শ্যামলবাংলা ডেস্ক : সারা দেশে ১০টি শিক্ষা বোর্ডের ফল একযোগে প্রকাশিত হয়েছে ৩ আগস্ট শনিবার। ১০টি বোর্ডের গড় পাসের হার ৭৪.৩০ ভাগ। যা গতবছরের চেয়ে ৪.৩৭ ভাগ কম। এবার সব বোর্ড মিলে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৮ হাজার ১৯৭ জন। যা গতবছরের চেয়ে ২ হাজার ৯৫৬ জন কম। পাসের হার এবং জিপিএ-৫ এই দুই ক্ষেত্রেই ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ভাল করেছে। বিগত বছরগুলিতে ফলাফলের রেকর্ড গড়লেও এবার ছন্দপতন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায়। কমেছে পাসের হার ও জিপিএ-৫। প্রধানমন্ত্রী এই ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দফায় দফায় বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল, অবরোধ আর কর্মসূচীর নামে সহিংসতার খেসারত দিল দেশের শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার। হরতাল আর সহিংসতার কারণে কোনমতে পরীক্ষা দিতে পারলেও ১০ শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার প্রতিটি সূচকেই ফল হয়েছে খারাপ। প্রকাশিত ফলকে ‘খারাপ’ ফল উল্লেখ করে এই বিপর্যয়ের পেছনে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে দায়ী করলেন তিনি। এই ফলাফলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শনিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী। এবার ৮টি সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলে ১০ লাখ ২ হাজার ৪৯৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯১ জন। এবার শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮৪৯টি। গতবছর এ সংখ্যা ছিল ১০৩৬টি। শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৫টি। গতবছর ছিল ২৪টি। এবার ২ হাজার ২৮৮টি কেন্দ্রে ৭ হাজার ৬৫৭টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। ১ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় ৩রা জুন। ৮টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে ৮ লাখ ১৪ হাজার ৪৬৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৫ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৭ জন। পাসের হার ৭১.১৩ ভাগ। গতবছর ছিল ৭৬.৫০ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৬ হাজার ৭৩৬ জন। গতবছর ছিল ৫১ হাজার ৪৬৯ জন।
উল্লেখ্য, মাদরাসা বোর্ড পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে। এ বোর্ডে পাসের হার ৯১.৪৬ ভাগ। গতবছর ছিল ৯১.৭৭ ভাগ। এবছর ৮৭ হাজার ৪৭৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮০ হাজার ২ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৯ জন। গতবছর এ সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৭৩ জন।
কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৮৫.০৩ ভাগ। গতবছর ছিল ৮৪.৩২ ভাগ। এবার ৯৫ হাজার ৯৮৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮১ হাজার ৬১৭ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৬৫৮ জন। গতবছর ছিল ২ হাজার ২১১ জন। বিদেশের ৫টি কেন্দ্রে ১৬৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৪৮ জন। পাসের হার ৯০.২৪ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২ জন। পাসের হার ও জিপিএ-৫ দু’টোতেই মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা এগিয়ে রয়েছে। মোট ৫ লাখ ৩০ হাজার ৬ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৯ জন। পাসের হার ৭৪.৩২ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩১ হাজার ৬৩৮ জন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫.৯৭ ভাগ ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে। ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৯০ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৯৯২ জন। পাসের হার ৭০.২৯ ভাগ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৬ হাজার ৫৫৯ জন। অংশগ্রহণকারী ছাত্রীদের মধ্যে ৫.৬২ ভাগ ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে পাসের হারে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে সিলেট বোর্ড। সিলেট বোর্ডে পাসের ৭৯.১৩ ভাগ। এ বোর্ডে ৪২ হাজার ৯৮০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৩৪ হাজার ৯ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৫৩৫ জন। দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ৭১.৯৪ ভাগ। এ বোর্ডে ৪৪ হাজার ২৪৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৩২ হাজার ৮১৭ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৪৩৩ জন। আর সবচেয়ে পিছিয়ে চট্টগ্রাম বোর্ড। চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৬১.২২ ভাগ। এ বোর্ডে ৬৩ হাজার ৬৮৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৩৮ হাজার ৯৮৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৭৭২ জন। ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৭৪.০৪ ভাগ। এ বোর্ডে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫ জন। ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২ হাজার ৩৪৭ জন। রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৭৭.৬৯ ভাগ। এ বোর্ডে ১ লাখ ৫ হাজার ৭২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৮১ হাজার ৬৩১ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৬৬৬ জন। কুমিল্লা বোর্ডে পাসের ৬১.২৯ ভাগ। এ বোর্ডে ৮৮ হাজার ৬৯৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেন ৫৪ হাজার ৩৫৯ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৩৯০ জন। যশোর বোর্ডে পাসের হার ৬৭.৪৯ ভাগ। এ বোর্ডে ১ লাখ ৯৯৯৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৭৪ হাজার ২৪০ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৭৪০ জন। বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৭১.৬৯ ভাগ। এ বোর্ডে ৫২ হাজার ১৭৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৩৭ হাজার ৪০৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৮৫৩ জন। পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে মাদরাসা বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৯১.৪৬ ভাগ। এ বছর ৮৭ হাজার ৪৭৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮০ হাজার ২ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬০০৯ জন। কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৮৫.০৩ ভাগ। এবার ৯৫ হাজার ৯৮৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮১ হাজার ৬১৭ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৬৫৮ জন।
ডিপ্লোমা ইন বিজনেস শাখায় পাসের হার ৮৭ ভাগ। এ শাখায় ৪ হাজার ৫৬৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩ হাজার ৯৭৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৯৪ জন।
অন্যদিকে, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক অস্থিরতাই দায়ী। এ সময় শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মাউশি’র মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন এবং শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটি পরীক্ষা বাদে সব পরীক্ষার সময় কোন না কোন স্থানে হরতাল ছিল। এর মধ্যে জাতীয়ভাবে হরতাল ছিল নয় দিন। অন্যান্য দিনেও স্থানীয়ভাবে হরতাল ছিল। এর কারণে চট্টগ্রাম বোর্ডের ইংরেজি পরীক্ষার তারিখ চার বার পরিবর্তনসহ ৩২টি বিষয়ের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে পরীক্ষার্থীরা মানসিক অশান্তিতে ভোগায় তাদের ফলাফল খারাপ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
