শ্যামলবাংলা ডেস্ক: নারী পেশকারের দায়ের করা যৌতুক সংক্রান্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের এক আলোচিত মামলায় শেরপুরে কলেজ শিক্ষক সাবেক স্বামীকে তৃতীয় দফায় ফের হাজতে যেতে হয়েছে। ১৬ জুলাই মঙ্গলবার শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ রবিউল হাসান অভিযুক্ত কলেজশিক্ষক এসএম আতিকুর রহমান আলামিনের জামিন বাতিল করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। আলামিনের আইনজীবী এড. রোকনুজ্জামান রোকন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলা সংক্রান্তের বিষয়টি বিভিন্ন বিভাগে লিখিতভাবে জানানোর অভিযোগ উঠায় আলামিনকে হাজতে দেওয়া হয়েছে। এদিকে আলামিনকে তৃতীয় দফায় হাজতে পাঠানোর ঘটনায় আদালতপাড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর তা আদালতপাড়ার গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে শহরময়। আস্তে আস্তে তা পরিণত হয় ‘টক অব দি টাউন’ এ। আলামিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সে নাকি মামলা সংক্রান্তের বিষয়টি বিভিন্ন বিভাগে লিখিতভাবে জানিয়েছে।

জানা যায়, শেরপুর শহরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে ও মেধাবী শিক্ষার্থী এস.এম আতিকুর রহমান আলামিনের সাথে সম্পর্কের সূত্রে ২০০২ সনের ১ জুলাই বিয়ে হয় স্থানীয় অপর এক ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে তৎকালীন ইডেন কলেজ ছাত্রী সাময়িতা তাসমিন লিনিয়ার। শহরে তারা বেশ ‘আলোচিত জুটি’ হিসেবেই পরিচিত ছিল। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাদের ঘরে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক পুত্র সন্তান নিউটন। কিন্তু লিনিয়ার নানা অঘটনের কারণে দাম্পত্য জীবনে সুখ সইছিল না স্বামী আলামিনের। এক পর্যায়ে নিজের কিছু আলোচিত ঘটনা ঢাকতে লিনিয়া স্বামী আলামিনের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারপিটের অভিযোগে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আলামিন দুই দফায় প্রায় সাড়ে সাত মাস হাজতবাসের পর জামিনে বেরিয়ে এসে ২০১০ সালের ৩১ মে লাজ-লজ্জা আর পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থেই তালাক দিয়ে দেন লিনিয়াকে। ওই তালাকের পূর্বেই শেরপুরে জেলা জজের অধীনে জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেসীতে পেশকার পদে চাকরি হয়ে যায় লিনিয়ার। এরপর থেকেই জজ আদালতের তৎকালীন এক কর্তার সাথে পারিবারিক সম্পর্কের সুবাদে তার বিশেষ দাপট বেড়ে যায় আদালত অঙ্গণে। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ৬ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও নিস্পত্তি হয়নি সেই মামলাটি। আজও তা বিচারাধীন থাকায় মামলার পর থেকেই মাসের পর মাস আদালতে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন কলেজ শিক্ষক সাবেক স্বামী এসএম আতিকুর রহমান আলামিন। অন্যদিকে চাকরির সুবাদে একই আদালতের কম্পাউন্ডে অবস্থানের পরও মাসের পর মাস বছরের পর বছর স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন না লিনিয়া কিংবা রাষ্ট্রপক্ষ খোজে পাচ্ছেন না তাকে।
এদিকে, কয়েকদিন যাবত আদালত পাড়ার মুখে মুখে ছড়িযে প্রচারিত লিনিয়ার ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয় দিয়ে আমেরিকা প্রবাসী এক যুবককে অভিনব প্রতারণায় বিয়ে এবং প্রকৃত তথ্য ফাস হয়ে যাওয়ায় ১ সপ্তাহের মাথায় প্রতারণার সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাসহ ও অনলাইন গণমাধ্যমে। আর ওই ঘটনায় নিজেকে জড়ানোর কারণে ২৬ এপ্রিল থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন লিনিয়া। কেবল তাই নয়, এখনও অনুপস্থিতির কারণে তাকে করা শোকজের জবাবও দেননি তিনি। ফলে ফিরে এসেও এখন পর্যন্ত তার কর্মস্থলে যোগদান সম্ভব হয়নি। দায়িত্বশীল সূত্রমতে, বিষয়টি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ সেলিম মিয়ার তরফ থেকে জেলা ও দায়রা জজ মোঃ রবিউল হাসানকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু এখনও তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তির ব্যবস্থা হয়নি। অন্যদিকে তার দায়েরী মামলায় তৃতীয় দফায় সাবেক স্বামী কলেজশিক্ষক আলামিনকে ফের হাজতে যেতে হওয়ায় এখন তা নিয়ে শহরে ব্যাপক তোলপাড় চলছে।
