বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় অর্জন গণতন্ত্র, বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। আগে অনেক খবরই গুম হয়ে যেতো পত্রিকা অফিসে। শাসক দলের মর্জির উপর নির্ভর করতো কোন খবর যাবে আর কোন খবর যাবে না। এখন এটা সম্ভব হয় না। বলতে গেলে সেদিন আর নেই্। সেন্সরশীপ বিদায় নিয়েছে। প্রেস নোটও নয়। মিডিয়া এখন অবাধ ও স্বাধীন। কিন্তু এ জন্য মূল্য দিতে হয়েছে অনেক। সাংবাদিকরা সামরিক শাসন, সেন্সরশীপের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ছিল। রাজনীতিকরাও সমর্থন যুগিয়েছেন। জনগণ সবসময় আছেন মিডিয়ার পক্ষে। আর এ কারণেই মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশে আসে ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ পরিবেশনের সুযোগ। উঠে যায় ডিক্লারেশন, কঠোর বিধি নিষেধ। দেশে চালু হয় মুক্ত বাজার অর্থনীতি। ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট কিংবা অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের আগ্রহ বেড়ে যায় অনেকের।
১৯৯৮ সালে এসবির রিপোর্ট অনুযায়ী সারাদেশে প্রকাশিত সংবাদ পত্রের সংখ্যা ১৪৯৯ টি। এর মধ্যে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ২৫৪ টি। রাজধানী ঢাকা থেকে বের হয় শতাধিক। বর্তমানে পত্রিকার সংখ্যা কত এটা জানা না থাকলেও, এটুকু জানা যায় অসংখ্য পত্রিকার সঙ্গে এখন ২৪ টিভি চ্যানেল এবং অসংখ্য অনলাইন পত্রিকা সংবাদ, ফিচার, মতামত দাপটের সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে। স্বাধীনতা লাভের প্রথম বছরে দেশে যেখানে পত্রিকার সংখ্যা ছিল ৩০০ টি, সেখানে অসংখ্য মিডিয়ার আত্মপ্রকাশকে গণতন্ত্র, বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাই বলতে হয়। অবশ্য বিপুল সংখ্যক মিডিয়ার মধ্যে কত সংখ্যক নিয়মিত পাঠকের কাছে পৌঁছে আর কত সংখ্যক পৌঁছেনা সে প্রশ্ন ভিন্ন।
মিডিয়ার সংখ্যা বাড়া বা কমার ব্যাপারটি বিশ্লেষন করা যায় দু’ভাগে। যে উৎসাহ নিয়ে মিডিয়ার প্রকাশ সেই উদ্দিপনা খুব দ্রুত হ্রাস পায় , যখন পুঁজিতে টান পড়ে। মিডিয়াতো আর বাজারের মাছ মাস নয়। চাহিদা আছে। বিক্রি হয়ে যাবে। দেশের খ্যাতনামা একজন সম্পাদক বলেছিলেন, প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক অথবা অনলাইন যাই করতে চাই, এজন্য প্রয়োজন পুঁজি, ব্যবস্থাপনা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষ সাংবাদিক। আনাড়ি হলে এ জগতে সম্পাদক ও সাংবাদিকতা পরিচয় দিয়ে কিছুদিন বাঁচা যায়। দীর্ঘ সময় বাঁচা যায় না।
দ্বিতীয় বিষয়টি হলো সত্যিকার পরিসংখ্যান পাওয়ার কিছুটা সমস্যা। প্রতিবছরই নতুন নতুন মিডিয়ার জন্ম হচ্ছে। কিন্তু নিয়মিত প্রকাশনার গতি ধরে রাখা সম্ভব হয় না।
