রেদওয়ানুল হক আবীর : ‘আর যাব না দুবাই ঢাকা, ঘরে বসেই আনব টাকা’Ñ এই শ্লোগানে এখন উৎসাহিত শেরপুরের প্রত্যন্ত পল্লীর বেকার যুবক-যুবতী। প্রত্যন্ত এলাকায় গড়ে উঠা জামদানী পল্লী আলোর মুখ দেখায় অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন এ পেশায়। তাদের মধ্যে কামরুল হাসান এখন মডেল হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে এলাকায়। ঈদকে সামনে রেখে এখন ব্যস্ত শেরপুরের জামদানী পল্লী।
শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের হাইটাপাড়া গ্রামে ৭ বছর আগে গড়ে উঠে ‘সুমন জামদানী কুটির শিল্প।’ স্থানীয় উদ্যমী যুবক কামরুল হাসান নারায়নগঞ্জ ও সোনারগাও জামদানী পল্লীর কারখানায় কাজ শিখে নিজের বাড়িতে গড়ে তুলে ওই প্রতিষ্ঠানটি। ওইসব জামদানী ঘরে বর্তমানে ২ থেকে ৮টি করে তাঁত মেশিনে জামদানী তৈরী হচ্ছে। প্রথমে দু’জন কর্মচারী ও ৯ হাজার টাকা পুজি নিয়ে তিনি জামদানি শাড়ি উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক বেকার যুবক-যুবতী তাদের বেকারত্ব ঘুচিয়েছে। বর্তমানে তার ওই জামদানী কূটির শিল্প কারখানায় তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের জামদানী শাড়ী। ওইসব শাড়ী ঢাকার অভিজাত দোকানে বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করছে। সুমন কারখানায় উৎপাদিত শাড়ী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে গুণগত মান কোন অংশেই কম নয়। কারখানার একজন শ্রমিক গ্রামের নিজ বাড়ীতে থেকে মাসে ১২ হাজার টাকা আয় করছে এবং একজন সহযোগি পাচ্ছে ৪/৫ হাজার টাকা। এ কারখানার উৎপাদিত শাড়ীর সর্বনিু মূল্য ৪ হাজার টাকা। তবে অর্ডার পেলে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার শাড়ী তৈরি করেন। তার কারখানায় কাজ শিখে এখন হাইটাপাড়া গ্রামে আরো ৬টি বাড়ীতে কারখানা তৈরি হয়েছে। আর ওইসব কারখানায় আরো অনেক যুবক-যুবতীরা কাজ শিখছে এবং কাজ করছে। শেরপুরে জামদানী পল্লী গড়ে তোলার নায়ক কামরুল হাসান জানান, কারখানাটি সম্প্রসারণের জন্য তিনি শেরপুর কৃষি ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাংক তাকে ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এক পর্যায়ে তার এ কারখানাটি চালু রাখতে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সূদে ঋণ নিতে হয়। শেরপুর শহর থেকে তার গ্রামের বাড়ী যাওয়ার রাস্তার যোগাযোগ ভালো না এবং গ্রামে বিদ্যুতের কোন ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুত থাকলে কারখানার উৎপাদন দ্বিগুণ হতো। শত প্রতিকুলতার মধ্যেও মোটামুটি ভালই লাভ হচ্ছে। এই মাসেই কামরুল আরো ৪টি নতুন তাঁত বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে তাদের দু:খ একটাই গ্রামের ভালো রাস্তা না থাকায় শহর থেকে অনেক মানুষ ওই পল্লীতে গিয়ে শাড়ী কিনতে এবং অর্ডার দিতে ভোগান্তিতে পড়ে। গ্রামের তাঁত ঘরগুলোতে শেরপুর জেলা শহরের অনেক মানুষ অর্ডার দিয়ে শাড়ী তৈরী করে নেয়। এছাড়া তারা প্রতি সপ্তাহে শেরপুরসহ ঢাকার নারায়নগঞ্জে গিয়ে শাড়ী বিক্রি করে আসে। তবে পুঁজি অভাব এবং ভালো ও বিশ্বস্ত কোন বিক্রির স্থান না পাওয়ায় তাদের অনেক কষ্ট করে এগুতে হচ্ছে। সরকারী বা কোন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও তাদের ব্যপারে এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ করেন কামরুল হাসান। এছাড়া গ্রামে বিদ্যুৎ থাকালে দিনে এবং রাতে একযোগে কাজ করতে পারলে উৎপাদন যেমন বাড়তো তেমনি গরমের দিনে স্বস্থিতে কাজ করতে পারতো বলে শ্রমিকরা দাবি করেন।
