ডিজিটাল যুগের ব্যাপ্তি, উদ্দামতা আর আলিঙ্গণে আমাদের প্রিন্ট মিডিয়া জগতকে ছাপিয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়া শুরু থেকেই তোলপাড় সৃষ্টি করে প্রায় সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে। এরপরও সচেতন মানুষ ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ডিজিটালের দারুণ উৎকর্ষতায় মাত্র কয়েক বছর আগে যে অনলাইন মিডিয়ার সূচনা, সেই অনলাইন মিডিয়াই এখন আধুনিক সংবাদ পাঠক বিশেষত: নতুন প্রজন্মের অন্যতম প্রধান গণমাধ্যম। ‘অনলাইন নিউজ পোর্টাল’ এমন একটি গণমাধ্যম যা কম্পিউটার-ইন্টারনেটের সুবাদে এখন কেবল শহরেই নয়, অনেকটা গ্রামবাংলার ঘরে বসেও ভিজিট করা সম্ভব। এছাড়া আমাদের ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রসহ প্রায় সকল সরকারী-বেসরকারী, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে এবং স্কুল-কলেজে থাকা কম্পিউটার-ইন্টারনেট সংযোগে ভিজিট করেই দেখা যায় দেশ বিদেশের নানান খবর। হালে অনলাইন জগতে দিন দিন যুগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। বাড়ছে এর পরিধি ও বিস্তৃতি। এটাও এক বিস্ময়। বিস্ময়কর তার অধ্যায় এবং মহা বিস্ময়কর তার জগত।

পেশাগত ব্যস্ততার পরও মফস্বলের সাহিত্য-সাংবাদিকতা ও সম্পাদনার সাথে টানা প্রায় ২৬ বছর ধরে জড়িত থাকা সম্ভব হচ্ছে যে মজ্জাগত নেশার কারণে, সেই নেশায় আকণ্ঠ চিত্তের সুপ্ত আকাংখা ছিল নিজের সম্পাদনায়-প্রকাশনায় অন্ততঃ একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করার। এক্ষেত্রে আরও দু’চার জনের মত সময়ের সাহসী সাংবাদিক বন্ধুবর হাকিম বাবুলের তাগিদ ছিল পুন:পুন:। কিন্তু নানান ঝুট্-ঝামেলা ও ব্যস্ততাসহ অনুকূল পরিবেশের অভাবে তা আর হয়ে উঠেনি। ফলে কোরক মেলেনি সেই সুপ্ত আকাংখার। ফুটেনি সেই অনিন্দ কুসুম। সংগত কারণে ছড়ানোর চেষ্টা করতে পারেনি তার সুঘ্রাণ। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, যা নিয়ে কেবল স্বপ্ন নয়, ভাবিনিই কখনও সেই অনলাইন মিডিয়া অকস্মাৎ ঢুকে পড়ে চিন্তার মাথায় এবং তা থেকেই যেন হুট করেই এই শ্যামলবাংলা২৪ডটকম (www.shamolbangla24.com) প্রকাশের উদ্যোগ-প্রয়াস। এক্ষেত্রে আমাকে সর্বাগ্রে যারা উৎসাহ-উদ্দীপনার আদলে অনেকটা জোরকরে জোয়াল কাধে দেওয়ার মত দায়িত্বে আবদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে বন্ধুপ্রতীম অগ্রজ শাহ আলম বাবুল (সাংবাদিক-লেখক), বন্ধুপ্রতীম অনুজ মুহাম্মদ জোবায়ের রহমান (সাংবাদিক) ও আইটি জগতের অন্যতম কারিগর অগ্রজ মোঃ আকরাম হোসেনসহ অনুজ সাংবাদিক ফারহানা পারভীন মুন্নী, আলমগীর কিবরিয়া কামরুল, রেদুয়ানুল হক আবীর ও আমার প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেটর স্নেহের জুবাইদুল ইসলামকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয়।