কেন এত মিডিয়া? এ প্রশ্ন অনেকের। উত্তর খুব সোজা। অনেক মিডিয়ার প্রকাশ এক অর্থে ভাল। গণতান্ত্রিক সমাজে মত প্রকাশের অধিকার সবারই আছে। তাই এত সংখ্যক মিডিয়ার আত্ম প্রকাশ দোষের কোথায়। কিন্তু দোষ ভিন্ন জায়গায়। এ ভূবনে বিপুল সংখ্যক মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে। কিন্তু প্রকাশনার মান খুবই দুর্বল। যেন রুচি বিবর্জিত সেবায় ভরা। যেন এক অসুস্থ সমাজের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় এসব মিডিয়ায়। প্রশ্ন রুগ্ন কোনটি? সমাজ না মিডিয়া। কেউ বলবেন সমাজ। অনেকে আবার যুক্তি দেখান মিডিয়াতো সমাজেরই সৃষ্টি। এ সমাজইতো ভাল এবং মন্দের সৃষ্টি করে। এ সমাজই জন্ম দেয় গুণী জন এবং মন্দ জনের। তাই মিডিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারটা সম্পূর্ণ হতাশা ব্যঞ্জক নয়। ইতিবাচক দিকও আছে। এখনও গণতান্ত্রিক চিন্তা চেতনার মানুষের বড় ভরসাস্থল মিডিয়া। এখনও মিডিয়ার পাঠক, দর্শক অনেক সমস্যার সমাধান খোঁজে ফেরে টিভি চ্যানেল, অনলাইন কিংবা পত্রিকায় পাতায়। মিডিয়ার কাছে মানুষের প্রত্যাশা থাকবেই।
আগ্রহব্যাঞ্জক আরও একটি দিক হলো মিডিয়ায় অনেক নতুন মুখ প্রতিভাময় উদ্দীপ্ত তারুণ্য বিষয় বস্তুতে বৈচত্র্যময় পরিবেশনা , নতুন পাঠক, দর্শক সমাজ সৃষ্টি করেছে। বলতে দ্বিধা নেই ঢাকার বাইরের খবরে আজকাল বেশ বৈচিত্র্য এসেছে। মফস্বল সাংবাদিকরা বিভিন্ন বিষয়ে যেমন মানবিকতায়, শিক্ষা, উন্নয়ন, পরিবেশ, কৃষি, নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানার সুযোগ পান। এটার পরোক্ষ অবদান অবশ্য পিআইবির। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ প্রেস ইনিষ্টিউট মফস্বলের সাংবাদিকদের প্রশিক্ষিত করতে জেলায় জেলায় আয়োজন করছে প্রশিক্ষণের। এরপরও সব সাংবাদিকের মান এক রকম তা কিন্তু নয়। অনেক মিডিয়ার ভিড়ে অনেক তরুণ মুখ মিডিয়াতে এসেছেন, তাদের কাজে ব্যাপক উৎসাহ থাকলেও লেখার হাত কাঁচা। সাংবাদিকতা অত্যন্ত সৃজনশীল কাজ। তাদের অনভিজ্ঞতা সমাজে এবং নিজ মিডিয়াকেও ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। তাই মিডিয়ার প্রকাশক ও সম্পাদকের গুরু দায়িত্ব হলো কাকে নিয়োগ দিচ্ছেন, তা যাচাই বাছাই করা। আর নিয়োগ দিয়েই দায়িত্ব শেষ না করে সাংবাদিক তৈরি করার চেষ্টা করা।
তবে নানা আলোচনা, সমালোচনার মাঝেও আমরা আশার আলো দেখতে পাই, খবর শুধু ঢাকাতেই সৃষ্টি হয় না। খবর সৃষ্টি হয় দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তেও। আমরা এখন স্বাধীন রাষ্ট্র। গণতান্ত্রিক পরিবেশে সকল মানুষের অংশগ্রহণে গড়ে উঠবে এক সুন্দর সমাজ। এ সমাজ বিনির্মাণে মুখ্য ভূমিকা রাখবে মিডিয়া। তাই দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে সময়ের সাহসী ও পরিচ্ছন্ন সাংবাদিকতার প্রতীক রফিকুল ইসলাম আধারের নেতৃত্বে একঝাক চৌকষ কলমসৈনিক নিয়ে শ্যামলবাংলা২৪ডটকম (Shamolbangla24.com) নামে আরও একটি অনলাইন মিডিয়ার জন্ম আমাদের আশাবাদী করেছে। বার্তা পরিবেশকদের বৈচিত্র্যময় পরিবেশনে এ অনলাইনটি দ্রুত পাঠকপ্রিয়তা পাবে, টিকে থাকবে যুগ যুগ ধরে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।

লেখক : সাংবাদিক, সংগঠক ও মানবাধিকার কর্মী।
