (৪৪) বলেন, আমি তিন বছর ধইরা ভুট্টার আবাদ করতাছি। ধানের চাইতে ভুট্টা লাভজনক। আলু করার পর ভুট্টা করি। এবার তিন একর জমিতে ভুট্টা করছি। একরে একশ মণ ফলন হইছে। একই গ্রামের আব্দুল হালিম (৩৪) ও রেজাউল করিম (৪২) জানান, আমাদের এই চরের বেশীরভাগ জমি সেচ সংকটের কারণে আবাদ করা সম্ভব হতোনা। কিন্তু ভুট্টা চাষে সেচ, সার কম লাগে। ফলনও ভাল, চাহিদাও বেশী, দামও ভাল। তাই দিন দিন পতিত জমিগুলোতেও ভুট্টার চাষ বাড়ছে। এখন চরাঞ্চলের প্রায় ৬০ ভাগ জমিতে ভুট্টার চাষ হচ্ছে। নারায়নখোলা এলাকার কৃষাণী তাসলিমা আক্তার বলেন, ভুট্টার কোনকিছুই ফেলনা নয়। আমরা সকালে ভুট্টার ছাতু খাই, মেশিনে ভুট্টা গুড়া করে রুটি, বিস্কুট, পিয়াজু বানিয়ে খাই। ভুট্টার ছোলকা রান্নার কাজে ব্যবহার করি, মুছি গরুরে খাওয়াই। স্থানীয় ভুট্টা ব্যবসায়ী পাইকার শরিকুল ইসলাম জানান, নকলার চরাঞ্চলের ভুট্টার মান ভাল হওয়ায় বাইরে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ময়মনসিংহ, ভালুকা, মুক্তাগাছা, শ্রীপুরসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন ফিড মিল, গবাদী পশু ও মাছের খাদ্য তৈরীর কারখানায় অন্যান্য এলাকার চাইতে এখানকার ভুট্টার চাহিদা খুব বেশী। এখানকার একেকজন পাইকার প্রতি সিজনে দেড়শ’ টন থেকে আড়াইশ’/তিনশ’ টন পর্যন্ত ভুট্টা বাইরে বিক্রী করে থাকেন।
নকলা উপজেলা কৃষি অফিসার আশরাফ উদ্দিন বলেন, সেচ কম এবং ফলন বেশী ও লাভজনক ফসল হওয়ায় নকলার চরাঞ্চলে ভুট্টার চাষ দিন দিন বাড়ছে। আগে কেবল চর অষ্টাধর ইউনিয়নেই ভুট্টার চাষ হতো। কিন্তু এখন তা পাশ্ববর্তী টালকি, পাঠাকাঠা, বানেশ্বদীঁ, চন্দ্রকোনা ইউনিয়নেও ছড়িয়েছে। গত বছর নকলা উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল। আর এবার আবাদ হয়েছে ৩২০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে কৃষকরা ভুট্টার ফলন পেয়েছেন গড়ে ৮ থেকে ১০ টন করে। চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষের সম্প্রসারণ চরবাসীর দারিদ্র বিমোচন করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভ’মিকা রাখবে বলে আশা করছি।