বলা বাহুল্য, ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হওয়া হাল নাগাদ পর্যন্ত আমাদের প্রিন্ট মিডিয়ার সংখ্যা যেখানে সব মিলে প্রায় ৬শ, শুরু থেকে একযুগ সময় গড়িয়ে পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে থাকাসহ অনুমোদিত ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংখ্যা যেখানে প্রায় ৩০টি- সেখানে অনলাইন মিডিয়া (নিউজ পোর্টাল) এর সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক এজন্যই যে, অধিকাংশ জাতীয় পত্রিকারই এখন অনলাইন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। সে যাই হোক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া জগতে যেমন ‘নিরপেক্ষতা ও বস্ত্তনিষ্ঠতা’ খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। ঠিক তেমনি অনলাইন জগতও তা থেকে ব্যতিক্রম নয়। ‘অপসাংবাদিকতা’ বা ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ যেমন ওই জগতগুলোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বেধেছে, ঠিক তেমনি সাহসী, নিরপেক্ষ ও বস্ত্তনিষ্ঠ সাংবাদিকতা বলতে যা বুঝায়- তার কিছুটা হলেও ওই জগতগুলোতে রয়েছে, যারা সংখ্যাগত হিসেবে সংখ্যালঘু। তবে একথা সত্য যে, নির্ভীক-নিরপেক্ষ গণমাধ্যম ও তার সাংবাদিকের তুলনাগত সংখ্যা কম হলেও তারা তুলনামূলকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের চেয়ে অবশ্যই সাহসী। ক্ষুরধার তাদের লেখনী। তাদের পক্ষেও পাঠক সমাজসহ সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণী-গোষ্ঠীর শক্ত অবস্থান রয়েছে। এখানেই গণমাধ্যমগুলোর পার্থক্য নিহিত থাকে। তবে এক্ষেত্রে শ্যামলবাংলার বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট এজন্য যে, শ্যামলবাংলাও অনলাইন জগতে ‘আপেক্ষিক নিরপেক্ষতা’ নিয়ে যাত্রা শুরু করছে না। শ্যামলবাংলা গণমাধ্যম জগতের সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সারিতেই থাকতে চায় এবং থাকবে- যেন যুদ্ধে যুদ্ধে একদিন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীই সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। শ্যামলবাংলা সর্বদা এগিয়ে চলবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে। চিরায়ত বাংলার রূপ-বৈচিত্র, মমত্ববোধ ও দেশাত্ববোধে জাগ্রত শ্যামলবাংলা কথা বলবে ‘মা, মাটি ও মানুষ’ এর পক্ষে। এই স্বার্থ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমাদের চিন্তা-চেতনা তথা দায়িত্ববোধে কাজ করবে দায়িত্বশীলতাও। সুতরাং আমাদের সংকল্পের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট হবে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। কেবল ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে নয়, একটি রুচিসম্মত আধুনিক জাতীয় নিউজপোর্টাল হিসেবে শ্যামলবাংলাকে প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য। আর এ লক্ষ্য অর্জনে আমাদের এগিয়ে চলা মোটেই যেমন সহজ কোন কাজ নয়, ঠিক তেমনি চলার পথও নয় মসৃণ-কুসুমাস্তীর্ণ। এজন্য যেমন প্রয়োজন নতুন প্রজন্মের একঝাক চৌকষ সংবাদকর্মী ও লেখকের লেখা, ঠিক তেমনি প্রয়োজন প্রবীন-নবীন সাংবাদিক, বিজ্ঞাপনদাতা এবং পাঠক মহলসহ সচেতন ও দায়িত্বশীল মহলের সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা ও পরামর্শের। আর ওইসব মহলের সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা নিয়েই শ্যামলবাংলা দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে- যাত্রাকালীন এই প্রত্যাশা আমাদের। ধন্যবাদ সকলকে।

রফিকুল ইসলাম আধার, সম্পাদক-প্রকাশক
শ্যামলবাংলা২৪ডটকম (www.shamolbangla24.com)
