শ্যামলবাংলা ডেস্ক : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানী দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাসের মাথায় মঙ্গলবার সকালে শেষ হয়েছে। শেষ দিন শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বেঞ্চ আপিল শুনানি শেষে বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। এখন যেকোনো দিন রায় দেয়া হতে পারে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি না হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় না। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরও তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) দেয়া হয়নি। এর কোন কারণও ট্রাইব্যুনাল ব্যাখ্যা করেনি। এসব বিবেচনায় রাষ্ট্রপক্ষের আনা আপিল গৃহীত হওয়া উচিত বলে তিনি দাবি করেন।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। রায়ে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ৬টি অভিযোগের মধ্যে দুটিতে তাকে যাবজ্জীবন এবং ৩টিতে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্রমানিত না হওয়ায় অন্য একটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়। ওই রায়ের পর কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির (ফাঁসি) দাবিতে শাহবাগে শুরু হয় গণআন্দোলন। এ পটভূমিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি সংসদে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইন সংশোধন করা হয়। সংশোধিত আইনে রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আপিলের সমান সুযোগ এবং রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করার বিধান করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধে কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করে দেয়া রায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ না দেয়ায় এবং একটি অভিযোগ থেকে খালাস দেয়ায় সাজা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ রায়ের বিরুদ্ধে ৩ মার্চ আপিল করেন প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। পরদিন অভিযোগ থেকে খালাসের আবেদন জানিয়ে আপিল করেন কাদের মোল্লা। ১ এপ্রিল এই মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। উভয়পক্ষের আইনজীবীরা ৩৯ দিনের মতো এ মামলায় নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। শুনানির একপর্যায়ে কাদের মোল্লার আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক সংশোধিত আইন তার মক্কেলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই বিচারে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠে।
আপিলে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষকে সমান সুযোগ দিয়ে আনা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন-১৯৭৩ এর সংশোধনী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি না এবং কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল’র (প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন) আওতায় এ মামলা পড়বে কি না- এ বিষয়ে মতামত দিতে ২০ জুন আদালত ৭ জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেয়। এদের মধ্যে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের বক্তব্যের মাধ্যমে অ্যামিকাস কিউরিদের বক্তব্য নেয়া শুরু হয় ২১ জুন। এরপর ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, টি এইচ খান, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি এবং সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফের বক্তব্যের মাধ্যমে সোমবার অ্যামিকাস কিউরিদের বক্তব্য শেষ হয়।
